Wednesday, 18 May 2016

প্রাত্যহিক প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন প্রহসন - প্রতিকার প্রক্রিয়া

“বাংলা সাহিত্যের এক সমৃদ্ধ শাখা হল প্রবাদ-প্রবচন। প্রবাদ-প্রবচন হল মানুষের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান বা নানা কাহিনীকে কেন্দ্র করে প্রচলিত অর্থবোধক উক্তি যা হতে পারে উপদেশমূলক, ইঙ্গিতপূর্ণ কিংবা ব্যাঙ্গাত্মক। মূলতঃ অল্প কথায় বিশেষ অর্থ প্রকাশ করাই হল প্রবাদ-প্রবচনের কাজ”। কথাগুলি বেশ চমৎকার হলেও কিছু কিছু প্রবাদ প্রবচন যুগের সাথে সাথে বেশ বিতর্কিতও হয়ে পড়েছে।



যেমন প্রথমেই ধরা যাক “নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল” – অর্থাৎ কিছু না থাকার চেয়ে সামান্য কিছু একটা থাকা ভাল। অতি উত্তম কথা। কিন্তু কাউকে এই কথা বললে সে হয়ত আপনাকে অন্য কথা বলবে, “দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল” – অর্থাৎ সামান্য কিছু থাকার চেয়ে কিছু না থাকা অনেক ভাল। ফান্দে পরবেন আপনি।



“কানা ছেলের নাম পদ্ম লোচন” – কে যে এই প্রবাদ লিখছে! আমরা আবার তা নিত্যদিন ব্যাবহারও করি! নামের সাথে দেহের প্রতিবন্ধিকতা কিংবা দেহের সৌন্দর্যের কোন মিল আছে? ছেলেটা কানা, কাল, যাই হোক তার নাম পদ্ম লোচন কিংবা শাহারুখ খান হতেই পারে! তাছাড়া পদ্মলোচন একটা নাম হল? আমার নাম পদ্মলোচন রাখলেত মনে হয় আমি যে নাম রাখছে তারে লাঠি লইয়া দৌড়াইতাম।



“আংগুল ফুলে কলাগাছ”। সাধারনত নব ধনীদের উদ্দ্যেশে ব্যাবহার করা হয়। সমালোচকরা কিংবা নিন্দুকেরা এই ধরনের উক্তি করে থাকেন। আমি বুঝি না কেমনে এই উক্তি খাটে! আংগুল ফুলে কলাগাছত দুরে থাক কলার মত মোটাও হয় তাইলে বুঝা যায় কি ব্যাথা। আর কলাগাছ হলেও ... আর কইলাম না।



আরও আছে – “অনুরোধে ঢেকি গেলা” – কোন গাধাও এই শতাব্দিতে ঢেকি গিলবে না। অবশ্য ঢেকি যদি কেউ না দেখে মনে করে থাকে যে এটা আমের আটির মত ছোট জিনিস। আর একটা “ইজ্জত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে”। ইজ্জত কি কাপড়? আর মরলেত সবই শেষ। স্বভাবের প্রশ্ন আসে কোথেকে? “নেই কাজত তো খই ভাজ”। যারা খই ভাজার মত জটিল কাজ দেখেছেন তারা জানেন খৈ ভাজা কতটা কঠিন। একে কোন পন্ডিত সহজ মনে করেন। এটা যদি বলত নেই কাজত খুদ ভাজ তাইলেও বুঝতাম।



খাল কেটে কুমির আনা – অর্থাৎ নিজের বিপদ নিজে ঢেকে আনা। জিয়ার একটি মাত্র ভাল কাজের মধ্যে এটি। প্রতিপক্ষ এই প্রবাদ ব্যাবহার করে তাঁকে পঁচিয়েছে। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষ জানেন কুমির খালে থাকে না বা থাকতে পারে না। গভীর সুন্দর বনেই এর সংখ্যা আশংকা জনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাইলে এই প্রবাদ খান অপ্রচল। তাছাড়া যদি কুমির আসেও তাতে বিপদের চেয়ে আপদই বলা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে একটা কুমিরার দাম শুনলে মাথা খারাপ হইয়ে যায়। তাছাড়া কুমিরের লেজের মাংস দিয়ে তৈরী খাবার খেতে আমার অন্তত ১ সপ্তাহ কাজ করা লাগবে।







ইংরাজিতে এই সমস্যা আছে। “slow but steady win the race”. প্রমান হিসাবে খরগোস আর কচ্ছপের কাহিনি তুলে ধরা হয়। কবে কোনদিন এক কচ্ছপ এক খরগোসকে দৌড়ে হারিয়েছিল – সেই থেকে এটা উদাহরন হয়ে গেল। কিন্তু এর পর কত খরগোস যে কত কচ্ছপরে দৌড়ে হারিয়াছে হেইডা কেউ কয় না। কারেক্সনটা হবে – “fast and steady win the race”. আরও একটা আছে – “ants in your pants”. আমি ভেবেছিলাম অস্বস্তিকর। কিন্তু জেনে দেখলাম তার উল্টা। এর মানে নাকি এক্সাইটমেন্ট। কেমনে সম্ভব? পিপড়া পেন্টের মধ্যে ঢুইক্যা কি শুড়শুড়ি দিব না কামড় দিব?



এইবারে কিছু এডিসন



• ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় – মামা যদি আমলা হয়।

• কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা – বেলের কাঁটার খোচা যায় না ভোলা।

• কৈয়ের তেলে ভাজব কৈ – আমার এত বুদ্ধি কৈ

• কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা - কাতলা যদি হয় মাথা ফোলা





এইসব প্রবাদকে এক কথায়ও প্রকাশ করা যায়। যেমন –



• পরের ধনে পোদ্দারী, মিয়ার বড় সর্দারী - বাংলাদেশ সরকার

• চোরের মার বড় গলা – খালেদা জিয়া

• চোরের উপর বাটপারি – খাড়া চুইল্লা বাবর

• ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি – র‍্যাব

• জলে কুমির ডাঙায় বাঘ – বিএনপি ও আওয়ামিলিগ

• টাকায় কিনা হয় – বাংলাদেশের আইন ব্যাবস্থা



আমার প্রিয় প্রবাদ প্রবচন "পুকুর চুরি"। ইংরেজ আমলে এক ডিসি বৃটিশ সরকারের কাছে নল কুপের জন্য অর্থ চাহিয়া পত্র দিয়েছে। বৃটিশ সরকার পত্র পাওয়া মাত্র অনুদান বাবদ কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয়। ডিসি সেই টাকা মেরে দিয়ে পরের বছর আবার পত্র দেয়। "এলাকাবাসি বিশুদ্ধ পানি খেয়ে সরকারের ধন্য ধন্য করছে। এতে এলাকায় পানিয় জলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। নলকুপে আর হবে না, এইবার আসল কুয়া খোড়তে হবে। অনুদান প্রয়োজন"। বৃটিশ সরকার এই বারও বেশ বড় অংকের অনুদান দেয়। সেই টাকাও সে নিজের পকেটে ডুকায়। পরের বছর আবার চিঠি লিখে। " এইবার কেবল এলাকাবাসি নয় অত্র অঞ্চলের সবাই তার এলাকা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে আসে আর সরকারের সাফল্যের গুনগান গায়। তাই এবার কুয়াতে হবে না - পুকুর কাটাতে হবে। অনুদান প্রয়োজন"। চাহিদার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সরকার বেশ বড় অংকের টাকা অনুদান পাঠায়। এবারও সে টাকা আত্নসাদ করে। পরের বছর ডিসি ট্রান্সফার হয়ে যায়। নতুন ডিসি এসে কাগজ পত্র দেখে আবাক। সরকারকে এই চুরির ঘঠনা জানায়। ঘঠনা তদন্ত করে সরকার একে পুকুর চুরি - অর্থাৎ বড় আকারের চুরি বলে আখ্যা দেয়। সেই থেকে পুকুর চুরি আমাদের বাংলা ভাষায় স্থায়ি আসন গেড়ে বসেন।



বাংলা প্রবাদের এমন হাজারও মজার ঘঠনা থাকতে পারে। কেউ যদি জানেন আমাদের জানান। কিংবা কেউ যদি মনে করেন কোন একটা প্রবাদের কোন মানে হয় না - তাও জানান। রসাত্নক হলে ভাল হয়।

No comments:

Post a Comment