Showing posts with label সন্ধি. Show all posts
Showing posts with label সন্ধি. Show all posts

Wednesday, 18 May 2016

শব্দগঠনের উপায় (সন্ধি)

বিভিন্নভাবে সন্ধিকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন: সন্ধি অর্থ মিলন অর্থাৎ পাশাপাশি দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থপূর্ণ দুটি শব্দকে যে সূত্রে একশব্দ করা হয় তাকে সন্ধি বলে। অথবা প্রথম শব্দের শেষবর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথমবর্ণ মিলে নতুন শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। অথবা উচ্চারণের সময় কাছাকাছি দুবর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণ সংযোগে বা লোপে নতুন অর্থবোধক গঠিত শব্দকে সন্ধি বলে। অথবা বর্ণকে আশ্রয় করে অর্থসংগতিপূর্ণ দুটি শব্দকে একশব্দে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সন্ধি বলে। সন্ধি মিলন, বিকৃত ও লোপেও হয়ে থাকে। যেমন : মিলন (প্রথম শব্দে শেষ বর্ণ এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম বর্ণ): বিদ্যা +আলয়=বিদ্যালয়। বিকৃতি (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): উৎ+চারণ=উচ্চারণ, যাচ +না =যাচঞা। লোপ (পূর্ব বর্ণের বা পরের বর্ণের বিকৃতি): অতঃ+এব=অতএব, উৎ+স্থান =উত্থান /ইতি+আদি =ইত্যাদি, ইতি+মধ্যে =ইতোমধ্যে।

ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে সন্ধির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন :
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ : বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. সুকুমার সেন    : পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
ড. মুহম্মদ এনামুল হক: একাধিক ধ্বনির মিলন, লোপ বা পরিবর্তনের নাম সন্ধি।
অশোক মুখোপাধ্যায়   : একান্ত সন্নিহিত বা অব্যবহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
জ্যোতিভূষণ চাকী    : দ্রুত উচ্চারণের ফলে পরস্পর সন্নিহিত ধ্বনির পরিবর্তন হয়।
                 এতে দুটি ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন কিংবা লোপ হতে পারে। এরূপ মিলন
                 বা লোপ বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।
সন্ধির উপাদান
সন্ধি নিয়মের কয়েকটি উপাদান রয়েছে। যেমন : ধ্বনি ও বর্ণ, পূর্বপদ অর্থাৎ প্রথম শব্দ, পরপদ/উত্তর শব্দ অর্থাৎ দ্বিতীয় শব্দ।

সন্ধির কাজ বা সন্ধির প্রয়োজনীয়তা
সন্ধির কাজ হলো উচ্চারণ ঠিক রাখার নতুন শব্দ গঠন করা। ভাষার জন্য সন্ধির ব্যবহার খুব প্রয়োজন। যেমন: সন্ধি ভাষাকে শ্রুতিমধুর, প্রাঞ্জল ও সংক্ষিপ্ত করে, উচ্চারণ ও বানান শুদ্ধ ও সঠিক করে, দুটি বর্ণে মিলন, বিকৃত ও লোপ ঘটিয়ে একটি বর্ণের মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করে এবং শব্দের অর্থের পরিবর্তন ও বিস্তার ঘটায়।
শব্দ উচ্চারণের সুবিধার্থে এবং ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সন্ধির উদ্ভব হয়েছে। সন্ধির জন্যই দুটি শব্দ একসঙ্গে উচ্চারণ করা যায়। সাধারণত দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় তবে বিকৃতি বা লোপেও সন্ধি হয়। আবার সকল ক্ষেত্রে সন্ধি হয় না। যেমন: অর্থ+ অভাব= অর্থাভাব, দুর+অবস্থা=দুরাবস্থা, মান+অভিমান =মানাভিমান ইত্যাদি।
নামের ক্ষেত্রেও সন্ধির সুবিধা নেয়া হয়। যেমন শরৎ+চন্দ্র=শরৎচন্দ্র /শরচ্চন্দ্র, রবি+ইন্দ্র =রবীন্দ্র। তবে সন্ধিজাত বা সমাসজাত নামবাচক শব্দ একশব্দ হয় তা আগের লেখকগণ করতেন না তবে বর্তমানে করা হয়। যেমন: রামমোহন, বঙ্কিমচন্দ্র, পরমেশ প্রসন্ন, বসন্ত কুমার।

সন্ধির প্রকার
বিভিন্নভাবে সন্ধির প্রকরণ দেখানো যায়। যেমন:
উৎপত্তিগত
গঠনগত
অনিয়মগত
১. সংস্কৃত সন্ধি
সংস্কৃত শব্দ+সংস্কৃত শব্দ
২. দেশি সন্ধি
দেশি শব্দ + দেশি শব্দ
সংস্কৃত ও দেশি শব্দের
মিলনে সন্ধি হয় না
১. স্বরসন্ধি
২. ব্যঞ্জনসন্ধি
৩. বিসর্গসন্ধি
স্বরসন্ধি বা ব্যঞ্জনসন্ধি
দুটির ক্ষেত্রেই হতে পারে—
১. অন্ত সন্ধি
অসমবর্ণের মিলনে তৈরি—
নৌ+ইক=নাবিক,
ভজ+ক্ত =ভক্ত
২. বহিঃসন্ধি
সমবর্ণের মিলনে তৈরি-মহা
+আশয়=মহাশয়
নিপাতনে সন্ধি:
কিছু সন্ধিজাত শব্দ সন্ধির প্রকৃত নিয়ম না মেনে তৈরি হয় বলে তাদের নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন:
১. স্বরনিপাতনে সন্ধি
গো+অক্ষ = গবাক্ষ
২. ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি
পর+পর = পরস্পর


সন্ধি বিভিন্ন প্রকার। যেমন :
১. স্বরসন্ধি: স্বরবর্ণ ও স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন: নর+অধম= নরাধম।
২. ব্যঞ্জনসন্ধি  : স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণ অথবা ব্যঞ্জনবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন: পরি+ছদ=পরিচ্ছদ, দিক+অন্ত=দিগন্ত, উৎ+ লাস =উল্লাস।
৩. বিসর্গসন্ধি (ঃ উঠে যায়): বিসর্গবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। সাধারণত ‘র’ ও ‘স’-এর সংক্ষিপ্ত রূপকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন: ততঃ+অধিক=ততোধিক, মনঃ+ রম=মনোরম, অন্তঃ>অন্ত, নমঃ>নমস।
৪. নিপাতনে সন্ধি    : নিয়মহীনভাবে যে সন্ধি হয় তাকে নিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: গো+অক্ষ=গোঅক্ষ বা গোবক্ষ বা গোবাক্ষ না হয়ে হবে গবাক্ষ, এখানে ‘ব’ না থাকা শর্তেও ‘ব’ এসেছে। দুভাবে নিপাতনে সন্ধিকে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) স্বরনিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে স্বর ও স্বর সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরনিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: অন্য+অন্য= অন্যান্য, আইন+অনুসারে=আইনানুসারে।
খ) ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি: নিয়মহীনভাবে ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জন সন্ধির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জননিপাতনে সন্ধি বলে। যেমন: এক+দশ=একাদশ, তৎ+কর=তস্কর, পর+পর= পরস্পর, বন+পতি=বনস্পতি।

স্বরসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. আ (া )
অ +অ =আ  : নরাধম (নর +অধম), নবান্ন, পলান্ন, হিতাহিত, শশাঙ্ক, হিমাচল, দাবানল,
             নীলাকাশ, নীলাম্বর, ভেদাভেদ, সূত্রানুসারে
অ +আ =আ  : হিমালয় (হিম+আলয়), সিংহাসন, নবাগত, লোকালয়, জলাশয়, বিবেকানন্দ, দণ্ডাদেশ
আ +অ =আ  : যথার্থ (যথা+অর্থ), মহার্ঘ, ভিক্ষান্ন, পূজার্চনা
আ +আ =আ : বিদ্যালয় (বিদ্যা +আলয়), মহাশয়, শিক্ষায়তন, সদানন্দ
২. ঈ (ী)
ই +ই =ঈ   : রবীন্দ্র (বরি +ইন্দ্র), মহীন্দ্র, অতীন্দ্র, অভীষ্ট, অতীষ্ট, প্রতীতি, অধীন, অতীত
ই +ঈ =ঈ   : প্রতীক্ষা (প্রতি +ঈক্ষা), পরীক্ষা, সমীক্ষা, গিরীশ, অধীশ্বর, ক্ষিতীশ, মনীশ
ঈ +ই =ঈ   : রথীন্দ্র (রথী+ইন্দ্র), অবনীন্দ্র, সতীন্দ্র, সুধীন্দ্র, ফণীন্দ্র, মহীন্দ্র, শচীন্দ্র
ঈ +ঈ =ঈ   : শ্রীশ (শ্রী+ঈশ), মহীশ
৩. ঊ (ূ)
উ +উ =ঊ  : কটূক্তি (কটু+উক্তি), সাধূক্তি, ভানূদয়, বিধূদয়, গুরূপদেশ, অনূদিত, মরূদ্যান
উ +ঊ =ঊ  : লঘূর্মি (লঘু+ঊর্মি), সিন্ধূর্মি, অনূর্ধ্ব, তনূর্ধ্ব, বহূর্ধ্ব
ঊ +উ =ঊ  : বধূৎসব (বধূ+উৎসব), ভূত্থিত, বধূক্তি
ঊ +ঊ =ঊ  : ভূর্ধ্ব (ভূ+ঊর্ধ্ব), সরভূর্মি
৪ এ (ে)
অ +ই =এ   : শুভেচ্ছা (শুভ+ইচ্ছা), নরেন্দ্র, দেবেন্দ্র, প্রেমেন্দ্র, গজেন্দ্র, জয়েন্দ্র, স্বেচ্ছা, পূর্ণেন্দু
অ +ঈ =এ   : অপেক্ষা (অপ+ঈক্ষা), গণেশ, নরেশ, সুরেশ, প্রাণেশ, ভবেশ, পরমেশ্বর, সর্বেশ্বর
আ +ই =এ   : যথেচ্ছা (যথা+ইচ্ছা), যথেষ্ট, মহেন্দ্র, রাজেন্দ্র
আ +ঈ =এ  : মহেশ (মহা+ঈশ), রমেশ, ঢাকেশ্বরী, উমেষ
৫ ও (ো)
অ +উ =ও  : সহোদয় (সহ+উদয়), দামোদর, উত্তরোত্তর, নরোত্তম, পরোপকার, বোধোদয়, প্রশ্নোত্তর,
            হিতোপদেশ, সর্বোত্তম
অ +ঊ =ও : নবোঢ়া (নব+ঊঢ়া), চলর্মি, দেহোর্ধ্ব, পর্বতোর্ধ্ব, গৃহোর্ধ্ব
আ +উ =ও  : যথোচিত (যথা+উচিত), মহোৎসব, যথোপযুক্ত, মহোপকার
আ +ঊ =ও  : পদ্মোর্মি (পদ্ম+ঊর্মি), গঙ্গোর্মি, মহোর্মি, মহোর্ধ্ব
৬ ঐ (ৈ)
অ +এ =ঐ  : জনৈক (জন+এক), হিতৈষী
অ +ঐ =ঐ  : মতৈক্য (মত+ঐক্য), রাজৈশ্বর্য
আ +এ =ঐ  : তথৈব (তথ+এব), সদৈব, তথৈবচ, বসুধৈব
আ +ঐ =ঐ  : মহৈশ্বর্য (মহা+ঐশ্বর্য), মহৈরাবত
৭. ঔ (ৌ)
অ +ও =ঔ  : বনৌষধি (বন +ওষধি), জলৌকা
অ +ঔ =ঔ  : পরমৌষধি (পরম+ঔষধি), উত্তমৌষধি,
আ +ও =ঔ  : মহৌষধি (মহা +ওধষি), লতৌষধি, সদৌজস্বী
আ +ঔ =ঔ  : মহৌষধ (মহা +ঔষধ), মহৌদার্য, দিবৌষধ, মহৌৎসক
৮. আর  
অ +ঋ =অর : দেবর্ষি (দেব +ঋষি), সপ্তর্ষি
আ +ঋ =অর : মহর্ষি (মহা +ঋষি), রাজর্ষি
 ব্যতিক্রম    : উত্তম+ঋণ=উত্তমর্ণ, অধম+ঋণ=অধমর্ণ, বন্যা+ঋত=বন্যার্ত, বেদনা+ঋত=বেদনার্ত
৯, য-ফলা, ই/ঈ+অ/উ/ঊ/এ
: অতি+অন্ত =অত্যন্ত, অতি+আচার=অত্যাচার, অতি+উন্নতি=অত্যুন্নতি, প্রতি+ঊষ=প্রত্যূষ, প্রতি+এক=প্রত্যেক, নদী+অম্বু=নদ্যম্বু, যদ্যপি, প্রত্যক্ষ, গত্যন্তর, ব্যর্থ, ইত্যবসর, প্রত্যাগমন, অভ্যাগত, ইত্যাকার, ইত্যাদি, প্রত্যাদেশ, অত্যাশ্চর্য
১০. ন্ব, /শ্ব/স্ব     অনু/মনু+অ/ই/এ=ন্ব, শু+অ/অ=শ্ব, সু+অ/আ=স্বা
: অনু+ইত=অন্বিত, মনু+অন্তর=মন্বন্তর, পশু+আচার=পশ্বাচার, সু+অচ্ছ=স্বচ্ছ, সু+আগতম=স্বাগতম, অন্বেষণ, পশ্বধম, স্বল্প, স্বস্তি , স্বাগত
১১. অয়, আয়, আয়ি, এ+অ=অয়, এ+আ=অয়া, ঐ+অ=আয়, ঐ+ই=আয়ি
: শে+অন=শয়ন, শে+আন= শয়ান, গৈ+অক= গায়ক, নৈ+ইকা=নায়িকা, নয়ন, বয়ন, নায়ক, গায়িকা
১২. অব, আব, আই, ও+অ=অব, ও+আ=অবা, ও+ই=ই, ও+এ=এ ঔ+অ=আব, ঔ+ই=আবি, ঔ+ই=আবু
: ভো +অন=ভবন, গো +আদি=গবাদি, পো +ইত্র=পবিত্র, গো +এষণা=গবেষণা, পৌ +অক=পাবক, নৌ +ইক=নাবিক, ভৌ +উক=ভাবুক, পবন
১৩. অ/আ/আই, ঋ+অ=অ, ঋ+আ=আ, ঋ+ই=আই
: পিতৃ+অনুমতি=পিত্রানুমতি, পিতৃ+আলয়=পিত্রালয়, ভ্রাতৃ+ইচ্ছা=ভ্রাত্রিচ্ছা, পিত্রাদেশ

ব্যঞ্জনসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. গ, ক +অ=গ, ক +আ=গা, ক+উ=গু, ক+ঈ=গী, ক+ঐ=গৈ
: দিক+অন্ত =দিগন্ত, বাক+আড়ম্বর=বাগাড়ম্বর, প্রাক+উক্ত=প্রাগুক্ত, বাক+ঈশ=বাগীশ, প্রাক+ ঐতিহাসিক = প্রাগৈতিহাসিক, বাগর্থ, পৃথগন্ন, বাগীশ্বরী
২. চ্চ. ৎ+চ=চ্চ, দ+চ=চ্চ
: উৎ+চারণ=উচ্চারণ, বিপদ+চয়=বিপচ্চয়, শরচ্চন্দ্র, সচ্চিন্তা, চলচ্চিত্র
৩. চ্ছ, অ+ছ=চ্ছ, আ+ছ=আচ্ছ, ই+ছ=ইচ্ছ, উ+ছ=উচ্ছ, ৎ+ছ=চ্ছ, দ+ছ=চ্ছ, ৎ+শ=চ্ছ, ৎ+স=চ্ছ, দ+শ=চ্ছ  
: স্ব+ছন্দ=স্বচ্ছন্দ, আ+ছন্ন=আচ্ছন্ন, পরি+ছেদ=পরিচ্ছেদ, অনু+ছেদ=অনুচ্ছেদ, তৎ+ছবি=তচ্ছবি, বিপদ+ ছায়া=বিপচ্ছায়া, উৎ+শৃঙ্খলা=উচ্ছৃঙ্খলা, কুৎ+সিত=কুচ্ছিত, তদ+শক্তি=তচ্ছক্তি, প্রচ্ছদ, একচ্ছদ, মুখচ্ছবি, বৃক্ষচ্ছায়া, অঙ্গচ্ছেদ, অবচ্ছেদ, কথাচ্ছলে, খেলচ্ছলে, পরীক্ষাচ্ছলে, ব্যবচ্ছেদ, আলোকচ্ছটা, আচ্ছাদন প্রতিচ্ছবি, বিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন তরুচ্ছায়া, উচ্ছেদ, সচ্ছাত্র, তচ্ছায়া, উচ্ছিন্ন, তচ্ছিদ্র, উচ্ছ্বাস, চলচ্ছক্তি, উচ্ছন্ন, উচ্ছব, বচ্ছর
৪. জ /জ্জ /জ্ঝ     চ+অ=জ, ৎ+জ=জ্জ, চ+জ=জ্জ, ত/দ+জ=জ্জ, ৎ+ঝ=জ্ঝ, দ+জ=জ্জ, দ+জ=জ্ঝ
: অচ+অন্ত =অজন্তা, যাবৎ+জীবন=যাবজ্জীবন, পাঁচ+জন=পাঁজ্জন, নাত+জামাই= নাজ্জামাই, কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা, বিপদ+জনক=বিপজ্জনক, এতদ+ঝঙ্কার=এতজ্ঝঙ্কার, ণিজন্ত, তজ্জন্য, উজ্জ্বল, জগজ্জীবন, তজ্জাতীয়, বজ্জাত, ঘজ্জামাই
৫. ড়, ট+অ=ড়, ট+আ =ড়া : ষট+ঋতু=ষড়ঋতু , ষট+আনন=ষড়ানন  
৫. দ, ৎ+অ=দ, ৎ+ই=দি, ৎ+ঈ=দী, ৎ+উ=দু, ৎ+ঔ=দৌ
: কৃৎ+অন্ত =কৃদন্ত, সৎ+ইচ্ছা=সদিচ্ছা, জগৎ+ঈশ্বর=জগদীশ্বর, সৎ+উদ্দেশ্য=সদুদ্দেশ্য, মহৎ+ঔষধ=মহদৌষধ, তদবধি, সদাশয়, সদানন্দ, মৃদঙ্গ, বৃহদারণ্যক, জগদিন্দ্র, জগদীশ, সদুপদেশ
৬. ব, প+অ=ব    : সুপ+অন্ত =সুবন্ত
৭. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ৎ+ড=ড্ড, ৎ+ঢ=ড্ঢ, ৎ+হ=দ্ধ, ৎ+ল=ল্ল, ৎ+ট=ট্ট, ৎ+ঠ=ট্ঠ   
: উৎ+ডিন=উড্ডিন, বৃহৎ+ঢক্কা=বৃহড্ঢক্কা, উৎ+হার=উদ্ধার (হত/হতি), উৎ+লেখ=উল্লেখ, বৃহৎ+টীকা =বৃহট্টীকা, বৃহৎ+ঠাকুর=বৃহট্ঠাকুর , উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি, তদ্ধিত, উল্লম্ফ, উল্লঙ্ঘন, বিদ্যুল্লতা, উল্লাস, বৃহট্টক্কা
৮. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—চ+শ=শশ, র+বর্ণ=দ্বিত্ব
: পাঁচ+শ=পাঁশ্শ, চার+দিন=চাদ্দিন, সাশ্শ, তদ্দিন, হত্তাল
৯. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—দ+ল=ল্ল, দ+ট=ট্ট, দ+ক/স =ৎ, ধ+প=ৎ
: উদ+লিখিত=উল্লিখিত, তদ+টীকা=তট্টীকা, তদ+সম=সংস্কৃত, ক্ষুধ+পিপাসা=ক্ষুৎপিপাসা, হৃৎকম্প, তৎকাল, বিপৎসঙ্কুল, হৃৎকমল
১০. ং, ম+ক=ঙ্ক/ংগ, ম+ক্ষ=ংক্ষ, ম+খ্যা=ংখ, ম+গ=ংগ, ম+ঘ=ংঘ, ম+শ=ংশ, ম+স=ংস, ম+য=ং, ম+হ=ংহ, ম+র=ংর, ম+ল=ংল, ম+ব=ংব  
: সম+কর=সঙ্কর, সম+ক্ষোভ=সংক্ষোভ, সম+খ্যা==সংখ্যা, সম+গীত=সংগীত, সম+ঘ=সংঘ, সম+শয়=সংশয়, সম+ সার=সংসার, সম+যোজন=সংযোজন, সম+হার=সংহার, সম+রক্ষণ=সংরক্ষণ, সম+লাপ=সংলাপ, সম+ বর্ধনা= সংবর্ধনা, সংকল্প, সংকলন, সংকীর্ণ, শংকা, সংক্রম, অহংকার, সঙ্গম, বিহঙ্গম, সংগত, সংগঠন , সংঘাত, সংসপ্তক, সংযোগ, স্বয়ংবরা, সংবাদ, কিংবা, বারংবার, সংবরণ
১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন—ম+চ=ঞ্চ, ম+জ=ঞ্জ, ম+ত=ন্ত, ম+দ=ন্দ, ম+ন=ন্ন, ম+প=ম্প, ম+ভ=ম্ভ, ম+ম=ম্ম
: সম+চয়=সঞ্চয়, সম+জীবন=সঞ্জীবন, সম+তাকা=সন্তাকা, সম+দর্শন=সন্দর্শন, সম+ন্যাস=সন্ন্যাস, সম+ পূর্ণ=সম্পূর্ণ, সম+ভার=সম্ভার, সম+মান=সম্মান, কিন্নর
১২. প্রত্যয়—না, নী, ত/ক্ত, ঞ, থ, আমি, আলি, এক, উক, ইয়াল (য়াল), ইয়া, এ/য়ে/য় /য়া /আ, আ/ই-কার লোপ
: যাচ+না=যাঞ্চা, রাজ+নী=রাজ্ঞী, নষ+ত= নষ্ট, দৃশ+ত=দৃষ্ট, যজ+ঞ=যজ্ঞ, ষষ+থ=ষষ্ঠ, বোকা+ আমি = বোকামি, রুপ+আলি=রুপালি, বার+এক=বারেক, নিন্দা+উক=নিন্দুক, গাড়ি+আল=গাড়িয়াল, নাও+ ইয়া= নাইয়া, মা+এ=মায়ে, কাঁচা+কলা=কাঁচকলা, বৃষ্টি, হৃষ্ট, কৃষ্টি, বুদ্ধ, মুগ্ধ, পাগলামি, ছেলেমি, মেয়েলি, গোঁড়ামি, ঢিলেমি, শাঁখারি, মিতালি, সোনালি , শতেক, খানেক, কতেক, অর্ধেক, তিলেক, তিনেক, ধনিক, বণিক, কুড়িক, গুটিক, হিংসুক, মিথ্যুক, লাঠিয়াল, ঘড়িয়াল (ই লোপ পায়), গাঁইয়া (ও লোপ পায়)
ভায়ে, ঝিয়ে, ছায়ায়, আলয়, বাবুআনা, ঘোড়দৌড়, নাতবউ

বিসর্গসন্ধির ব্যবহার বা বিচ্ছেদ
১. শ, ষ, স, ঃ +চ=শ্চ   : নিঃ +চয় =নিশ্চয়, দুঃ +চিন্তা =দুশ্চিন্তা, নিশ্চিহ্ন, নিশ্চিন্ত, দুশ্চিন্তা, দুশ্চরিত্র
ঃ +ট/ঠ=ষ : নিঃ +ঠুর =নিষ্ঠুর, ধনুষ্টংকার, নিষ্ঠা, নিষ্ঠুর, নিষ্ফল, নিষ্কাম, আবিষ্কৃত, চতুষ্কোণ, ভ্রাতুষ্পুত্র, দুষ্প্রাপ্য, চতুষ্পদ, নমষ্কার, বহিষ্কার, পরিষ্কার, পুরষ্কার, তিরষ্কার, দুষ্কার্য
ঃ +ত/থ=স : নিঃ +তার =নিস্তার, নিস্তেজ, অধস্তন, প্রস্থান, দুস্তর, মনস্কাম, ভাস্কর, তেজস্কর
২. চ্ছ, ঃ +ছ=চ্ছ : নিঃ+ছিদ্র=নিচ্ছিদ্র
৩. ও, ঃ +ও=ও : মনঃ +যোগ=মনোযোগ
ব্যতিক্রম—মনোহোর, অধোগতি, সদ্যোজাত, ততোধিক, বয়োধিক, বয়োবৃদ্ধ, পুরোভাগ, মনোহর, তপোবন, মনোজগৎ, অধোগতি, মনোরম, মনোরথ, অকুতোভয়, নভোযান, যশোলাভ, মনোরঞ্জন, সরোবর, মনোনয়ন
— মনঃকষ্ট, অধঃপতন, অন্তঃকরণ, অতঃপর, বহিঃপ্রকাশ
৪. র—ঃ +অ=র : দুঃ +গতি =দুর্গতি, আশীর্বাদ, আবির্ভাব
৫. ঃ +জ/য/র/ল/ব/হ= র /রেফ
: দুরাচার, নিরবধি, দুরবস্থা, নিরাপদ, নির্জীব, দুর্যোগ, দুর্বোধ্য, আশীর্বাদ, আবির্ভাব, নির্ভয়, প্রাদুর্ভাব, বহির্গমন, অহর্নিশ, পুনর্বার, পুনর্মিলন, অন্তর্গত, প্রাতভ্রমণ, অন্তরাত্মা
৬. ঃ +র =র : নিঃ+রস =নিরস/নীরস, নিরব/নীরব, নিরোগ/নীরোগ

Monday, 18 April 2016

তৎসম শব্দের সন্ধি

তৎসম শব্দের সন্ধি
তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় (সংকলিত ও নির্বাচিত) বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের প্রকৃতি অনুসারে এই সন্ধিকে যে ভাবে পাই তা হল—
১. স্বর-স্বর সন্ধি। বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি। বাক্ + ঈশ =বাগীশ
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি। তৎ + সম =তৎসম
সংস্কৃত স্বরসন্ধি (স্বর-স্বর সন্ধি)
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + অ =আ নব + অন্ন =নবান্ন
অ + আ =আ হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
স্বরসন্ধি সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে উভয় মিলে এ-কার হয় এবং এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ই =এ রাজ + ইন্দ্র =রাজেন্দ্র
অ + ঈ =এ পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ রমা + ঈশ =রমেশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + উ =ও হিত + উপদেশ =হিতোপদেশ
অ + ঊ =ও পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ হলে উভয় মিলে অর্ হয় এবং অর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋ =অ দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ মহা + ঋষি =মহর্ষি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋত হলে উভয় মিলে আর্ হয় এবং আর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ঋত =আর শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত
স্বরসন্ধি সূত্র : ৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার, ঐ, ঐ-কার হলে উভয় মিলে ঐ-কার হয় এবং ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + এ =ঐ এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার, ঔ, ঔ-কার হলে উভয় মিলে ঔ-কার হয় এবং ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ও =ঔ মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ =মহৌষধ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার হলে উভয় মিলে য (য-ফলা) হয় এবং য-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + অ =এ্য অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য নদী +অম্বু =নদ্যম্বু
স্বরসন্ধি সূত্র : ৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ আ, আ-কার হলে উভয় মিলে য্আ (এ্যা) হয় এবং এ্যা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + আ =এ্যা অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা মসী + আধার =মস্যাধার
স্বরসন্ধি সূত্র : ১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে উভয় মিলে ঈ হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ই =ঈ গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ =সতীশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে য্উ (এ্যউ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + উ =এ্যউ প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূষ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার হলে উভয় মিলে য্এ (এ্যএ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + এ =এ্যএ প্রতি + এক =প্রত্যেক
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঐ, ঐ-কার, হলে উভয় মিলে য্ঐ (এ্যঐ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ঐ =এ্যঐ প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার থাকলে উভয় মিলে য্ও (এ্যও) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
ই + ও =এ্যও ইতি + ওম =ইত্যোম
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার, ই, ই-কার হলে উভয় মিলে বয় (অয়), বায়, বি, বী হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন—
উ + অ =বয় (অয়) অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ) সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ঊ হয়। যেমন—
উ + উ =ঊ সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ, ঋ-কার হলে উভয় মিলে ঋ, ঋ-কার হয়। যেমন—
উ + ঋ =বৃ বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পর পদের আদ্যবর্ণ এ-কার লে উভয় মিলে এ হয়। যেমন—
ঊ + এ =বে (এয়) অনু +এষণ =অন্বেষণ
স্বরসন্ধি সূত্র : ১৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঋ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে স্বরবর্ণ যুক্ত হলে উভয় মিলে ঋ-কার হয় এবং পরপদের স্বরবর্ণ ঋ-কারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঋ + অ =র্অ পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি এ, এ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে অয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
এ + অ =অয় শী>শে + অন =শয়ন
স্বরসন্ধি সূত্র : ২১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঐ, ঐ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে আয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঐ + অ =আয় নৈ + অক =নায়ক
স্বরসন্ধি সূত্র : ২২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ও, ও-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, আ, আ-কার, এ, এ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে অব, অবা, অবে হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ও + অ =অব ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে গো + এষণা =গবেষণা
স্বরসন্ধি সূত্র : ২৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঔ, ঔ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, ই, ই-কার, উ, উ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে আব ও আবি, আবু হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
ঔ + অ =আব পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু ভৌ +উক =ভাবুক
নিপাতনে সিদ্ধ :
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ় প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি) স্ব + ঈর =স্বৈর।

সংস্কৃত ব্যঞ্জন সন্ধি
ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ  তিনটি হলো-
  • ১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
  • ২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।
  • ৩। ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : ধরা যাক পূর্বপদটি ‘কথা’। এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি থ এবং এর সাথে আ ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। আবার ধরা যাক পরপদটি ‘ছলে’। এই পদটির প্রথম বর্ণটি ছ। অর্থাৎ ছ্ +অ। তাহলে সূত্র অনুসারে সন্ধির ফলাফল হবে আ + ছ =আচ্ছ। সব মিলিয়ে দাঁড়াবে- কথা +ছলে=কথাচ্ছলে। এরূপ—
অ +ছ =অচ্ছ। প্র +ছদ =প্রচ্ছদ
আ + ছ =আচ্ছ। আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ। পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ। তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : সূত্রানুসারে ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। অর্থাৎ এই নিয়মে ক =গ, চ =জ, ট =ড়, ত (ৎ) =দ এবং প =ব হবে। অপর দিকে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। অর্থাৎ এই সূত্রে পরিবর্তনের রূপ হবে
ক +অ =গ, ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ : ক্ + অ =গ। দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ। ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়। ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী। জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব। সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ব্যতিক্রম : যাচ্ +অক=যাচক।
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র :
ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের ফলে যে সন্ধির সৃষ্টি হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিচারে তিনটি বর্ণকে পরাশ্রায়ী বলা হয়। এই বর্ণ তিনটি হলো- ং, ঃ ও ঁ। এই তিনটি বর্ণের মধ্যে ‘ঃ’-এর ব্যবহার সন্ধিতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে- প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে বিসর্গ সন্ধিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধিকে দুটি ধারায় ভাগ করতে পারি। ভাগ দুটি হলো-
  • ৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি
  • ৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।
নিচে উভয় সন্ধির নিয়মাবলিকে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি:
পরাশ্রায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া অন্যান্য সকল ব্যঞ্জন বর্ণ অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তা ব্যঞ্জন- ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি হবে। এক্ষেত্রে সন্ধির সূত্রগুলো হবে—
৩.১.১ । পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ বর্গের তৃতীয় চতুর্থ বর্ণ বা অন্তঃস্থ বর্ণ হয়, তবে ক, চ, ট, ত, প বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : বর্গের (ক, চ, ট, ত, প) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো হলো- যথাক্রমে গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব এবং ভ। পক্ষান্তরে অন্তঃস্থ বর্ণগুলো হলো- য (য়), র, ল ও অন্তঃস্থ ব। এই বর্ণগুলো যদি পরপদে থাকে এবং পূর্বপদের শেষ বর্ণ যদি ক্, চ্, ট্, ত্ এবং প হয়, তবে এই পাঁচটি বর্ণ যে রূপ লাভ করবে তা হলো- ক্=গ, চ্=জ, ট্ =ড (ড়), ত=দ এবং প=ব।
উদাহরণ : ক্ + গ =গ্গ দিক্ +গজ =দিগ্গজ
ক্ + জ =গ্‌জ বাক্ +জাল =বাগ্‌জাল
ক্ + দ =গ্দ বাক্ + দত্তা =বাগ্‌দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্‌ভ্র দিক্ + ভ্রম =দিগ্‌ভ্রম
ক্ + ল =গ্‌ল বাক্ + লোপ =বাগ্‌লোপ
ট্ +জ=ড়জ ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্‌দ ষট্ + দর্শন =ষড়্‌দর্শন
ট্ + ধ =ড়্‌ধ ষট্ + ধা =ষড়্‌ধা
ট্ + ব =ড়্‌ব ষট্ + বর্গ =ষড়্‌বর্গ
ট্ + ভ =ড়্‌ভ ষট্ + ভুজ =ষড়্‌ভুজ
ত্ + গ =দ্গ উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্‌ড উত্ +ডীন =উড্‌ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ অপ্ + ধি =অব্ধি
৩.১.২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয় তা হলে পূর্বপদের ক্, চ্, ট্, ত্, প্ যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়্), দ ও ব হয় কিম্বা বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়।
ব্যাখ্যা : পূবপদের শেষ বর্ণ ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয়। যেমন : বাক্, বচ্ ইত্যাদি। পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয়। যেমন : নির্ণয়, মন্দির ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত শব্দ তৈরিতে ক=গ, চ=জ, ট=ড (ড়), ত=দ এবং প=ব হবে। বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়। যেমন ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা বিকল্পে ষণ্মাস। এখানে ট্=ড় হয়েছে। পক্ষান্তরে ট-বর্গের নাসিক্য বর্ণ ণ যুক্ত হয়েছে।
উদাহারণ : ক্ +ন =গ্ বা ঙ্ দিক্ + নাগ=দিগ্নাগ বা দিঙ্নাগ।
ক্ +ম =ঙ। বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্ যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন জগৎ + নাথ=জগদ্‌নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন। তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম। অপ্ +ময় =অম্ময়।
৩.১.৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি চ-বর্গীয় হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ন হয়, তবে তা (ন) ঞ হয়।
উদাহরণ : চ্ +ন যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
৩.১.৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ত্ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ এবং স থাকে, তবে দ ও ধ স্থানে ত্ হয়।
উদাহরণ : দ্ + ক =ত্ তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্ তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্ তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্ তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্ তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্ ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্ ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
৩.১.৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ছ, জ, ঝ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের চ=চ্চ, ছ=চ্ছ, জ=জ্জ এবং ঝ=জ্ঝ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : পূর্বদের শেষ বর্ণটি খাঁটি ব্যঞ্জন ধ্বনি হলে তার সাথে হসন্ত যুক্ত হবে। যেমন- যেমন- সৎ, বিপদ্ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। যেমন- পরপদের শব্দের শব্দটি যদি চিত্র হয়, তা হলে- এর আদ্য চি ধ্বনিটি হবে চ্ + ই। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত চ্চ, চ্ছ, জ্জ, জ্ঝ-এর সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + চ =চ্চ চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
৩.১.৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ট, ড, ঢ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের ট=ট্ট, ড=ডড, ঢ=ড্ঢ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
উদাহরণ : ৎ + ট =ট্ট তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ। বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
৩.১.৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ, দ্, ধ্ হয় এবং পরপদের ন বা ম থাকলে, ৎ বা দ্ এর স্থানে ন হয়।
উদাহরণ : ৎ +ন =ন উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
৩.১.৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ শ থাকে. তবে শ স্থানে চ্ছ হয়।
উদাহরণ : ৎ + শ =চ্ছ উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
৩.১.৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ হ হয়, তবে পূর্বপদের ৎ =দ্ এবং পরপদের হ =ধ হবে।
উদাহরণ : ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ পদ্ +হতি =পদ্ধতি
৩.১.১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ল হয়, তবে উক্ত ল-দ্বিত্ব বর্ণে পরিণত হয়।।
উদাহরণ : ৎ +ল =ল্ল উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ : ধ্ +ত =দ্ধ বুধ্ +ত =বুদ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ দুহ্ +ত =দুগ্ধ
৩.১.১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, গ, ঘ, য, র, ল, ব, শ, স এবং হ হয়, তবে পূর্বপদের ম ধ্বনি ং বা ঙ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ম্ +ক=ঙ্ক অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ সম্ +হার =সংসার
৩.১.১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ট, ত প-বর্গের হয়, তবে সন্ধির ফলে বর্গের পঞ্চম বর্ণ হবে।
ব্যাখ্যা : পরিচর্তনের ফলে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ)=ঞ,(ট, ঠ, ড, ঢ, ণ)=ণ, (ত, থ, দ, ধ, ন) =ন এবং (প, ফ, ব, ভ, ম)=ম হবে।
উদাহরণ : ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম সম্ +মান =সম্মান
৩.১.১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ষ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত বা থ থাকলে, ত=ট, থ=ঠ হয়।
উদাহরণ : ষ্ +ত =ট বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
৩.১.১৫। উৎ-উপসর্গের স্থা ধাতু যোগে যে সন্ধি হয়, তার প্রথম ধ্বনি (স) লোপ পায়।
উদাহরণ : উৎ +স্থা=স্থা উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি উৎ +স্থিত =উত্থিত
৩.১.১৬। সম্ উপসর্গের পরে কৃ-ধাতু যুক্ত হলে, ধাতুর আগে স যুক্ত হয়। যেমন-
সম্ +কার =সংস্কার।
কিন্তু পরি উপসর্গের পরে ষত্ব বিধানের নিয়মে স>ষ হয়। যেমন-
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।

৩.২। বিসর্গ সন্ধি
পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।
৩.২.১। পূর্ব পদের অঃ থাকলে এবং পর পদে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে, এবং উভয় মিলে ও-কার হয় এবং উক্ত ও-কার পূর্ব পদে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : অঃ +গ =ও মনঃ +গত =মনোগত
অঃ +জ =ও সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও পুরঃ +হিত =পুরোহিত
৩.২.২। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে অ থাকলে এবং পর পদের অ ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ঃ লোপ পায় এবং সন্ধি না হয়ে, পূর্বপদ ও পরপদ পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ : অঃ +আ =অআ মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ অতঃ +এব =অতএব
৩.২.৩। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে ই বা উ থাকলে এবং পর পদের প্রথম বর্ণ র হলে, পূর্বপদের ই=ঈ বা উ=ঈ হয় এবং পরপদের র অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণ : ইঃ + র =ঈর নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
৩.২.৪। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ থাকলে, পরপদে র্ যুক্ত হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণ প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ দুঃ + উহ =দুরূহ
৩.২.৫। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পর থাকলে অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গের স্থানে র্ হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : ঃ + অ =র্অ>র নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
৩.২.৬। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে চ ও ছ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ শ হয়।
উদাহরণ : ঃ + চ =শ নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
৩.২.৭। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে ট ও ঠ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ ষ হয়। এবং পরপদের ট বা ঠ উক্ত ষ-এর সাথে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।
উদাহরণ : ঃ + ট =ষ্ট চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
৩.২.৮। পূর্বপদে ই বা উ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ ষ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : ইঃ + ক =ষ্ক আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
৩.২.৯। পূর্বপদে অ বা আ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ স-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ : অঃ +ক =স্ক পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক ভাঃ + কর =ভাস্কর
৩.২.১০। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, ক্ষ, খ, প, ফ, র, শ, স থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না।
উদাহরণ : ঃ + ক =ঃক অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
৩.৩.১১। পূর্বপদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গের লোপ হয়।
উদাহরণ : ঃ +স্ত =স্ত নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি :
আ +চর্য =আশ্চর্য আ +পদ =আস্পদ
অহঃ +কর =অহঙ্কর অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র
সংস্কৃত স্বরসন্ধি (স্বর-স্বর সন্ধি)
স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলন এবং সেখান থেকে রূপান্তরিত স্বরবর্ণের উদ্ভবকেই স্বরসন্ধি বলা হয়। এক্ষেত্রে যে সকল রীতি অনুসৃত হয়, সেগুলোই স্বরসন্ধির নিয়ম হিসাবে প্রচলিত আছে। নিচে এই নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করা হলো


স্বরসন্ধি সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে উভয় মিলে আ-কার হয় এবং আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন

অ + অ =আ      নব + অন্ন =নবান্ন
অ + আ =আ     হিম + আলয় =হিমালয়
আ + অ =আ     আশা + অতিরিক্ত =আশাতিরিক্ত
আ + আ =আ    বিদ্যা + আলয় =বিদ্যালয়
স্বরসন্ধি সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে উভয় মিলে এ-কার হয় এবং এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + ই =এ      রাজ + ইন্দ্র =রাজেন্দ্র
অ + ঈ =এ      পরম + ঈশ্বর =পরমেশ্বর
আ + ই =এ     যথা + ইষ্ট =যথেষ্ট
আ + ঈ =এ     রমা + ঈশ =রমেশ
স্বরসন্ধি সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ও-কার হয় এবং ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + উ =ও     হিত + উপদেশ =হিতোপদেশ
অ + ঊ =ও     পর্বত + ঊধ্ব =পর্বতোধ্ব
আ + উ =ও     মহা + উদয় =মহোদয়
আ + ঊ =ও     মহা + ঊর্মি =মহোর্মি
স্বরসন্ধি সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ হলে উভয় মিলে অর্ হয় এবং অর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + ঋ =অ     দেব + ঋষি =দেবর্ষি
আ + ঋ =অ     মহা + ঋষি =মহর্ষি

স্বরসন্ধি সূত্র : ৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋত হলে উভয় মিলে আর্ হয় এবং আর্ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + ঋত =আর     শীত + ঋত =শীতার্ত
আ + ঋত =আর     তৃষ্ণা + ঋত =তৃষ্ণার্ত

স্বরসন্ধি সূত্র : ৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার, ঐ, ঐ-কার হলে উভয় মিলে ঐ-কার হয় এবং ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + এ =ঐ         এক + এক =একৈক
অ + ঐ =ঐ         মত + ঐক্য =মতৈক্য
আ + এ =ঐ         সদা + এব =সদৈব
আ + ঐ =ঐ         মহা + ঐশ্বর্য্য =মহৈশ্বর্য্য

স্বরসন্ধি সূত্র : ৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি অ, অ-কার, আ, আ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার, ঔ, ঔ-কার হলে উভয় মিলে ঔ-কার হয় এবং ঔ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
অ + ও =ঔ     মাংস + ওদন =মাংসৌদন
অ + ঔ =ঔ     দিব্য + ঔষধ =দিব্যৌষধ
আ + ও =ঔ     মহা + ওষধি =মহৌষধি
আ + ঔ =ঔ     মহা + ঔষধ =মহৌষধ

স্বরসন্ধি সূত্র : ৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার হলে উভয় মিলে য (য-ফলা) হয় এবং য-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + অ =এ্য     অতি + অন্ত =অত্যন্ত
ঈ +অ =এ্য     নদী +অম্বু =নদ্যম্বু

স্বরসন্ধি সূত্র : ৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ আ, আ-কার হলে উভয় মিলে য্আ (এ্যা) হয় এবং এ্যা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + আ =এ্যা     অতি + আচার =অত্যাচার
ঈ + আ =এ্যা     মসী + আধার =মস্যাধার

স্বরসন্ধি সূত্র : ১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে উভয় মিলে ঈ হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + ই =ঈ         গিরি + ইন্দ্র =গিরীন্দ্র
ই + ঈ =ঈ         প্রতি + ঈক্ষা =প্রতক্ষা
ঈ + ই =ঈ         মহী + ইন্দ্র = মহী্ন্দ্র
ঈ + ঈ =ঈ         সতী + ঈশ =সতীশ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে য্উ (এ্যউ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + উ =এ্যউ     প্রতি + উত্তর =প্রত্যুত্তর
ই + ঊ =এ্যঊ প্রতি + ঊষ =প্রত্যূ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ এ, এ-কার হলে উভয় মিলে য্এ (এ্যএ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + এ =এ্যএ     প্রতি + এক =প্রত্যেক

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঐ, ঐ-কার, হলে উভয় মিলে য্ঐ (এ্যঐ) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + ঐ =এ্যঐ     প্রতি + ঐশ্বর্য =অত্যৈশ্বর্য

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ই, ই-কার, ঈ, ঈ হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ও, ও-কার থাকলে উভয় মিলে য্ও (এ্যও) হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
ই + ও =এ্যও     ইতি + ওম =ইত্যোম

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ অ, অ-কার, আ, আ-কার, ই, ই-কার হলে উভয় মিলে বয় (অয়), বায়, বি, বী হয় এবং তা পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়। যেমন
উ + অ =বয় (অয়)       অনু +অয় =অন্বয়
উ + আ =বা (আ)         সু + আগত =স্বাগত
উ + ই =বি                 অনু +ইত =অন্বিত
উ + ঈ =বী                 অনু + ঈক্ষা =অন্বীক্ষা

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে উভয় মিলে ঊ হয়। যেমন
উ + উ =ঊ                 সু + উক্ত =সূক্ত
উ + ঊ =ঊ                 লঘু + ঊর্মি =লঘূর্মি
ঊ + উ =ঊ                 বধূ + উক্তি =বধূক্তি
ঊ + ঊ =ঊ                 ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ঋ, ঋ-কার হলে উভয় মিলে ঋ, ঋ-কার হয়। যেমন
উ + ঋ =বৃ                 বহু +ঋচ্ =বহ্বৃচ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি উ, উ-কার, ঊ, ঊ-কার হলে এবং পর পদের আদ্যবর্ণ এ-কার লে উভয় মিলে এ হয়। যেমন
ঊ + এ =বে (এয়)     অনু +এষণ =অন্বেষণ

স্বরসন্ধি সূত্র : ১৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঋ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে স্বরবর্ণ যুক্ত হলে উভয় মিলে ঋ-কার হয় এবং পরপদের স্বরবর্ণ ঋ-কারের সাথে যুক্ত হয়। যেমন
ঋ + অ =র্অ            পিতৃ + অর্থে =পিত্রর্থে
ঋ + আ =র্আ          পিতৃ + আলয় =পিত্রালয়
ঋ + ই =র্ই             পিতৃ + ইচ্ছা =পিত্রিচ্ছা
ঋ + উ =র্উ             পিতৃ + উপদেশ =পিত্রূপদেশ
ঋ + ঋ =ৠ            পিতৃ +ঋণ =পিতৄন (বাংলাতে এইরূপটি অপ্রচলিত)
ঋ + এ =র্এ            ভাতৃ +এষণা =ভার্এষণা

স্বরসন্ধি সূত্র : ২০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি এ, এ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে অয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন
এ + অ =অয়        শী>শে + অন =শয়ন

স্বরসন্ধি সূত্র : ২১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঐ, ঐ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার হলে, উভয় মিলে আয় হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন
ঐ + অ =আয়        নৈ + অক =নায়ক

স্বরসন্ধি সূত্র : ২২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ও, ও-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, আ, আ-কার, এ, এ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে অব, অবা, অবে হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন
ও + অ =অব         ভো + অন =ভবন
ও + আ =অবা        গো +আদি =গবাদি
ও + ই =অবি         পো + ইত্র =পবিত্র
ও + এ =অবে         গো + এষণা =গবেষণা

স্বরসন্ধি সূত্র : ২৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ঔ, ঔ-কার হলে এবং পরপদের আদ্যবর্ণে অ, অ-কার, ই, ই-কার, উ, উ-কার হলে, উভয় মিলে যথাক্রমে আব ও আবি, আবু হয় এবং তা পূর্ববর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন
ঔ + অ =আব         পৌ + অক =পাবক
ঔ + ই =আবি         নৌ + ইক =নাবিক
ঔ + উ =আবু         ভৌ +উক =ভাবুক

নিপাতনে সিদ্ধ :
অক্ষ + ঊহিণী =অক্ষৌহিণী       অন্য + অন্য=অন্যান্য, অন্যোন্য
কুল + অটা =কুলটা               গব্ + ঈশ্বর =গবীশ্বর
গো + অক্ষ =গবাক্ষ               গো + অস্থি = গবাস্থি
গো + ইন্দ্র =গবেন্দ্র             পর + পর =পরস্পর
প্র + ঊঢ় =প্রৌঢ়                   প্র + এষণ =প্রেষণ
বিম্ব + ঔষ্ঠ =বিম্বৌষ্ঠ             মনস্ + ঈষা =মনীষা
মার্ত + অণ্ড =মার্তণ্ড               রক্ত + ঔষ্ঠ =রক্তোষ্ঠ
শুদ্ধ + ওদন=শুদ্ধোদন            সার + অঙ্গ =সারঙ্গ
সীম + অন্ত =সীমন্ত (সীঁথি)       স্ব + ঈর =স্বৈর।
সংস্কৃত ব্যঞ্জন সন্ধি
ব্যঞ্জনসন্ধির প্রকৃতি অনুসারে, একে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এই ভাগ দুটো হলো-
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
২। ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি।
১। স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি
স্বর-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ১ । পূর্বপদের শেষ ব্যঞ্জন বর্ণটিতে যদি স্বরধ্বনি যুক্ত থাকে এবং পরপদের প্রথম বর্ণটি ছ হয় (যেমন : ছন্ন, ছায়া ইত্যাদি)। তবে পূর্বপদের শেষ ছ=চ্ছ হয় এবং পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : ধরা যাক পূর্বপদটি ‘কথা’। এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি থ এবং এর সাথে আ ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে। আবার ধরা যাক পরপদটি ‘ছলে’। এই পদটির প্রথম বর্ণটি ছ। অর্থাৎ ছ্ +অ। তাহলে সূত্র অনুসারে সন্ধির ফলাফল হবে আ + ছ =আচ্ছ। সব মিলিয়ে দাঁড়াবে- কথা +ছলে=কথাচ্ছলে। এরূপ
অ +ছ =অচ্ছ।         প্র +ছদ =প্রচ্ছদ
আ + ছ =আচ্ছ।      আ +ছন্ন =আচ্ছন্ন
ই + ছ =ইচ্ছ।         পরি +ছন্ন =পরিচ্ছন্ন
উ + ছ =উচ্ছ।         তরু +ছায়া =তরুচ্ছায়া
২. ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
ব্যঞ্জন-স্বর-সন্ধি সূত্র : ১।
পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ হয় এবং পরপদের আদ্য বর্ণটি স্বরবর্ণ যুক্ত থাকে, তবে পূর্বপদের শেষ ক, চ, ট, ত (ৎ), প পরিবর্তিত হয়ে বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : সূত্রানুসারে ক্, চ্, ট্, ত্ (ৎ), প্ বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। অর্থাৎ এই নিয়মে ক =গ, চ =জ, ট =ড়, ত (ৎ) =দ এবং প =ব হবে। অপর দিকে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। অর্থাৎ এই সূত্রে পরিবর্তনের রূপ হবে
ক +অ =গ,     ক +আ=গা ইত্যাদি।
উদাহরণ :         ক্ + অ =গ।         দিক্ +অন্ত =দিগন্ত
চ্ + অ =জ।         ণিচ্ +অন্ত =ণিজন্ত
ট্ + আ =ড়।         ষট্ +আনন =ষড়ানন
ত্ + ঈ =দী।        জগত্ +ঈশ্বর =জগদীশ্বর
প্ + অ =ব।         সুপ্ + অন্ত =সুবন্ত।
ব্যতিক্রম : যাচ্ +অক=যাচক।
৩. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন-সন্ধি সূত্র : ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের মিলনের ফলে যে সন্ধির সৃষ্টি হয়। ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহারিক প্রকৃতির বিচারে তিনটি বর্ণকে পরাশ্রায়ী বলা হয়। এই বর্ণ তিনটি হলো- ং, ঃ ও ঁ। এই তিনটি বর্ণের মধ্যে ‘ঃ’-এর ব্যবহার সন্ধিতে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে- প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে বিসর্গ সন্ধিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রচলিত ব্যাকরণের সাথে সমাঞ্জস্য রেখে আমরা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধিকে দুটি ধারায় ভাগ করতে পারি। ভাগ দুটি হলো-
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি
৩.২ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (পরাশ্রয়ী) সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধি।
নিচে উভয় সন্ধির নিয়মাবলিকে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
৩.১. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি: পরাশ্রায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ ছাড়া অন্যান্য সকল ব্যঞ্জন বর্ণ অন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে, তা ব্যঞ্জন- ব্যঞ্জন (স্বাধীন) সন্ধি হবে। এক্ষেত্রে সন্ধির সূত্রগুলো হবে
৩.১.১ । পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ বর্গের তৃতীয় চতুর্থ বর্ণ বা অন্তঃস্থ বর্ণ হয়, তবে ক, চ, ট, ত, প বর্গের তৃতীয় বর্ণে পরিণত হবে। একই সাথে পরপদের স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : বর্গের (ক, চ, ট, ত, প) তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলো হলো- যথাক্রমে গ, ঘ, জ, ঝ, ড, ঢ, দ, ধ, ব এবং ভ। পক্ষান্তরে অন্তঃস্থ বর্ণগুলো হলো- য (য়), র, ল ও অন্তঃস্থ ব। এই বর্ণগুলো যদি পরপদে থাকে এবং পূর্বপদের শেষ বর্ণ যদি ক্, চ্, ট্, ত্ এবং প হয়, তবে এই পাঁচটি বর্ণ যে রূপ লাভ করবে তা হলো- ক্=গ, চ্=জ, ট্ =ড (ড়), ত=দ এবং প=ব।
উদাহরণ :         ক্ + গ =গ্গ         দিক্ +গজ =দিগ্গজ
ক্ + জ =গ্‌জ      বাক্ +জাল =বাগ্‌জাল
ক্ + দ =গ্দ        বাক্ + দত্তা =বাগ্‌দত্তা
ক্ + ধ =গ্ধ         স্রক্ + ধরা =স্রগ্ধরা
ক্ + ব =গ্ব       দিক্ + বিজয় =দিগ্বজয়
ক্ + ভ =গ্‌ভ্র     দিক্ + ভ্রম =দিগ্‌ভ্রম
ক্ + ল =গ্‌ল       বাক্ + লোপ =বাগ্‌লোপ
ট্ +জ=ড়জ         ষট্ +জ=ষড়জ
ট্ + দ =ড়্‌দ        ষট্ + দর্শন =ষড়্‌দর্শন
ট্ + ধ =ড়্‌ধ        ষট্ + ধা =ষড়্‌ধা
ট্ + ব =ড়্‌ব        ষট্ + বর্গ =ষড়্‌বর্গ
ট্ + ভ =ড়্‌ভ       ষট্ + ভুজ =ষড়্‌ভুজ
ত্ + গ =দ্গ        উত্ + গত =উদ্গত
ত্ + ঘ =দ্ঘ        উত্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
ত্ + জ =জ্জ        উত্ +জীবিত =উজ্জীবিত
ত্ + ড =ড্‌ড       উত্ +ডীন =উড্‌ডীন
ত্ + ধ =দ্ধ         বৃহত্ +ধর্ম =বৃহদ্ধর্ম
ত্ + ব =দ্ব        জগত্ +বন্ধু =জগদ্বন্ধু
ত্ + ভ =দ্ভ         উত্ +ভব =উদ্ভব
ত্ + য =দ্য        উত্ +যোগ =উদ্যোগ
ত্+ র =দ্র         বৃহত্ +রথ =বৃহদ্রথ
দ্ + ঘ =দ্ঘ        উদ্ +ঘাটন =উদ্ঘাটন
প্ + জ =ব্জ         অপ্ + জ =অব্জ
প্ + ধ =ব্ধ          অপ্ + ধি =অব্ধি
৩.১.২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয় এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয় তা হলে পূর্বপদের ক্, চ্, ট্, ত্, প্ যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়্), দ ও ব হয় কিম্বা বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়।
ব্যাখ্যা : পূবপদের শেষ বর্ণ ক্, চ্, ট্, ত্, প্ হয়। যেমন : বাক্, বচ্ ইত্যাদি। পরপদের আদ্যবর্ণ ন, ম হয়। যেমন : নির্ণয়, মন্দির ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত শব্দ তৈরিতে ক=গ, চ=জ, ট=ড (ড়), ত=দ এবং প=ব হবে। বিকল্পে ঐ বর্গের নাসিক্য-বর্ণে পরিণত হয়। যেমন ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা বিকল্পে ষণ্মাস। এখানে ট্=ড় হয়েছে। পক্ষান্তরে ট-বর্গের নাসিক্য বর্ণ ণ যুক্ত হয়েছে।
উদাহারণ :         ক্ +ন =গ্ বা ঙ্         দিক্ + নাগ=দিগ্নাগ বা দিঙ্নাগ।
ক্ +ম =ঙ।             বাক্ + ময়=বাঙ্ময়।
চ্ +ন =ঞ্              যাচ্ + না=যাচঞা
ট্ +ন =ণ                ষট্ +নবতি=ষণ্ণবতি
ট্ +ম =ড (ড়) বা ণ   ষট্ + মাস= ষড়্মাস বা ষণ্মাস।
ত্ +ন =দ্ বা ন        জগৎ + নাথ=জগদ্‌নাগ বা জগন্নাথ।
ত্ +ম =দ্ বা ন।      তৎ + মধ্য=তদ্মধ্য বা তন্মধ্য।
প্ +ম =ম।             অপ্ +ময় =অম্ময়।
৩.১.৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি চ-বর্গীয় হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ন হয়, তবে তা (ন) ঞ হয়।
উদাহরণ :             চ্ +ন         যাচ্ +না =যাচঞা
জ্ +ন         রাজ্ +নী =রাজ্ঞী (জ্ঞ=জ্ঞ)
৩.১.৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ত্ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, চ, ছ, ট, ঠ, ত, থ, প, ফ এবং স থাকে, তবে দ ও ধ স্থানে ত্ হয়।
উদাহরণ :         দ্ + ক =ত্         তদ্ + কাল =তৎকাল
দ্ + ত =ত্         তদ্ +ত্ব =তত্ত্ব
দ্ + প =ত্         তদ্ +পর =তৎপর
দ্ + ফ =ত্         তদ্ +ফল =তৎফল
দ্ + স =ত্         তদ্ +সম =তৎসম
ধ্ + ক =ত্          ক্ষুধ্ +কাতর =ক্ষুৎকাতর
ধ্ + প =ত্          ক্ষুধ্ +পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা
৩.১.৫। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ছ, জ, ঝ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের চ=চ্চ, ছ=চ্ছ, জ=জ্জ এবং ঝ=জ্ঝ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
ব্যাখ্যা : পূর্বদের শেষ বর্ণটি খাঁটি ব্যঞ্জন ধ্বনি হলে তার সাথে হসন্ত যুক্ত হবে। যেমন- যেমন- সৎ, বিপদ্ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে। যেমন- পরপদের শব্দের শব্দটি যদি চিত্র হয়, তা হলে- এর আদ্য চি ধ্বনিটি হবে চ্ + ই। এক্ষেত্রে সন্ধিজাত চ্চ, চ্ছ, জ্জ, জ্ঝ-এর সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি যুক্ত হবে।
উদাহরণ :         ৎ + চ =চ্চ         চলৎ + চিত্র =চলচ্চিত্র
ৎ + ছ =চ্ছ         উৎ + ছেদ =উচ্ছেদ
ৎ + জ =জ্জ        যাবৎ +জীবন =যাবজ্জীবন
ৎ + ঝ =জ্ঝ         কুৎ +ঝটিকা =কুজ্ঝটিকা
দ + চ =চ্চ         তদ্ +চিন্তা =তচ্চিন্তা
দ + ছ =চ্ছ        তদ্ +ছবি =তচ্ছবি
দ + জ =জ্জ       তদ্ +জন্য =তজ্জন্য
দ + ঝ =জ্ঝ        বিপদ +ঝঞ্ঝা =বিপজ্ঝঞ্ঝা।
৩.১.৬। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ট, ড, ঢ থাকে, তবে পূর্বপদের ত্ বা দ্ লোপ পাবে এবং পরপদের ট=ট্ট, ড=ডড, ঢ=ড্ঢ হবে। একই সাথে পরপদের ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণটি পূর্বপদে যুক্ত হবে।
উদাহরণ :     ৎ + ট =ট্ট         তৎ + টীকা =তট্টীকা
ৎ + ড =ড্দ      উৎ + ডীন =উড্ডীন
ৎ + ঢ =ড্ঢ।     বৃহৎ +ঢা =বৃহড্ঢা
দ + ট =ট্ট         তদ্ + টীকা =তট্টীকা
দ্ + ঢ =ড্ঢ        এতদ্ +ঢা =এতড্ঢা
৩.১.৭। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ, দ্, ধ্ হয় এবং পরপদের ন বা ম থাকলে, ৎ বা দ্ এর স্থানে ন হয়।
উদাহরণ :         ৎ +ন =ন      উৎ + নতি =উন্নতি
ত্ +ম =ন      মৃৎ + নয় =মৃন্ময়
দ্ +ন =ন      তদ্ + নিমিত্ত =তন্নিমিত্ত
দ্ +ম =ন      তদ্ + ময় =তন্ময়
ধ্ +ন =ন     ক্ষুধ্ +নিবৃত্তি =ক্ষুণ্ণিবৃত্তি
৩.১.৮। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ শ থাকে. তবে শ স্থানে চ্ছ হয়।
উদাহরণ :         ৎ + শ =চ্ছ         উৎ +শ্বাস =উচ্ছ্বাস
দ্ + শ =চ্ছ         তদ্ +শক্তি =তচ্ছক্তি
৩.১.৯। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ হ হয়, তবে পূর্বপদের ৎ =দ্ এবং পরপদের হ =ধ হবে।
উদাহরণ :         ৎ +হ =দ্ধ>দ্ধ         উৎ +হার =উদ্ধার
দ্ +হ =দ্ধ>দ্ধ         পদ্ +হতি =পদ্ধতি
৩.১.১০। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ৎ বা দ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ল হয়, তবে উক্ত ল-দ্বিত্ব বর্ণে পরিণত হয়।।
উদাহরণ :         ৎ +ল =ল্ল             উৎ +লেখ =উল্লেখ
দ্ +ল =ল্ল            তদ্ +লোক =তল্লোক
৩.১.১১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ধ্, ভ্ ও হ্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত হয়, তবে পূর্বপদের ত+ধ =দ্ধ, ভ্ +ত=দ্ধ এবং হ্ +ধ=গ্ধ হবে।
উদাহরণ :         ধ্ +ত =দ্ধ         বুধ্ +ত =বুদ্ধ
ভ্ +ত =দ্ধ        লভ্ +ত =লব্ধ
হ্ +ত =গ্ধ        দুহ্ +ত =দুগ্ধ
৩.১.১২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, গ, ঘ, য, র, ল, ব, শ, স এবং হ হয়, তবে পূর্বপদের ম ধ্বনি ং বা ঙ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ :         ম্ +ক=ঙ্ক         অহম্ +কার =অহঙ্কার
ম্ +খ =ঙ্খ        সম্ +খ্য =সংখ্যা
ম্ +গ =ঙ্গ         ম্ +গীত =সঙ্গীত
ম্ +ঘ =ঙ্ঘ        সম্ +ঘ =সঙ্ঘ
ম্ +ব =ম্ব       কিম্ +বা =কিংবা
ম্ +য =ংয      সম্ +যত =সংযত
ম্ +র =ংর      সম্ +রাগ =সংরাগ
ম্ +ল =ংল     সম্ +লাপ =সংলাপ
ম্ +শ =ংশ     সম্ +শোধন =সংশোধন
ম্ +স =ংস     সম্ + সার =সংসার
ম্ +হ =ংহ      সম্ +হার =সংসার
৩.১.১৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ম্ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ চ, ট, ত প-বর্গের হয়, তবে সন্ধির ফলে বর্গের পঞ্চম বর্ণ হবে।
ব্যাখ্যা : পরিচর্তনের ফলে (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ)=ঞ,(ট, ঠ, ড, ঢ, ণ)=ণ, (ত, থ, দ, ধ, ন) =ন এবং (প, ফ, ব, ভ, ম)=ম হবে।
উদাহরণ :         ম্ +চ =ঞচ্>ঞ্চ         সম্ +চয় =সঞ্চয়।
ম্ +জ =ঞ্জ>ঞ্জ            সম্ +জয় =সঞ্জয়।
ম্ +ত =ন্ত                 গম্ +তব্য =গন্তব্য।
ম্ +ধ =ন্ধ                 সম্ +ধান =সন্ধান।
ম্ +ন =ন্ন                 কিম্ +নর =কিন্নর।
ম্ +প =ম্প               সম্ +পূর্ণ =সম্পূর্ণ
ম্ +ব =ম্ব               সম্ +বোধন =সম্বোধন।
ম্ +ভ =ম্ভ                কিম্ +ভূত =কিম্ভূত
ম্ +ম্ =ম্ম                 সম্ +মান =সম্মান
৩.১.১৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ষ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ত বা থ থাকলে, ত=ট, থ=ঠ হয়।
উদাহরণ :             ষ্ +ত =ট             বৃষ্ + তি =বৃষ্টি
ষ্ +থ =ঠ             ষষ্ + থ =ষষ্ঠ
৩.১.১৫। উৎ-উপসর্গের স্থা ধাতু যোগে যে সন্ধি হয়, তার প্রথম ধ্বনি (স) লোপ পায়।
উদাহরণ :             উৎ +স্থা=স্থা         উৎ +স্থান =উত্থান
উত্ +স্থি=ত্থি         উৎ +স্থিত =উত্থিত
৩.১.১৬। সম্ উপসর্গের পরে কৃ-ধাতু যুক্ত হলে, ধাতুর আগে স যুক্ত হয়। যেমন-
সম্ +কার =সংস্কার।
কিন্তু পরি উপসর্গের পরে ষত্ব বিধানের নিয়মে স>ষ হয়। যেমন-
পরি +কার =পরিস্কার>পরিষ্কার।
৩.২। বিসর্গ সন্ধি
পদের অন্তস্থিত র্ ও স (ষ) স্থানে বিসর্গ হয়। র-স্থানের বিসর্গকে র-জাত বিসর্গ বলে। আর স-স্থানের বিসর্গকে স-জাত বিসর্গ বলে। বাংলায় এই ধ্বনিগুলি উচ্চারিত হয় না। যে সন্ধিতে এই ধ্বনির আবির্ভাব হয়, তাকেই বিসর্গ সন্ধি বলে। নিচে বিসর্গ সন্ধির নিয়মাবলী দেওয়া হলো।
৩.২.১। পূর্ব পদের অঃ থাকলে এবং পর পদে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে, এবং উভয় মিলে ও-কার হয় এবং উক্ত ও-কার পূর্ব পদে যুক্ত হয়।
উদাহরণ :         অঃ +গ =ও         মনঃ +গত =মনোগত
অঃ +জ =ও         সদ্যঃ +জাত =সদ্যোজাত
অঃ +দ =ও         ত্রয়ঃ +দশ =ত্রয়োদশ
অঃ +ধ =ও         তিরঃ +ধান =তিরোধান
অঃ +ন =ও          মনঃ +নয়ন =মনোনয়ন
অঃ +ব =ও         সরঃ +বর =সরোবর
অঃ +ভ =ও         মনঃ +ভাব =মনোভাব
অঃ +ম =ও         অধঃ +মুখ =অধোমুখ।
অঃ +য =ও         মনঃ +যোগ =মনোযোগ
অঃ +র =ও         মনঃ +রম =মনোরম।
অঃ +ল =ও         যশঃ +লাভ =যশোলাভ
অঃ +হ =ও         পুরঃ +হিত =পুরোহিত
৩.২.২। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে অ থাকলে এবং পর পদের অ ব্যতীত অন্য স্বরবর্ণ থাকলে ঃ লোপ পায় এবং সন্ধি না হয়ে, পূর্বপদ ও পরপদ পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ :          অঃ +আ =অআ        মনঃ +আশা =মন-আশা
অঃ +ই =অই           যশঃ +ইচ্ছা =যশ-ইচ্ছা
অঃ +উ =অউ          সদ্যঃ +উল্লিখিত =সদ্য-উল্লিখিত
অঃ +এ =অএ         অতঃ +এব =অতএব
৩.২.৩। পূর্ব পদের বিসর্গের পূর্বে ই বা উ থাকলে এবং পর পদের প্রথম বর্ণ র হলে, পূর্বপদের ই=ঈ বা উ=ঈ হয় এবং পরপদের র অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণ :         ইঃ + র =ঈর         নিঃ +রব =নীরব।
উঃ + র =ঊর         চক্ষুঃ +রোগ =চক্ষূরোগ
৩.২.৪। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ থাকলে, পরপদে র্ যুক্ত হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত স্বরবর্ণ প্রকাশিত হয়।
উদাহরণ :         ঃ + অ =র্অ>র         নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা       নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি         জ্যোতিঃ +ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + ঈ =র্ঈ>রী         অন্তঃ + ঈক্ষ =অন্তরীক্ষ
ঃ + উ =র্উ>রু         চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + ঊ =র্ঊ>রূ         দুঃ + উহ =দুরূহ
৩.২.৫। পূর্ব পদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে বর্গের স্বরবর্ণ, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পর থাকলে অ-কারের পরস্থিত র-জাত বিসর্গের স্থানে র্ হয় এবং তা পরপদের আদ্যবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
উদাহরণ :         ঃ + অ =র্অ>র         নিঃ +অবধি =নিরবধি।
ঃ + আ =র্আ>রা       নিঃ +আকার =নিরাকার।
ঃ + ই =র্ই>রি         জ্যোতিঃ +ইন্দ্র = জ্যোতিরিন্দ্র
ঃ + উ =র্উ>রু         চক্ষুঃ +উন্মীলন>চক্ষুরুন্মীলন
ঃ + গ =র্গ              নিঃ +গত =নির্গত।
ঃ + ঘ =র্ঘ              দুঃ +ঘটনা =দুর্ঘটনা।
ঃ+ জ =র্জ              দুঃ +জন =দুর্জন।
ঃ + ঝ =র্ঝ             নিঃ +ঝর =নিঃর্ঝর
ঃ + দ =র্দ              নিঃ +দিষ্ট =দুর্জন।
ঃ + ধ =র্ধ              অন্তঃ +ধান =অন্তর্ধান।
ঃ + ন =র্ন>র্ণ          নিঃ +নয় =নির্ণয়
ঃ + ব =র্ব              দুঃ +বহ =দুর্বহ।
ঃ + ভ =র্ভ             দুঃ +ভাগ্য =দুর্ভাগ্য
ঃ + ম =র্ম             নিঃ +মান =নির্মাণ
ঃ + য =র্য             নিঃ +যাতন =নির্যাতন
ঃ + ল =র্ল             নিঃ +লজ্জ =নির্লজ্জ
ঃ + হ =র্হ             অন্তঃ +হিত =অন্তর্হিত
৩.২.৬। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে চ ও ছ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ শ হয়।
উদাহরণ :         ঃ + চ =শ             নিঃ +চয় = নিশ্চয়
ঃ + ছ =শ            শিরঃ + ছেদ = শিরোশ্ছেদ
৩.২.৭। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে ট ও ঠ থাকলে পূর্বপদের বিসর্গ ষ হয়। এবং পরপদের ট বা ঠ উক্ত ষ-এর সাথে যুক্ত বর্ণ তৈরি করে।
উদাহরণ :         ঃ + ট =ষ্ট             চতুঃ +টয় = চতুষ্টয়
ঃ + ঠ =ষ্ঠ             নিঃ +ঠুর = নিষ্ঠুর
৩.২.৮। পূর্বপদে ই বা উ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ ষ-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ :         ইঃ + ক =ষ্ক         আবিঃ +কার =আবিষ্কার
ইঃ + প =ষ্প         নিঃ +পত্তি =নিষ্পত্তি
ইঃ + ফ =ষ্ফ         নিঃ +ফল =নিষ্ফল
উঃ + ক =ষ্ক         দুঃ +কৃতি =দুষ্কৃতি
উঃ + প =ষ্প         চতুঃ +পদ =চতুষ্পদ
৩.২.৯। পূর্বপদে অ বা আ যুক্ত বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, খ, প, ফ পরে থাকলে, বিসর্গ স-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ :         অঃ +ক =স্ক         পুরঃ + কার =পুরস্কার
অঃ +প =স্প        বাচঃ +পতি =বাচস্পতি
আঃ +ক =স্ক         ভাঃ + কর =ভাস্কর
৩.২.১০। পূর্বপদে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক, ক্ষ, খ, প, ফ, র, শ, স থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না।
উদাহরণ :         ঃ + ক =ঃক     অন্তঃ +করণ =অন্তঃকরণ
ঃ + খ =ঃখ       দুঃ + খ =দুঃখ
ঃ + প =ঃপ      অধঃ +পাত =অধঃপাত
ঃ + র =ঃর       অন্তঃ +রাষ্ট্রীয় =অন্তঃরাষ্ট্রীয়
ঃ + শ =ঃশ       দুঃ +শাসন =দুঃশাসন
ঃ + স =ঃস       নিঃ +সন্দেহ =নিঃসন্দেহ
৩.৩.১১। পূর্বপদের শেষে বিসর্গ থাকলে এবং পরপদে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গের লোপ হয়।
উদাহরণ :         ঃ +স্ত =স্ত          নিঃ +স্তব্ধ =নিঃস্তব্ধ
ঃ +স্থ =স্থ          অন্তঃ +স্থ =অন্তঃস্থ
ঃ +স্প =স্প       নিঃ+স্পন্দ =নিঃস্পন্দ
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি :     আ +চর্য =আশ্চর্য            আ +পদ =আস্পদ
অহঃ +কর =অহঙ্কর         অহঃ +পতি =অহস্পতি>অহর্পতি
অহঃ +রাত্র =অহোরাত্রি     অহন্ +অহন্ =অহরহঃ
অহন্ +নিশি =অহর্নিশি     গীঃ +গীত =গীস্পতি
গো +পদ =গোস্পদ         তদ্ +কর =তস্কর
দিব্ +লোক =দ্যূলোক      পতত্ +অঞ্জলি =পতঞ্জলি
পশ্চাত্ +অর্ধ =পশ্চার্থ       পুংস্ +জাতি =পুংজাতি
পুংস্ +লিঙ্গ =পুংলিঙ্গ        বন +পতি =বনস্পতি
বৃহত্ +পতি =বৃহস্পতি     ষট্ +দশ =ষোড়শ
হরি +চন্দ্র =হরিশ্চন্দ্র


বাংলা শব্দের সন্ধি
খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলাতে এই সন্ধি ঘটে থাকে দুই ভাবে। বাংলা স্বরসন্ধি ও বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি।
১। বাংলা স্বরসন্ধি
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা স্বরসন্ধি বলা হয়। নিচে বাংলা স্বরসন্ধি সমূহ দেখানো হলো-
বাংলা স্বরসন্ধির সূত্রাবলী
১। অ + অ =আ পোস্ট +অফিস =পোস্টাফিস
২। অ + আ =আ থাল + আ =থালা
৩। অ + ই =ই তাঁত + ই =তাঁতি
৪। অ + উ =উ দুষ্ট + উ =দুষ্টু
৫। অ + এ =এ শত + এক =শতেক
৬। আ + আ =আ শাঁখা + আরি =শাঁখারি
৭। আ + ই =এ যা + ইচ্ছেতাই =যাচ্ছেতাই
৮। আ + ঈ =এ ঢাকা + ঈশ্বর =ঢাকেশ্বর
৯। আ + উ =উ মিথ্যা + উক =মিথ্যুক
১০। আ + এ =য় আমা + এ =আমায়
১১। ই + ই =ই ঘড়ি + ইয়াল =ঘড়িয়াল
১২। ই + এ = য় দই + এ =দইয়ে
১৩। ই + ও = ইও বাড়ি + ওয়ালা =বাড়িওয়ালা
১৪। ঈ + উ =ও ঈদ + উৎসব =ঈদোৎসব
১৫। উ + আ = য়া বাবু + আনা = বাবুয়ানা
১৬। এ + আ = এ মেয়ে + আলি = মেয়েলি
১৭। এ + এ = এ বোঁদে + এর = বোঁদের
১৮। ও + আ =য়া শো + আ = শোয়া
১৯। ও + এ =য় আলো + এ = আলোয়
ব্যতিক্রম : কুড়ি + এক = কুড়িক

২। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি :
বাংলা শব্দের সংযোজনের সময় যদি স্বরবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জনবর্ণের কিম্বা ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিল ঘটে তবে তাকে বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধিজাত ধ্বনি গুলো সংস্কৃত সন্ধির অনুরূপ নয়। এক্ষেত্রে বাঙলাতে যে সন্ধিজাত ধ্বনি পাই তার সবগুলোই বাঙলার নিজস্ব রীতিতে উচ্চারিত হয়। ফলে সব সময় বাংলা সন্ধি সুনির্দিষ্ট কোন রীতিকে অনুসরণ করে না। তারপরেও কিছু কিছু সাধারণ রীতি অনুসৃত হয়, তা পর্যায়ক্রমে নিচে আলোচনা করা হলো।
২.১। বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধি :
বাংলা স্বর-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষে স্বরধ্বনিযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনধ্বনি হলে, কখনো পূর্বপদের স্বরধ্বনি লোপ পায়।
উদাহরণ : বড় + দাদা =বড়্দাদা (অ লোপ)
মিশি +কালো =মিশ্‌কালো (ই লোপ)
পেটে +ব্যথা =পেটব্যথা (এ লোপ)
২.২। বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-স্বর সন্ধির সূত্র : পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনধ্বনি হলে এবং পরপদের আদ্য বর্ণ স্বরবর্ণ হলে, উক্ত স্বরবর্ণ অবিকৃতভাবে পূর্বপদের শেষ বর্ণে যুক্ত হয়।
উদাহরণ : এক + এক =একেক
কয় + এক =কয়েক
তখন + ই =তখনই
মাস + এক =মাসেক
২.৩। বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধি
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ১। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত, দ থাকলে এবং পরের বর্ণে জ থাকলে, জ্জ হয়।
উদাহরণ : ত্ +জ =জ্জ নাত্ +জন =নাজ্জামাই
দ্ +জ =জ্জ বদ্ +জাত =বজ্জাত
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ২। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি চ-বর্গীয় হলে এবং পরপদে জ, শ, ষ, স থাকলে তা দ্বিত্ব হয়।
উদাহরণ : চ্ +জ =জ্জ পাঁচ্ +জন =পাঁজ্জন>পাজ্জ্ন
চ্ +শ =শ্‌‌‌‌শো পাঁচ্ +শ =পাঁশ্‌শো
চ্ +স =স্‌স পাঁচ +সের =পাঁস্‌সের
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৩। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ত থাকলে এবং পরপদে দ=দ্দ এবং স থাকলে চ্ছ হয়।
উদাহরণ : ত্ +দ =দ্দ তৎ +দিন =তদ্দিন
ত্ +স =চ্ছ উৎ +সন্ন =উচ্ছন্ন
বাংলা ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সন্ধির সূত্র : ৪। পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে এবং পরের বর্ণটি ব্যঞ্জনবর্ণ হলে, সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ দুটি পাশাপাশি বসে।
উদাহরণ : শাক্ +ভাত =শাকভাত।

সমীভবন
দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’।  সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।]
১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।
২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই
৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি
৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা
৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি



সন্ধি

সন্ধি
পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো।
সন্ধি ধ্বনির মিলন : সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।
সন্ধির উদ্দেশ্য : সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)
সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে দেয়া হলো-
নাম
অঘোষ
ঘোষ
নাসিক্য
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
ক-বর্গীয় ধ্বনি   (কণ্ঠ্য ধ্বনি)
চ-বর্গীয় ধ্বনি   (তালব্য ধ্বনি)
ট-বর্গীয় ধ্বনি   (মূর্ধন্য ধ্বনি)
ত-বর্গীয় ধ্বনি   (দন্ত্য ধ্বনি)
প-বর্গীয় ধ্বনি   (ওষ্ঠ্য ধ্বনি)

রূপতত্ত্বের বিচারে সন্ধি হল- সম-Öধা (ধারণ করা) +ই (কি), ভাববাচ্য। এর সমার্থ হলে— সংযোগ, সংশ্লেষ, মিলন। পাণিনীয় ব্যাকরণের সূত্রে বাংলা ব্যাকরণে এর প্রবেশ ঘটেছে। গোড়ার দিকে বাংলা ব্যাকরণে তৎসম শব্দের সন্ধি প্রবেশ করেছিল প্রত্যক্ষভাবে সংস্কৃত ব্যাকরণে অনুলিপি হিসাবে। পরে বাংলা ব্যাকরণে বাংলা সন্ধি যুক্ত হয়েছে, বাংলা উচ্চারণ ও বানান রীতি অনুসারে।
পাণিনীয় ব্যাকরণ মতে- পরঃ সন্নিকর্ষঃ সংহিতা (১।৪।১০৯)। বিদ্যাসাগরের সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী (ডিসেম্বর ২০০৩) -এর বাংলা বর্ণনায় বলা হয়েছে— ‘দুই বর্ণ পরস্পর অত্যন্ত সন্নিহিত হইলে উভয়ে মিলিত হয়’। লক্ষ্যণীয় বিষয় পাণিনী সংজ্ঞায় যাকে সংহিতা বলা হয়েছে— তাই বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি। সংস্কৃত ব্যাকরণে প্রত্যক্ষভাবে সন্ধিতে উচ্চারণের বিষয়টি পাওয়া যায় না।
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতও পাণিনি’র অনুরূপ (..বর্ণদ্বয়ের মিলনকে সন্ধি বলে। বাঙ্গালা ব্যাকরণ (মাওলা ব্রাদ্রাস, ফাল্গুন ১৩৪২ )। এই সন্ধির সংজ্ঞার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (বৈশাখ ১৩৯৬) –এ। এই ব্যাকরণে সন্ধির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘দুইটি (বা ক্বচিৎ দুইটির অধিক) ধ্বনি একই পদে, অথবা দুইটি বিভিন্ন পদে, পাশাপাশি অবস্থান করিলে, দ্রুত উচ্চারণের সময় তাহাদের মধ্যে আংশিক বা পূর্ণভাবে মিলন হয়; কিংবা একটির লোপ হয়, অথবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এইরূপ মিলন বা পরিবর্তনকে সন্ধি বলে।
সুনীতিকুমারের এই সংজ্ঞায় ধ্বনিটাই প্রধান। কিন্তু বাস্তবে এই সংজ্ঞা আমাদের কিছুটা বিভ্রান্ত করে। ধরা যাক- সন্ধির নিয়মে বলা হচ্ছে, অ +অ=আ। কিন্তু বাস্তবে অ+অ হওয়া উচিৎ অঅ। কারণ, অনন্ত কাল ধরে চেষ্টা করলেও ‘অ +অ’ কে আ ধ্বনিতে পরিণত করা যায় না। কিন্তু যখন বিশেষভাবে বলে দেওয়া হবে যে- ‘অ +অ’ যুক্ত করলে আ হবেই, তখন ধ্বনির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করে, বলতেই হবে, অ +অ=আ। এর ফলে ধ্বনিতত্ত্বে সন্ধি একটি কৃত্রিম রীতি হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রকৃষ্ট বিচারে দুই বর্ণের মিলনে যখন যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, প্রাথমিকভাবে যুক্তবর্ণ বানানরীতিকে প্রকাশ করে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন তা ধ্বনির দ্বারা যখন প্রকাশিত হয়, তখন সন্ধির কৃত্রিম রীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। বানানরীতির বিষয় এখানে যুক্ত করায়- আপত্তি উঠতেই পারে। তা হলে- বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। ধরা যাক একটি শব্দ ‘নবান্ন’। স্বরসন্ধির নিয়মে এর বিশ্লেষণ হবে—
নব + অন্ন =নবান্ন
প্রাথমিকভাবে বানানরীতি অনুসারে বলা যেতে পারে—
১। পূর্ব-পদের শেষ বর্ণটি যদি কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
২। এবং পরপদের প্রথম বর্ণ যদি অ বা কারচিহ্ন বর্জিত হসন্তহীন ব্যঞ্জনবর্ণ হয়,
৩। তবে প্রথম পদের শেষবর্ণে আকার যুক্ত হবে। যেমন—
  • নব (শেষ বর্ণ কারচিহ্ন বর্জিত এবং হসন্তহীন ব্যঞ্জনধ্বনি) + অন্ন (প্রথম বর্ণ অ) =ব (প্রথম পদের শেষবর্ণ) +আ=বআ
৪। এই আ, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে আ-কার হিসাবে যুক্ত হবে।
  • নব +অন্ন=নবআন্ন>নবান্ন।
এখানে উৎপন্ন নবান্ন শব্দের ‘বা’ ধ্বনির ব্যাখ্যাকে ধ্বনির বিশ্লেষণ করে, যে সংজ্ঞাই দেওয়া হোক না কেন, তা হবে একটি কৃত্রিম পদ্ধতি। লক্ষ্য করুন, এই বিচারে উচ্চারণ ত্রুটির চেয়ে আমরা বানানের শুদ্ধতাকে প্রাধান্য দেই বেশি। এক্ষেত্রে আর একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। নমুনা- শব্দটি ‘রবীন্দ্র’ । বাংলা উচ্চারণরীতিতে ‘ই’ ঈকারে প্রভেদ নেই। তাই ‘রবীন্দ্র’ আর ‘রবিন্দ্র’ দুটোর উচ্চারণ হবে একই। সন্ধির নিয়মে আমরা যদি বিষয়টি পরপর লিখি, তাহলে বিশ্লেষণটা নিচের মতো হতে পারে।
  • রবি + ইন্দ্র=রবীন্দ্র (বানানরীতে শুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্‌.দ্রো )
  • রবি + ইন্দ্র=রবিন্দ্র (বানানরীতে অশুদ্ধ, উচ্চারণরীতিতে হবে -রো.বিন্‌.দ্রো)
লক্ষ্য করুন। ‘রবীন্দ্র’ ও ‘রবিন্দ্র’ দুটির উচ্চারণ একই। তাই সন্ধির সূত্র এখানে কোন কাজই করছে না। কিন্তু বানান রীতিতে সন্ধির রীতি (ই +ই=ঈ) অপরিহার্য।
সন্ধির সূত্রে বাংলাতে বানানরীতির পাশাপাশি ধ্বনি তত্ত্বের যে কৃত্রিম রীতি পাই, তারই আলোকে আমি সন্ধির প্রথাগত বিষয়গুলো নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। বলাই বাহুল্য বাংলা ধ্বনিতত্ত্বের সন্ধির সূত্রগুলো প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে না বটে, কিন্তু সন্ধিজাত শব্দের উচ্চরণে কৃত্রিম ধ্বনিরীতিকে বিশেষ নিয়ম হিসাবে মানা যেতে পারে।
সন্ধির প্রকারভেদ
ধ্বনির মিলনকে সন্ধি হিসাবে বিবেচনা করলেও প্রথমেই তা বিচার করতে হবে, মৌলিক ধ্বনির বিচারে। ধ্বনির বিচারে প্রাথমিক প্রধান দুটি ভাগ হলো- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। যদিও বাংলাতে মৌলিক স্বরধ্বনি সংখ্যা রয়েছ মাত্র সাতটি। কিন্তু প্রচলিত সন্ধির নিয়মাবলীর ভিতরে ১১টি স্বরবর্ণেরই ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই তালিকায় অবশ্যই এ্যা নামক মৌলিকধ্বনিটি নেই। কারণ এ্যা নামক কোন বর্ণ বাংলা বর্ণমালায় নেই। কিন্তু সন্ধিজাত শব্দে পাওয়া যায়।
যেমন — অতি + আচার =অত্যাচার।
সংস্কৃত তথা তৎসম সন্ধিতে যে নিয়মে নূতন শব্দ তৈরি হয়, অ-তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে তা খাটে না। মূলত এই অ-তৎসম শব্দ বাংলা সন্ধি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই সব বিবেচনায় গোড়াতেই সন্ধিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটো হলো-
  1. সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সন্ধি
  2. বাংলা  শব্দের সন্ধি

Friday, 18 December 2015

সন্ধি

সন্ধি : পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। অর্থাৎ, এখানে দুটি ধ্বনির মিলন হবে, এবং সেই দুটি ধ্বনি পাশাপাশি অবস্থিত হবে। যেমন, ‘নর + অধম = নরাধম’। এখানে ‘নর’র শেষ ধ্বনি ‘অ’ (ন+অ+র+ অ), এবং ‘অধম’র প্রথম ধ্বনি ‘অ’। এখানে ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হয়েছে। অর্থাৎ পাশাপাশি অবস্থিত দুইট ধ্বনি ‘অ’ ও ‘অ’ মিলিত হয়ে ‘আ’ হলো।

সন্ধি ধ্বনির মিলন : সন্ধি নতুন শব্দ তৈরির একটি কৌশল, তবে এখানে সমাসের মতো নতুনভাবে সম্পূর্ণ শব্দ তৈরি হয় না। কেবল দুটো শব্দ মিলিত হওয়ার সময় পাশাপাশি অবস্থিত ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। এই দুটি ধ্বনির মিলনের মধ্য দিয়ে দুটি শব্দ মিলিত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরি করে। অর্থাৎ শব্দ দুটি মিলিত হয় না, ধ্বনি দুটি মিলিত হয়। উল্লেখ্য, একাধিক শব্দের বা পদের মিলন হলে তাকে বলে সমাস।

সন্ধির উদ্দেশ্য : সন্ধি মূলত দুটো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সুতরাং যেখানে সন্ধির মাধ্যমে এই দুটি উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, সেখানেই কেবল সন্ধি করা যাবে। এগুলো হলো-
১. সন্ধির ফলে উচ্চারণ আরো সহজ হবে (স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা),
২. সন্ধি করার পর শুনতে আরো ভালো লাগবে (ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন)

[সন্ধি পড়ার জন্য স্পর্শ বর্ণের তালিকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ধ্বনি প্রকরণ ও উচ্চারণ বিধির অন্তর্গত তালিকাটি এখানে আবারো দেয়া হলো-

নাম
অঘোষ
ঘোষ
নাসিক্য
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
অল্পপ্রাণ
মহাপ্রাণ
ক-বর্গীয় ধ্বনি   (কণ্ঠ্য ধ্বনি)





চ-বর্গীয় ধ্বনি   (তালব্য ধ্বনি)





ট-বর্গীয় ধ্বনি   (মূর্ধন্য ধ্বনি)





ত-বর্গীয় ধ্বনি   (দন্ত্য ধ্বনি)





প-বর্গীয় ধ্বনি   (ওষ্ঠ্য ধ্বনি)






সন্ধি প্রথমত ২ প্রকার- বাংলা শব্দের সন্ধি ও তৎসম সংস্কৃত শব্দের সন্ধি।

বাংলা শব্দের সন্ধি

খাঁটি বাংলা শব্দ বা তদ্ভব শব্দের যে সন্ধি, সেগুলোকেই বাংলা শব্দের সন্ধি বলে। বাংলা শব্দের সন্ধি ২ প্রকার- স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।

স্বরসন্ধি

স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বলে স্বরসন্ধি।

বাংলা শব্দের স্বরসন্ধিতে দুটো সন্নিহিত স্বরের একটি লোপ পায়। যেমন,
অ+এ = এ (অ লোপ)
শত+এক = শতেক
কত+এক = কতেক

আ+আ = আ (একটা আ লোপ)
শাঁখা+আরি =শাঁখারি
রূপা+আলি = রূপালি

আ+উ = উ (আ লোপ)
মিথ্যা+উক = মিথ্যুক
হিংসা+উক = হিংসুক
নিন্দা+উক = নিন্দুক
ই+এ = ই (এ লোপ)
কুড়ি+এক = কুড়িক
ধনি+ইক = ধনিক
গুটি+এক = গুটিক
আশি+এর = আশির

ব্যঞ্জনসন্ধি

স্বর আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরধ্বনিতে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।

খাঁটি বাংলা শব্দের ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত ধ্বনি পরিবর্তনের সমীভবনের নিয়ম মেনে হয়। এবং ব্যঞ্জনসন্ধির ফলে সৃষ্ট শব্দগুলো মূলত কথ্যরীতিতেই সীমাবদ্ধ।

[সমীভবন : দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’।  সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ, ইত্যাদি।
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ, ইত্যাদি।
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত), ইত্যাদি।]

১. অঘোষ ধ্বনির পর ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ ধ্বনিটিও ঘোষ ধ্বনি হয়ে যাবে। যেমন, ছোট+দা = ছোড়দা।

২. হলন্ত র (র্) -এর পরে অন্য কোন ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে ‘র্’ লুপ্ত হবে, পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি দ্বিত্ব হবে। যেমন, আর্+না = আন্না, চার্+টি = চাট্টি, ধর্+না = ধন্না, দুর্+ছাই = দুচ্ছাই

৩. ত-বর্গীয় ধ্বনির (ত, থ, দ, ধ, ন) পরে চ-বর্গীয় ধ্বনি (চ, ছ, জ, ঝ, ঞ) আসলে আগের ধ্বনি লোপ পায়, পরের ধ্বনি (চ-বর্গীয় ধ্বনি) দ্বিত্ব হয়। যেমন, নাত্+জামাই = নাজ্জামাই, বদ্+জাত = বজ্জাত, হাত+ছানি = হাচ্ছানি

৪. ‘প’ এর পরে ‘চ’ এলে আর ‘স’ এর পরে ‘ত’ এলে ‘চ’ ও ‘ত’ এর জায়গায় ‘শ’ হয়। যেমন, পাঁচ+শ = পাঁশশ, সাত+শ = সাশশ, পাঁচ+সিকা = পাঁশশিকা

৫. হলন্ত ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরধ্বনিটি লোপ পাবে না। যেমন, বোন+আই = বোনাই, চুন+আরি = চুনারি, তিল+এক = তিলেক, বার+এক = বারেক, তিন+এক = তিনেক

৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন, কাঁচা+কলা = কাঁচকলা, নাতি+বৌ = নাতবৌ, ঘোড়া+দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া+গাড়ি = ঘোড়গাড়ি

তৎসম শব্দের সন্ধি

তৎসম শব্দ অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, সে সব শব্দের যে সন্ধি হয়, তাকে বলে তৎসম শব্দের সন্ধি। মূলত সন্ধি বলতে এই তৎসম শব্দের সন্ধিকেই বোঝানো হয়। বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের তৎসম শব্দের সন্ধি হয়- স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি।

স্বরসন্ধি

স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির সন্ধি হলে তাকে বলে স্বরসন্ধি। নিচে স্বরসন্ধির নিয়মগুলো দেয়া হলো-

১. ‘অ/আ’ এরপরে ‘অ/আ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘আ’ হয় এবং তা প্রথম ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+অ = আ
নর+অধম = নরাধম
প্রাণ+অধিক = প্রাণাধিক
হিম+অচল = হিমাচল
হস্ত+অন্তর = হস্তান্তর

হিত+অহিত = হিতাহিত



অ+আ = আ
হিম+আলয় = হিমালয়
দেব+আলয় = দেবালয়
রত্ন+আকর = রত্নাকর
সিংহ+আসন= সিংহাসন
আ+অ = আ
যথা+অর্থ = যথার্থ
আশা+অতীত = আশাতীত
মহা+অর্ঘ = মহার্ঘ
কথা+অমৃত = কথামৃত
আ+আ = আ
বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়
কারা+আগার = কারাগার
মহা+আশয় = মহাশয়
সদা+আনন্দ = সদানন্দ












২. ‘অ/আ’ এরপরে ‘ই/ঈ’ থাকলে উভয় মিলে ‘এ’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+ই = এ
শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা
পূর্ণ+ইন্দু = পূর্ণেন্দু
স্ব+ইচ্ছা = স্বেচ্ছা
নর+ইন্দ্র = নরেন্দ্র
অ+ঈ = এ
পরম +ঈশ = পরমেশ
নর+ঈশ = নরেশ


আ+ই = এ
যথা+ইষ্ট = যথেষ্ট



আ+ঈ = এ
মহা+ঈশ = মহেশ
রমা+ঈশ = রমেশ



৩. ‘অ/আ’ এরপরে ‘উ/ঊ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ও’ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+উ = ও
সূর্য+উদয় = সূর্যোদয়
নীল+উৎপল = নীলোৎপল
ফল+উদয় = ফলোদয়
হিত+উপদেশ = হিতোপদেশ
পর+উপকার = পরোপকার
প্রশ+উত্তর = প্রশ্নোত্তর

অ+ঊ = ও
গৃহ+ঊর্ধ্ব = গৃহোর্ধ্ব
চল+ঊর্মি = চলোর্মি
নব+ঊঢ়া = নবোঢ়া

আ+উ = ও
যথা+উচিত = যথোচিত
মহা+উৎসব = মহোৎসব
যথা+উপযুক্ত = যথোপযুক্ত

আ+ঊ = ও
গঙ্গা+ঊর্মি = গঙ্গোর্মি




৪. অ/আ এরপরে ঋ কার থাকলে উভয়ে মিলে অর হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+ঋ = অর
দেব+ঋষি = দেবর্ষি
অধম +ঋণ = অধমর্ণ
উত্তম+ঋণ = উত্তমর্ণ

আ+ঋ = অর
মহা+ঋষি = মহর্ষি
রাজা+ঋষি = রাজর্ষি



৫. অ/আ এরপরে ঋত থাকলে অ/আ ও ঋত-র ঋ মিলে আর হয় এবং আর’, ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+ঋ (ঋত) = আর
শীত+ঋত = শীতার্ত
ভয়+ঋত = ভয়ার্ত


আ+ ঋ (ঋত) = আর
তৃষ্ণা+ঋত = তৃষ্ণার্ত
ক্ষুধা+ঋত = ক্ষুধার্ত



৬. অ/আ এরপরে এ/ঐ থাকলে উভয়ে মিলে ঐ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+এ = ঐ
জন+এক = জনৈক
হিত+এষী = হিতৈষী
সর্ব+এব = সর্বৈব

অ+ঐ = ঐ
মত+ঐক্য = মতৈক্য
অতুল+ঐশ্বর্য = অতুলৈশ্বর্য


আ+এ = ঐ
সদা+এব = সদৈব



আ+ঐ = ঐ
মহা+ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য




৭. অ/আ এরপরে ও/ঔ থাকলে উভয়ে মিলে ঔ হয় এবং তা ‘অ/আ’-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অ+ও = ঔ
বন+ওষধি = বনৌষধি



অ+ঔ = ঔ
পরম+ঔষধ = পরমৌষধ



আ+ও = ঔ
মহা+ওষধি = মহৌষধি



আ+ঔ = ঔ
মহা+ঔষধ = মহৌষধ




৮. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ থাকলে উভয়ে মিলে ঈ হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ই+ই = ঈ
অতি+ইত = অতীত
গিরি+ইন্দ্র= গিরীন্দ্র
অতি+ইব= অতীব
প্রতি+ইত= প্রতীত
রবি+ইন্দ্র = রবীন্দ্র



ই+ঈ = ঈ
পরি+ঈক্ষা = পরীক্ষা
প্রতি+ঈক্ষা= প্রতীক্ষা


ঈ+ই = ঈ
সতী+ইন্দ্র = সতীন্দ্র
মহী+ইন্দ্র = মহীন্দ্র


ঈ+ঈ = ঈ
সতী+ঈশ = সতীশ
ক্ষিতী+ঈশ= ক্ষিতীশ
শ্রী+ঈশ = শ্রীশ
পৃথ্বী+ঈশ = পৃথ্বীশ
দিললী+ঈশ্বর = দিল্লীশ্বর




৯. ই/ঈ এরপরে ই/ঈ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে ই/ঈ-র জায়গায় য (য-ফলা,্য) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

ই+অ = য-ফলা + অ
অতি+অন্ত = অত্যন্ত
প্রতি+অহ = প্রত্যহ
অতি+অধিক = অত্যধিক
আদি+অন্ত = আদ্যন্ত
যদি+অপি = যদ্যপি
পরি+অন্ত = পর্যন্ত
ই+আ = য-ফলা + আ
ইতি+আদি = ইত্যাদি
প্রতি+আশা = প্রত্যাশা
প্রতি+আবর্তন = প্রত্যাবর্তন
অতি+আশ্চর্য = অত্যাশ্চর্য
ই+উ = য-ফলা+ উ
অতি+উক্তি = অত্যুক্তি
অভি+উত্থান = অভূত্থান
অগ্নি+উৎপাত = অগ্নুৎপাত
প্রতি+উপকার = প্রত্যুপকার
ই+ঊ = য-ফলা+ ঊ
প্রতি+উষ = প্রত্যূষ



ঈ+আ= য-ফলা+ আ
মসী+আধার = মস্যাধার



ই+এ = য-ফলা+এ
প্রতি+এক = প্রত্যেক



ঈ+অ = য-ফলা+অ
নদী+অম্বু = নদ্যম্বু




১০. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ থাকলে উভয়ে মিলে ঊ হয় এবং তা উ/ঊ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উ+উ = ঊ
মরু+উদ্যান = মরূদ্যান



উ+ঊ = ঊ
বহু+ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব



ঊ+উ = ঊ
বধূ+উৎসব = বধূৎসব



ঊ+ঊ = ঊ
ভূ+ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব




১১. উ/ঊ এরপরে উ/ঊ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনি থাকলে উ/ঊ-র জায়গায় ব (ব-ফলা,  ব) হয় এবং তা ই/ঈ-র আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উ+অ = ব-ফলা+অ
সু+অল্প = স্বল্প
পশু+অধম = পশ্বধম
অনু+অয় = অন্বয়
মনু+অন্তর = মন্বন্তর
উ+আ = ব-ফলা+আ
সু+আগত = স্বাগত
পশু+আচার = পশ্বাচার


উ+ই = ব-ফলা+ই
অনু+ইত = অন্বিত



উ+ঈ = ব-ফলা+ঈ
তনু+ঈ = তন্বী



উ+এ = ব-ফলা+এ
অনু+এষণ = অন্বেষণ




১২. ঋ এরপরে ঋ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকলে ঋ এর জায়গায় র (র-ফলা,  ্র ) এবং র-ফলা ঋ এর আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন, পিতৃ(প+ই+তঋ) + আলয় = পিত্রালয়
   পিতৃ        + আদেশ = পিত্রাদেশ

১৩. (ক) এ/ঐ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘এ’ এর জায়গায় ‘অয়’ এবং ‘ঐ’ এর  জায়গায় ‘আয়’ হয়।     

এ+অ = অয়+অ
নে+অন = নয়ন
শে+অন = শয়ন
ঐ+অ = আয়+অ
নৈ+অক = নায়ক
গৈ+অক = গায়ক

     (খ) ও/ঔ এরপরে অন্য কোন স্বরধ্বনি আসলে ‘ও’ এর জায়গায় ‘অব’ এবং ‘ঔ’ এর জায়াগায় ‘আব’ হয়।

ও+অ = অব+অ
পো+অন = পবন
লো+অন = লবন

ঔ+অ = আব+অ
পৌ+অক = পাবক


ও+আ = অব+আ
গো+আদি = গবাদি


ও+এ = অব+এ
গো+এষণা = গবেষণা


ও+ই = অব+ই
পো+ইত্র = পবিত্র


ঔ+ই = আব+ই
নৌ+ইক = নাবিক


ঔ+উ = আব+উ
ভৌ+উক = ভাবুক



১৪. যেসব স্বরসন্ধি নিয়ম মানে না, নিয়ম ভেঙে সন্ধি হয় তাদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘কুল+অটা’ সন্ধি করে হওয়ার কথা ‘কুলাটা’ (অ+অ = আ)। কিন্তু সন্ধি হওয়ার পর তা হয়ে গেছে ‘কুলটা’। তাই এটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন-

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
কুল+অটা = কুলটা (কুলাটা নয়)
গো+অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়)
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়)
অন্য+অন্য = অন্যান্য (অন্যোন্য নয়)
মার্ত+অন্ড = মার্তন্ড (মার্তান্ড নয়)
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন (শুদ্ধৌদন নয়)

ব্যঞ্জনসন্ধি

যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটিও যদি ব্যঞ্জনধ্বনি হয়, তাহলেই সেই সন্ধিকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলা হয়। ব্যঞ্জনসন্ধি ৩ ভাবে হতে পারে-
১. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
২. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি


১. স্বরধ্বনির পর ‘ছ’ থাকলে তা দ্বিত্ব হয়, অর্থাৎ ‘ছ’-র বদলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন-

অ+ছ = চ্ছ
এক+ছত্র = একচ্ছত্র
মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি
অঙ্গ+ছেদ = অঙ্গচ্ছেদ
আলোক+ছটা= আলোকচ্ছটা
প্র+ছদ = প্রচ্ছদ
বৃক্ষ+ছায়া = বৃক্ষছায়া
স্ব+ছন্দ = স্বচ্ছন্দ
আ+ছ = চ্ছ
কথা+ছলে = কথাচ্ছলে
আচ্ছা+দন = আচ্ছাদন


ই+ছ = চ্ছ
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
বি+ছেদ= বিচ্ছেদ
পরি+ছদ = পরিচ্ছদ
বি+ছিন্ন = বিচ্ছিন্ন
প্রতি+ছবি = প্রতিচ্ছবি


উ+ছ = চ্ছ
অনু+ছেদ = অনুচ্ছেদ




ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি


১.ক, চ, ট, ত, প থাকলে এবং তাদের পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ, জ, ড (ড়), দ, ব হয়।
অর্থাৎ অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ কোনো বর্গের প্রথম ধ্বনির (ক, চ, ট, ত, প) পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো সেই বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড (ড়), দ, ব) হয়ে যায়। যেমন-

ক্+অ = গ+অ
দিক্+অন্ত = দিগন্ত


ক্+আ = গ+আ
বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর


ক্+ঈ = গ+ঈ
বাক্+ঈশ = বাগীশ


চ্+অ = জ+অ
ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত


ট্+আ = ড+আ
ষট্+আনন = ষড়ানন


ত্+অ = দ+অ
তৎ+অবধি = তদবধি
কৃৎ+অন্ত = কৃদন্ত

ত্+আ = দ+আ
সৎ+আনন্দ = সদানন্দ


ত্+ই = দ+ই
জগৎ+ইন্দ্র = জগদিন্দ্র


ত্+উ = দ+উ
সৎ+উপায় = সদুপায়
সৎ+উপদেশ = সদুপদেশ

প্+অ = ব+অ
সুপ্+অন্ত = সুবন্ত



ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি


১. ক) ‘ত/দ’ এরপরে ‘চ/ছ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্চ/চ্ছ’ হয়। যেমন-

ত্+চ = চ্চ
সৎ+চিন্তা = সচ্চিন্তা
উৎ+চারণ = উচ্চারণ
শরৎ+চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র
সৎ+চরিত্র = সচ্চরিত্র
সৎ+চিদানন্দ(চিৎ+আনন্দ) = সচ্চিদানন্দ
ত্+ছ = চ্ছ
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ
তৎ+ছবি = তচ্ছবি

দ্+চ = চ্চ
বিপদ+চয় = বিপচ্চয়


দ্+ছ = চ্ছ
বিপদ+ছায়া = বিপচ্ছায়া


   
খ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘জ/ঝ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘জ্জ/জ্ঝ’ হয়। যেমন-

ত+জ = জ্জ
সৎ+জন = সজ্জন
উৎ+জ্বল = উজ্জ্বল
তৎ+জন্য = তজ্জন্য
যাবৎ+জীবন = যাবজ্জীবন
জগৎ+জীবন = জগজ্জীবন

দ+জ = জ্জ
বিপদ+জাল = বিপজ্জাল


ত+ঝ = জ্ঝ
কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা


   
গ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘শ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘চ্ছ’ হয়। যেমন-
ত+শ = চ+ছ = চ্ছ
উৎ+শ্বাস = উচ্ছাস
চলৎ+শক্তি = চলচ্ছক্তি
উৎ+শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল
   
ঘ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ড/ঢ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ড্ড/ড্ঢ’ হয়। যেমন-

ত+ড = ড্ড
উৎ+ডীন = উড্ডীন


ত+ঢ = ড্ঢ
বৃহৎ+ঢক্কা = বৃহড্ডক্কা



ঙ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘হ’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘দ্ধ’ হয়। যেমন-

ত+হ = দ্ধ
উৎ+হার = উদ্ধার
উৎ+হৃত = উদ্ধৃত
উৎ+হত = উদ্ধত
দ+হ = দ্ধ
পদ+হতি = পদ্ধতি
তদ্+হিত = তদ্ধিত

   
চ) ‘ত/দ’ এরপরে ‘ল’ থাকলে উভয়ে মিলে ‘ল্ল’ হয়। যেমন-

ত+ল = ল্ল
উৎ+লাস = উল্লাস
উৎ+লেখ = উল্লেখ
উৎ+লিখিত = উল্লিখিত
উৎ+লেখ্য = উল্লেখ্য
উৎ+লঙ্ঘন = উল্লঙ্ঘন


২. কোনো অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে ঘোষ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি তার নিজের বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ক, চ, ট, ত, প- এদের পরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা য, র, ব থাকলে প্রথম ধ্বনি (ক, চ, ট, ত, প) তার নিজের বর্গের তৃতীয় ধ্বনি (গ, জ, ড, দ, ব) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের প্রথম ধ্বনিগুলোর কোনোটি থাকলে, এবং তার পরে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনিগুলোর কোনোটি বা য, র, ব (এরা সবাই ঘোষ ধ্বনি) আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন-

ক+দ = গ+দ
বাক+দান = বাগদান
বাক+দেবী = বাগ্দেবী

ক+ব = গ+ব
দিক+বিজয় = দিগ্বিজয়


ক+জ = গ+জ
বাক+জাল = বাগ্জাল


ট+য = ড+য
ষট+যন্ত্র = ষড়যন্ত্র


ত+গ = দ+গ
উৎ+গার = উদ্গার
উৎ+গিরণ =উদ্গিরণ
সৎ+গুরু = সদ্গুরু
ত+ঘ = দ+ঘ
উৎ+ঘাটন = উদ্ঘাটন


ত+ভ = দ+ভ
উৎ+ভব = উদ্ভব


ত+য = দ+য
উৎ+যোগ = উদ্যোগ
উৎ+যম = উদ্যম

ত+ব = দ+ব
উৎ+বন্ধন = উদ্বন্ধন


ত+র = দ+র
তৎ+রূপ = তদ্রূপ



৩.নাসিক্য ধ্বনির পরে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আসলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিটি নিজ বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি বা নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের পরে ক, চ, ট, ত, প থাকলে ক, চ, ট, ত, প যথাক্রমে গ, জ, ড, দ, ব অথবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম হয়ে যায়।
অর্থাৎ, বর্গের পঞ্চম/ শেষ ধ্বনির পরে বর্গের প্রথম ধ্বনি আসলে বর্গের প্রথম ধ্বনি তার নিজ বর্গের তৃতীয় বা পঞ্চম/ শেষ ধ্বনি হয়ে যায়।

ক+ন = গ/ঙ+ন
দিক+নির্ণয় = দিগনির্ণয়/ দিঙনির্ণয়


ক+ম = গ/ঙ+ম
বাক+ময় = বাঙময়


ত+ন = দ/ন+ন
জগৎ+নাথ = জগন্নাথ
উৎ+নয়ন = উন্নয়ন
উৎ+নীত = উন্নীত
ত+ম = দ/ন+ম
তৎ+মধ্যে = তদমধ্যে/ তন্মধ্যে
মৃৎ+ময় = মৃন্ময়
তৎ+ময় = তন্ময়
চিৎ+ময় = চিন্ময়

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির চেয়ে নাসিক্য ধ্বনিই অধিক প্রচলিত।

৪. ‘ম’-এর পরে কোনো বর্গীয় ধ্বনি বা স্পর্শ ধ্বনি আসলে ‘ম’ তার পরের ধ্বনির নাসিক্য ধ্বনি হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ম’-এর পরে যে বর্গীয় ধ্বনি আসে, ‘ম’ সেই ধ্বনির বর্গের পঞ্চম ধ্বনি হয়ে যায়।

ম+ক = ঙ+ক
শম+কা = শঙ্কা
ম+ভ = ম+ভ
কিম+ভূত = কিম্ভূত
ম+চ = ঞ+চ
সম+চয় = সঞ্চয়
ম+ন = ন্ন
কিম+নর = কিন্নর
ম+ত = ন+ত
সম+তাপ = সন্তাপ
সম+ন্যাস = সন্ন্যাস
ম+দ = ন+দ
সম+দর্শন = সন্দর্শন
ম+ধ = ন্ধ
সম+ধান = সন্ধান
উল্লেখ্য, আধুনিক বাংলায় ‘ম’-এর পরে ক-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ক-বর্গের নাসিক্য/ পঞ্চম ধ্বনি ‘ঙ’-র বদলে ‘ং’ হয়। যেমন, ‘সম+গত’-এ ‘ম’ ও ‘গ (ক-বর্গীয় ধ্বনি)’ সন্ধি হয়ে ‘ম’, ‘ঙ’ না হয়ে ‘ং’ হয়ে ‘সংগত’। এরকম-
অহম+কার = অহংকার
সম+খ্যা = সংখ্যা

৫. ‘ম’-এর পরে অন্তঃস্থ ধ্বনি (য, র, ল, ব) কিংবা উষ্ম ধ্বনি (শ, ষ, স, হ) থাকলে ‘ম’-এর জায়গায় ‘ং’ হয়।

সম+যম = সংযম
সম+বাদ = সংবাদ
সম+রক্ষণ = সংরক্ষণ
সম+লাপ = সংলাপ
সম+শয় = সংশয়
সম+সার = সংসার
সম+হার = সংহার
বারম+বার = বারংবার
কিম+বা = কিংবা
সম+বরণ = সংবরণ
সম+যোগ = সংযোগ
সম+যোজন = সংযোজন
সম+শোধন = সংশোধন
সর্বম+সহা = সর্বংসহা
স্বয়ম+বরা = স্বয়ম্বরা

উল্লেখ্য, এই নিয়মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম- সম+রাট = সম্রাট।

৬. তালব্য অল্পপ্রাণ ধ্বনির পরে নাসিক্য ধ্বনি আসলে নাসিক্য ধ্বনিটিও তালব্য নাসিক্য ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ, ‘চ/জ’ এর পরে ঙ, ঞ, ণ, ন, ম (নাসিক্য ধ্বনি) থাকলে সেগুলো ‘ঞ’ হয়ে যায়।

চ+ন = চ+ঞ
যাচ+না = যাচ্ঞা
রাজ+নী = রাজ্ঞী

জ+ন = জ+ঞ
যজ+ন = যজ্ঞ



৭. ‘দ/ধ’-এর পরে অঘোষ বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ (অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি) হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’-এর পরে ক, চ, ট, ত, প কিংবা খ, ছ, ঠ, থ, ফ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়।

দ˃ ত
তদ্+কাল = তৎকাল
হৃদ+কম্প = হৃৎকম্প
তদ+পর = তৎপর
তদ+ত্ব = তত্ত্ব
ধ˃ ত
ক্ষুধ+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা



৮. ঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (দ/ধ) এর পরে ‘স’ (দন্ত্য স ধ্বনি) থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় দন্ত্য অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ হয়।
অর্থাৎ, ‘দ/ধ’ এর পরে ‘স’ থাকলে ‘দ/ধ’ এর জায়গায় ‘ত’ হয়। যেমন-
বিপদ+সংকুল = বিপৎসংকুল (‘দ’ এরপরে ‘স’ থাকায় ‘দ’, ‘ত’ হয়ে গেছে)
তদ+সম = তৎসম

৯. ‘ষ’ (মূর্ধণ্য ষ ধ্বনি) এর পরে অঘোষ দন্ত্য ধ্বনি (ত, থ) থাকলে সেগুলো অঘোষ মূর্ধণ্য ধ্বনি (ট, ঠ) হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ‘ষ’ এর পরে ‘ত/থ’ থাকলে সেগুলো যথাক্রমে ‘ট/ঠ’ হয়ে যায়। যেমন-
কৃষ+তি = কৃষ্টি (ষ+ত = ষ+ট)
ষষ+থ = ষষ্ঠ (ষ+থ = ষ+ঠ)

১০. কিছু কিছু সন্ধি কিছু বিশেষ নিয়মে হয়। এগুলোকে বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি বলে।

বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি
উৎ+স্থান = উত্থান
উৎ+স্থাপন = উত্থাপন

পরি+কৃত = পরিষ্কৃত
পরি+কার = পরিষ্কার

সম+কৃত = সংস্কৃত
সম+কৃতি = সংস্কৃতি
সম+কার = সংস্কার

মনে রাখার জন্য : উত্থান, উত্থাপন
পরিষ্কৃত, পরিষ্কার
সংস্কৃত, সংস্কৃতি, সংস্কার

১১. যে সকল ব্যঞ্জনসন্ধি কোনো নিয়ম না মেনে, বরং নিয়মের ব্যতিক্রম করে সন্ধি হয়, তাদেরকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘পতৎ+অঞ্জলি’, এখানে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ‘ত’ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি ‘অ’ এর সন্ধি হয়েছে। সুতরাং, সন্ধির নিয়ম অনুসারে ‘ত’ এর জায়গায় ‘দ’ হওয়ার কথা। তার বদলে একটি ‘ত’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘পতঞ্জলি’। এরকম-

নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
আ+চর্য = আশ্চর্য
গো+পদ = গোষ্পদ
বন+পতি = বনস্পতি
বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি
তৎ+কর = তস্কর
পর+পর = পরস্পর
ষট+দশ = ষোড়শ
এক+দশ = একাদশ
পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি
মনস+ঈষা = মনীষা

মনে রাখার জন্য :   আশ্চর্য, গোষ্পদ
বনস্পতি, বৃহস্পতি
তস্কর, পরস্পর
ষোড়শ, একাদশ
পতঞ্জলি, মনীষা

বিসর্গ সন্ধি

যে দুইটি ধ্বনির মিলনে সন্ধি হবে, তাদের একটি যদি বিসর্গ হয়, তবে তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি ২ ভাবে সম্পাদিত হয়-
১. বিসর্গ + স্বরধ্বনি
২. বিসর্গ + ব্যঞ্জনধ্বনি
[বিসর্গসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধির সম্পর্ক : সংস্কৃত নিয়ম অনুযায়ী শব্দ বা পদের শেষে ‘র্’ বা ‘স্’ থাকলে তাদের বদলে ‘ঃ’ বা অঘোষ ‘হ’ উচ্চারিত হয়। এর উপর ভিত্তি করে বিসর্গকে ২ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

র-জাত বিসর্গ : ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর- পুনঃ, ইত্যাদি।

স-জাত বিসর্গ : ‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : নমস- নমঃ, পুরস- পুরঃ, শিরস- শিরঃ, ইত্যাদি।

মূলত, ‘ঃ’ হলো ‘র্’ ও ‘স্’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

এই র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ উভয়েই মূলত ব্যঞ্জনধ্বনিরই অন্তর্গত। এই কারণে অনেকে বিসর্গ সন্ধিকেও ব্যঞ্জনসন্ধিরই অন্তর্গত বলে মনে করে।]

বিসর্গ+স্বরধ্বনি

‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়। যেমন- ততঃ+অধিক = ততোধিক

বিসর্গ+ব্যঞ্জনধ্বনি

১. (ক) ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে, ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ও’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব অথবা হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ’-এর পরে স-জাত ‘ঃ’, এবং তারপরে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ধ্বনি থাকলে কিংবা য, র, ল, ব, হ থাকলে আগের অ+ঃ=‘ও’ হয়। যেমন-

তিরঃ+ধান = তিরোধান (অ+ঃ+ধ)
মনঃ+রম = মনোরম (অ+ঃ+র)
তপঃ+বন = তপোবন (অ+ঃ+ব)
মনঃ+হর = মনোহর (অ+ঃ+হ)

(খ) ‘অ’-এর পরে র-জাত ‘ঃ’ থাকলে, এবং তারপরে স্বরধ্বনি কিংবা ঐ একই ধ্বনিগুলো থাকলে (ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি ও হ), ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন-

অন্তঃ+গত = অন্তর্গত (অ+ঃ+গ)
পুনঃ+আয় = পুনরায় (অ+ঃ+আ)
অন্তঃ+ধান = অন্তর্ধান (অ+ঃ+ধ)
পুনঃ+উক্ত = পুনরুক্ত (অ+ঃ+উ)
অন্তঃ+ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত (অ+ঃ+ভ)
পুনঃ+জন্ম = পুনর্জন্ম (অ+ঃ+জ)
অন্তঃ+বর্তী = অন্তর্বর্তী (অ+ঃ+ব)
পুনঃ+বার = পুনর্বার (অ+ঃ+ব)
অহঃ+অহ = অহরহ (অ+ঃ+অ)
পুনঃ+অপি = পুনরপি (অ+ঃ+অ)

প্রাতঃ+উত্থান = প্রাতরুত্থান (অ+ঃ+উ)

২. ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ কিংবা, গ, জ, ড, দ, ব কিংবা ঘ, ঝ, ঢ, ধ, ভ কিংবা ঙ, ঞ, ণ, ন, ম কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব কিংবা হ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘র’ হয়। যেমন-

নিঃ+আকার = নিরাকার (ই+ঃ+আ)
দুঃ+যোগ = দুর্যোগ (উ+ঃ+য)
নিঃ+আকরণ = নিরাকরণ (ই+ঃ+আ)
দুঃ+লোভ = দুর্লোভ (উ+ঃ+ল)
নিঃ+জন = নির্জন (ই+ঃ+জ)
দুঃ+অন্ত = দুরন্ত (উ+ঃ+অ)
আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ (ঈ+ঃ+ব)
প্রাদুঃ+ভাব = প্রাদুর্ভাব (উ+ঃ+ভ)
জ্যোতিঃ+ময় = জ্যোতির্ময় (ই+ঃ+ম)
বহিঃ+গত = বহির্গত (ই+ঃ+গ)

ব্যতিক্রম : ‘ই/উ+ঃ+র’ হলে ‘ঃ’ লোপ পায় এবং ‘ঃ’-র আগের হ্রস্ব স্বরধ্বনি দীর্ঘ হয়। যেমন- ‘নিঃ+রব’, এখানে ‘ন+ই+ঃ’-এর ‘ই+ঃ’-এর পরে ‘র’ ধ্বনির সন্ধি হয়েছে। সুতরাং এখানে ‘ঃ’ লোপ পাবে এবং ‘ই’-র জায়গায় ‘ঈ’  হবে। অর্থাৎ সন্ধি হয়ে হবে ‘নিঃ+রব = নীরব’। এরকম- নিঃ+রস = নীরস।

৩. বিসর্গের পরে তালব্য অঘোষ ধ্বনি (চ, ছ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় তালব্য শিশ (শ) ধ্বনি,
বিসর্গের পরে মূর্ধণ্য অঘোষ ধ্বনি (ট, ঠ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় মূর্ধণ্য শিশ (ষ) ধ্বনি,
বিসর্গের পরে দন্ত্য অঘোষ ধ্বনি (ত, থ) থাকলে বিসর্গের জায়গায় দন্ত্য শিশ (স) ধ্বনি হয়।
অর্থাৎ,
‘ঃ’-এর পরে ‘চ/ছ’ (তালব্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘শ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ট/ঠ’ (মূর্ধণ্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘ষ’
‘ঃ’-এর পরে ‘ত/থ’ (দন্ত্য) থাকলে ‘ঃ’-এর জায়গায় ‘স’ হয়। যেমন-ঃ

+চ/ছ = শ+চ/ছ
নিঃ+চয় = নিশ্চয়
শিরঃ+ছেদ = শিরশ্ছেদঃ

+ট/ঠ = ষ+ট/ঠ
ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুরঃ

+ত/থ = স+ত/থ
দুঃ+তর = দুস্তর
দুঃ+থ = দুস্থ


৪. (ক) ‘অ/আ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি (স) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘স’ হয়।

(খ) ‘অ/আ’ ছাড়া অন্য কোন স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় অঘোষ মূর্ধণ্য শিশ ধ্বনি (ষ) হয়।
অর্থাৎ, ‘অ/আ’-এর পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ‘ক/খ/প/ফ’ থাকলে ‘ঃ’-র জায়গায় ‘ষ’ হয়।
যেমন-

(ক) অ/আ+ঃ+ক/খ/প/ফ
(খ) ই/ঈ/উ/ঊ/এ/ঐ/ও/ঔ +ঃ+ক/খ/প/ফ
নমঃ+কার = নমস্কার
পদঃ+খলন = পদস্খলন
নিঃ+কার = নিষ্কর
দুঃ+কার = দুষ্কর
পুরঃ+কার = পুরস্কার

নিঃ+ফল = নিষ্ফল
দুঃ+প্রাপ্য = দুষ্প্রাপ্য
মনঃ+কামনা = মনস্কামনা
বাচঃ+পতি = বাচস্পতি
নিঃ+পাপ = নিষ্পাপ
দুঃ+কৃতি = দুষ্কৃতি
তিরঃ+কার = তিরস্কার

বহিঃ+কৃত = বহিষ্কৃত
চতুঃ+কোণ = চতুষ্কোণ
ভাঃ+কর = ভাস্কর

বহিঃ+কার = বহিষ্কার
চতুঃ+পদ = চতুষ্পদ


আবিঃ+কার = আবিষ্কার


৫. ‘ঃ’-র পরে স্ত, স্থ কিংবা স্প যুক্তব্যঞ্জনগুলো থাকলে পূর্ববর্তী ‘ঃ’ অবিকৃত থাকে কিংবা লোপ পায়। যেমন-
নিঃ+স্তব্ধ = নিঃস্তব্ধ/ নিস্তব্ধ
দুঃ+স্থ = দুঃস্থ/ দুস্থ
নিঃ+স্পন্দ = নিঃস্পন্দ/ নিস্পন্দ

৬. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্ধির পরও ‘ঃ’ থেকে যায়। যেমন-
প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল
মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট
শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া

৭. কয়েকটি বিশেষ বিসর্গ সন্ধি (এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নিপাতনে সিদ্ধ বা বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধি নয়। এগুলো কেবলই বিসর্গ সন্ধি)-

বিশেষ বিসর্গ সন্ধি
বাচঃ+পতি = বাচস্পতি
অহঃ+নিশা = অহর্নিশ
ভাঃ+কর = ভাস্কর
অহঃ+অহ = অহরহ

ভাষা অনুশীলন; ১ম পত্র


বাংলাদেশ

বিসর্গসন্ধি
বিসর্গযুক্ত ‘ই/উ’ ধ্বনির পরে ‘গ/দ’ থাকলে বিসর্গ স্থলে রেফ হয়। (আসলে গ/ঘ ও দ/ধ, ঘোষ ধ্বনি থাকলে) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি)
ই+ঃ+গ
নিঃ+গত = নির্গত

ই+ঃ+দ
নিঃ+দেশ = নির্দেশ
নিঃ+দোষ = নির্দোষ
উ+ঃ+গ
দুঃ+গত = দুর্গত
চতুঃ+গুণ = চতুর্গুণ
উ+ঃ+ঘ
দুঃ+ঘটনা = দুর্ঘটনা

উ+ঃ+দ
চতুঃ+দিক = চতুর্দিক


আঠারো বছর বয়স

বিসর্গসন্ধি
দুঃ-উপসর্গের পরে ‘স’ থাকলে সন্ধিবদ্ধ শব্দে বিসর্গ বজায় থাকে। কিন্তু ‘ব’ বা ‘য’ থাকলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়। (‘ব’ ঘোষ ধ্বনি এবং ‘য’ অন্তস্থ ধ্বনি বলে বিসর্গের বদলে রেফ হয়।) (নিয়ম ২; বিসর্গসন্ধি)

‘দুঃ+স’ থাকলে বিসর্গ থাকে
‘দুঃ+ব’ বা ‘দুঃ+য’ থাকলে বিসর্গ রেফ হয়ে যায়
দুঃ+স
দুঃ+ব
দুঃ+য
দুঃ+সাহস = দুঃসাহস
দুঃ+সাধ্য = দুঃসাধ্য
দুঃ+বার = দুর্বার
দুঃ+যোগ = দুর্যাগ
দুঃ+সংবাদ = দুঃসংবাদ
দুঃ+সময় = দুঃসময়
দুঃ+বিনীত = দুর্বিনীত

দুঃ+সহ = দুঃসহ

দুঃ+বিষহ = দুর্বিষহ



দুঃ+ব্যবহার = দুর্ব্যবহার




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন

  • কোনটি সন্ধিজাত শব্দ  সন্ধি (ঘ-১৯৯৯-২০০০)
  • ‘উচ্ছৃঙ্খল’ এর সন্ধি বিচ্ছেদ কর? (ঘ-২০০১-০২)
  • ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ কিভাবে গঠিত হয়েছে? (ঘ-২০০২-০৩)
  • ‘নীরস’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হল- (ঘ-২০০৩-০৪)
  • নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে সন্ধিবদ্ধ হয়েছে কোনটি? (ঘ-২০০৪-০৫)
  • ‘পর্যবেক্ষণ’- এর সন্ধিবিচ্ছেদ (ঘ-২০০৫-০৬)
  • নিচের কোনটির সন্ধিবিচ্ছেদ সঠিকভাবে হয়নি (ঘ-২০০৬-০৭)
  • ৮. ভুল সন্ধি (ঘ-২০০৮-০৯)
  • কোন শব্দটি সন্ধিজাত?   সংখ্যা (ঘ-২০১০-১১)
  • উপরি+উক্ত মিলে কোন শব্দটি গঠিত হয়? (ক-২০০৫-০৬)
  • সদ্যোজাত’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ (ক-২০০৬-০৭)
  • ‘প্রিয়ংবদা’-র সন্ধিবিচ্ছেদ কর- (ক-২০০৬-০৭)
  • ‘আদ্যোপান্ত’ এর সন্ধিবিচ্ছেদ হল (ক-২০০৭-০৮)
  • ‘দৃশ্য’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হলো- (ক-২০০৮-০৯)
  • ‘শান্ত’- শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ (ক-২০০৯-১০)
  • ‘ব্যর্থ’ শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি? (গ-২০১০-১১)
  • নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি কোনটি? (গ-২০০৯-১০)
  • গো+পদ=গোস্পদ
  •  ‘সন্ধি’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হবে: (গ-২০০৯-১০)
  • কোনটি ‘অন্তরঙ্গ’ এর সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ? (গ-২০০৭-০৮)
  • কোন বাংলা পদের সাথে সন্ধি হয় না? (গ-২০০৬-০৭)
  • ‘প্রেম’ শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ: (গ-২০০৫-০৬)
  • ‘গো+অক্ষ=গবাক্ষ’- এটি কোন প্রকার সন্ধি? (গ-২০০৪-০৫)
  • কোনটি নিয়মানুসারে সন্ধি হয় না? (গ-২০০২-০৩)