Showing posts with label পদ. Show all posts
Showing posts with label পদ. Show all posts

Wednesday, 18 May 2016

ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ)

বর্তমানে পদকে শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থবোধক বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি হলো শব্দ। আর শব্দের সঙ্গে বিভক্তিযুক্ত হলে হয় পদ। কথার ক্ষুদ্রতম অংশকে শব্দ বলে। কথাকে ভাঙলে বাক্য পাওয়া যায়। বাক্যকে ভাঙলে পদ আর পদকে ভাঙলে পাওয়া যায় শব্দ+বিভক্তি (নামবিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি)। তাই বলা হয়, বিভক্তিযুক্ত শব্দই পদ। শব্দ ও পদ রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। শব্দ ও পদ নির্মাণের নানান দিক ব্যাকরণের যে অংশে উপস্থাপিত বা আলোচিত হয় তাকেই বলা হয় রূপতত্ত্ব। ড. হুমায়ুন আজাদ বলেন: রূপতত্ত্ব হচ্ছে শব্দের আভ্যন্ত ও সংগঠন বিশ্লেষণের বিদ্যা। বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইতে বলা  হয়েছে, রূপতত্ত্বের দুটি প্রধান এলাকা হলো: শব্দনির্মাণ ও পদনির্মাণ। এছাড়াও দুটি গৌণ এলাকা আছে। যেমন : শব্দশ্রেণি নির্ধারণ এবং শব্দের উৎস নির্ণয়।
শব্দশ্রেণির প্রকরণ
শব্দ বিভক্তি ও ধাতু বিভক্তি দুটি মিলে যে শব্দ তৈরি করে তাকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বলে। শব্দশ্রেণিকে আট ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. বিশেষ্য      : নামবাচক শব্দ।
২. সর্বনাম      : নামের পরিবর্তনবাচক শব্দ।
৩. বিশেষণ     : দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণবাচক শব্দ।
৪. ক্রিয়া       : কর্মবাচক শব্দ।
৫. ক্রিয়া বিশেষণ   : ক্রিয়া বিশেষণবাচক শব্দ।
৬. অনুসর্গ     : সম্পর্ক স্থাপনবাচক শব্দ।
৭. যোজক      : সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচনবাচক শব্দ।
৮. আবেগশব্দ   : আবেগবাচক শব্দ।
বিশেষ্য /Noun
নামবাচক শব্দকে বিশেষ্য বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে কোন ব্যক্তি, বস্তু, জাতি, সমষ্টি, স্থান/দেশ, কাল, গুণ, ক্রিয়া, কর্ম ও গুণের নামকে বিশেষ্য বলে। বিশেষ্যকে আবার বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে। কে, কি, কারা দিয়ে প্রশ্ন করলে বিশেষ্য পাওয়া যায়। বচন ও লিঙ্গ বিশেষ্যের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ্য কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নামবাচক বিশেষ্য / Proper Noun : ডাকনামকে সংজ্ঞাবাচক শব্দ বা নামবাচক শব্দ বলে। যেমন:
ব্যক্তি       : হাসান, ইমরান, আসিফ, ফারজানা, নাবিলা, মেধা, মিলন, মাটি, নাবা, নিশি, নজরুল।
স্থান/দেশ/গ্রাম : ঢাকা, বরিশাল, ফেনি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ, আমেরিকা, সেনগাঁও
গ্রন্থ        : গীতাঞ্জলি, ঝিঙেফুল, অগ্নিবীণা, হাসু, শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালা, ছানাবড়া, কুরআন।
নদী        : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা।
পর্বত       : হিমালয়, ককেশাস, হিন্দুকুশ।
একক সৃষ্টি   : সূর্য, পৃথিবী।
২. জাতিবাচক বিশেষ্য/Common Noun : যে নামে একককে চেনা যায় না তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : হাসান, হাসিনা।
প্রাণী  : ঘোড়া, ছাগল, কুকুর, বেড়াল (গরু জাতিবাচক কিন্তু ‘লালি’ ডাকনাম তাই নামবাচক)।
বিষয়  : ফুল, পাখি, জাতি, একক সৃষ্টি, ভাষা, বই।
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য /Material Noun
যে নামে বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
তরল    : পানি, দুধ, তেল, মধু, সিরাপ।
পানীয়    : কোক।
কঠিন    : লোহা, সোনা, পাথর, বরফ।
বায়বীয়   : বাতাস, গ্যাস।
বৃক্ষ     : আমগাছ, জামগাছ।
লেখাপড়া : বই, খাতা, কলম।
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য/বহুবচনজাতীয় বিশেষ্য/Collective Noun : যে নামে সমষ্টি বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন:
মানুষ : দল, বাহিনী, সংঘ, সভা, সমিতি, পঞ্চায়েত, বহর, জনতা।
প্রাণী : ঝাঁক, পাল।
৫. গুণবাচক বিশেষ্য: /Abstract Noun : বিশেষ্যের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে বিশেষ্য তৈরি হয় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সততা>সৎ, বীরত্ব>বীর, তারল্য>তরল, তরুণ>তারুণ্য, সৌন্দর্য>সুন্দর, দৈন্য>দীন (বিশেষ্য>বিশেষণ)।
৬. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য/Verbal Noun : ক্রিয়ার সাথে প্রত্যয়যুক্ত করে যে বিশেষ্য তৈরি করা হয় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : গমন, দর্শন/দেখা, শোনা।
সর্বনাম /Pronoun
বিশেষ্য বা নামপদের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। যেমন: আমি—আমরা, তুমি— তোমরা, তুই—তোরা, আপনি—আপনারা, সে—তারা/ওরা/এরা, তিনি/ইনি/ উনি—তাঁরা/ওঁরা/এঁরা। পক্ষ (পুরুষ) ও বচনের উপর নির্ভর করে সর্বনাম বিভিন্নরূপ ধারণ করে। সম্মানিত ব্যক্তি হলে সর্বনামে চন্দ্রবিন্দু বসে। সর্বনাম কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন:
প্রকরণ
একবচন
বহুবচন
১. ব্যক্তিবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি বোঝায়।
বক্তাপক্ষ
শ্রোতাপক্ষ
অন্যপক্ষ



আমি, আমাকে
তুমি, তুই, তোকে
আপনি, আপনাকে
সে (নর), শে (নারী), তিনি, তার, তাকে
এ, এর, ও, ওর



আমরা, আমাদের
তোমরা, তোমাদের, তোরা, তোদের
আপনারা, আপনাদের
তারা, তাদের, এরা, এদের, ওর, ওদের

২. নির্দেশকবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তির কাছ থেকে সামীপ্য বা দূরত্ব নির্দেশ করে।
এ, এই, এটা, ইনি, ইহা
ও, ওরা, ওটা, উনি, উহা
এরা, ইহারা
ওগুলো, ওদের, ওরা

৩. অনির্দেশকবাচক /অনির্দিষ্টবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে কোনো অনির্দিষ্ট বা পরিচয় হীন ব্যক্তি, বস্তু বা ভাব বোঝায়।     কোন, কেহ, কেউ, যা কিছু,
কোন কিছু
কেউ কেউ, কিছু কিছু
৪. প্রশ্নবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা বোঝায়।
কে, কি/কী, কেন, কাহার, কিসের
কোনগুলো, কে কে, কী কী, কার কার
৫. সংযোগবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে দুই বা অধিক ব্যক্তি বা বস্তু সংযোগ বোঝায়।
যে, যেটি, যা তা, যে সে, যিনি, যিনি, তিনি, যাহা
যে যে যা যা, যারা যারা, যাকে যাকে, যেগুলো, যারা, যাহারা

৬. আত্মবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি নিজকে বোঝায়।
স্বয়ং, নিজ, আপনি, খোদ
আপনারা
৭. সমষ্টিবাচক
/সাকল্যবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে ব্যক্তি, বস্তু বা ভারে সমষ্টিকে বোঝায়।

সব, সকল, উভয়, সমুদয়, তাবৎ
৮. ব্যতিহার
যে সর্বনাম দিয়ে সর্বনামের দ্বিত্ব রূপ বোঝায়।
আপনি, নিজে
আপনা আপনি, নিজে নিজে
৯. অন্যাদিবাচক
যে সর্বনাম দিয়ে অন্য বা অপরকে বোঝায়।
অন্য, অপর, পর
অন্যরা, অপররা, পররা
১০. সাপেক্ষ সর্বনাম
যে সর্বনাম একে অন্যের উপর নির্ভরশীল এবং এরা দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটায়।
যে-সে, যেমন-তেমন, যতক্ষণ-ততক্ষণ, যাকে-তাকে
যাদের-তাদের
বিশেষণ / Adjective
বিশেষ্য ও সর্বনামের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণকে বিশেষণ বলে। কেমন, কতো, কিভাবে, কয়টা দিয়ে প্রশ্ন্ করলে বিশেষণ পাওয়া যায়। সংখ্যা ও নির্দেশক বিশেষণের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনামের আগে বসে নামকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) গুণবাচক      : দক্ষ, ঠান্ডা, চৌকস, মধুর, কর্কশ, রাগী, ভদ্র ইত্যাদি।
খ) রূপবাচক      : সবুজ, সুন্দর, নীল, কাল, সাদা ইত্যাদি।
গ) অবস্থাবাচক     : ফুটন্ত, ঘুমন্ত, শহুরে, সুফলা, রোগা, তাজা, খোঁড়া, পড়া, শোনা ইত্যাদি।
ঘ) অনির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক    : শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, অনেক অনেক।
ঙ) নির্দিষ্ট সংখ্যাবাচক     : একশটি, দশটি, পঞ্চাশটি ইত্যাদি।
চ) স্থানবাচক      : স্থান+ই— পাবনাই, ঢাকাই, মিরপুরি, স্থান+ঈয়— ইউরোপীয় ইত্যাদি।
ছ) সর্বনামবাচক    : যত— তত, এত, কত, কেমন, এই, সেই, কোন, কোন কোন, স্বীয় ইত্যাদি।
জ) উপাদানবাচক    : বস্তু+এ— বেলে, মেটে, কাগুজে, বস্তু+র— তালপাতার, লোহার ইত্যাদি।
ঝ) প্রশ্নবাচক      : কত, কেমন, কোন ইত্যাদি।
ঞ) বর্ণবাচক      : লাল, কাল, সাদা, নীল, ফ্যাকাশে ইত্যাদি।
ট) ক্রিয়াবাচক          : গেল/গত/আসছে/আগামী, চলন্ত/চলমান,বাড়ন্ত, পতিত, নিবু নিবু, কাঁদো কাঁদো।
ঠ) ধ্বনাত্মকবাচক   : শব্দ+এ— ঝকঝকে, কনকনে, ঝমঝমে, ঝিরঝিরে, গমগমে, ফুরফুরে, থইথই।
ড) বিশেষণে বিশেষণ      : দারুণ প্রাণবন্ত, টকটকে লাল, ধবধবে সাদা ইত্যাদি।
ঢ়) সম্বন্ধবাচক          : শব্দ+র/এর=অনেক দূরের, মাটির ঘরের, গরিবের ছেলে, আনন্দের সংসার।
২. ভাব বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষ্য বা সর্বনাম ছাড়া অন্য শব্দকে বিশেষিত করে তাকে ভাব বিশেষণ বলে। যেমন :
ক) বিশেষণীয় বিশেষণ     : যে বিশেষণ নাম বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যেমন :  অতি, সামান্য।
খ) অব্যয়ের বিশেষণ : যে বিশেষণ অব্যয়কে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ। যেমন : ধিক-শত ধিক
গ) ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : খুব তাড়াতাড়ি, আরো জোরে, বড় সুন্দর, অতি চমৎকার
গঠনের দিক দিয়ে বিশেষণ দুই প্রকার। যেমন :
১. মৌলিক বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বিশেষণ বলে। যেমন: ভালো, মন্দ।
২. সাধিত বিশেষণ : যে বিশেষণকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত বিশেষণ বলে। সাধারণত প্রত্যয় দিয়ে সাধিত বিশেষণ তৈরি করা হয়। যেমন : চলন্ত, ডুবন্ত, সামাজিক।
তুলনামূলক বিশেষণ /অতিশায়ন বিশেষণ :
Degree /তুলনা
Positive /গুণ
Comparative
/দুয়ের মধ্যে তুলনা
Superlative
/অনেকের মধ্যে তুলনা
English
Adjective /Adj
Good, beautiful
Adjective+er
more +Adj
better, more beautiful
Adjective +est
most +Adj
best, most beautiful
তৎসম শব্দ
বিশেষণ
বিশেষণ +য়ান
বিশেষণ +ষ্ঠ

লঘু
অল্প
বৃদ্ধ
শ্রেয়
লঘীয়ান
কনীয়ান
জয়্যান
শ্রেয়ান
লঘিষ্ঠ
কনিষ্ঠ
জেষ্ঠ্য
শ্রেষ্ঠ
বাংলা শব্দ
বিশেষণ
চাইতে, চেয়ে, থেকে, অধিক, অপেক্ষা,
অনেক, বেশি, অল্প, কম   
সবচাইতে, সর্বাধিক

সবচে, সর্বাপেক্ষা
‘তর’ সংস্কৃত ‘তরপ/তরক/ষ্টরচ’ প্রত্যয় থেকে এবং ‘তম’ সংস্কৃত ‘তমট/তমপ’ প্রত্যয় থেকে বাংলা ‘তর ও তম’ হয়েছে। বিশেষণের তুলনা দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তর’ আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘তম’ বসে। এরা বিশেষ্যবাচক শব্দে বসে না। যেমন: বৃহৎ: বৃহত্তর— বৃহত্তম, দীর্ঘ: দীর্ঘতর—দীর্ঘতম। এমন বহু শব্দ রয়েছে। যেমন : হীনতর, মহত্তর, ক্ষুদ্রতর, উন্নততর, উচ্চতর, দীর্ঘতর, গুরুতর, এগারতম, পঞ্চাশতম, মহত্তম, নীচতম, প্রিয়তম, মধুরতম, ক্ষুদ্রতম, যোগ্যতম ইত্যাদি। কিন্তু সংস্কৃত শব্দে য়ান—ষ্ঠ বসলে তর—তম বসে না। শ্রেয়— শ্রেয়ান— শ্রেষ্ঠ, লঘু— লঘীয়ান— লঘীষ্ঠ, অল্প— কনিয়ান— কনিষ্ঠ। কনিষ্ঠতর বা কনিষ্ঠতম বসে না। বাংলা শব্দে দুয়ের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে বিশেষণের আগে ‘হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা’ ব্যবহার করা হয় অথবা অনেক, বেশি, খুব’ বসানো হয় কম বুঝাতে ‘অল্প বা কম’ বসানো হয় আর বহুর মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝাতে ‘সবচে, সবথেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়।

ক্রিয়া / Verb
ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে। ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে ক্রিয়াপদ হয়। কাজবাচক শব্দই ক্রিয়া। ধাতু দুই প্রকার। যেমন:
১. মৌলিক ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন: কর, পড়, দেখ।
২. সাধিত ধাতু: যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। অথবা যে ধাতুকে ভাঙলে প্রত্যয় পাওয়া যায় তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন: করা, পড়া, দেখা, পড়ি, পড়ছি ইত্যাদি।
ক্রিয়ার প্রকরণ
যে শব্দ দিয়ে কাজ করা বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে। ক্রিয়া কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) অনুক্ত ক্রিয়া    : যার ক্রিয়া থাকে না।
খ) ভাব প্রকাশক ক্রিয়া    : সমাপিকা, অসমাপিকা।
গ) কর্ম প্রকাশ ক্রিয়া      : সকর্মক, অকর্মক, দ্বিকর্মক, প্রযোজক ক্রিয়া।
ঘ) গঠনগত ক্রিয়া   : একক ক্রিয়া, দ্বিত্ব ক্রিয়া, মিশ্রক্রিয়া, অস্তি বাচক ক্রিয়া, নেতিবাচক ক্রিয়া।
নিচে সকলপ্রকার ক্রিয়ার সংজ্ঞা ও নমুনা দেয়া হলো:
১. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) বই (কর্ম) পড়ে (ক্রিয়া)।
২. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম আছে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) তাকে (ব্যক্তিকর্ম) একটি বই (বস্তুকর্ম) পড়তে দিয়েছে (ক্রিয়া)।
৩. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নাই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (কর্তা) সবসময় পড়ে (ক্রিয়া)।
৪. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনেছে।
৫. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে বাক্যের অর্থপূর্ণ সমাপ্তি ঘটে না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে একটি বই কিনে...। এ বা র-বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদকে অসমাপিকা ক্রিয়াপদ বলে।
তবে অসমাপিকাকে সমাপিকা করতে আরেকটি ক্রিয়া লাগে। যেমন: সে একটি বই কিনে হাসানকে উপহার দেবে।
৬. যৌগিক ক্রিয়া: একাধিক ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অথবা কর্তার কাজ শেষ করতে একের অধিক ক্রিয়া থাকলে যৌগিক ক্রিয়া হয়। দুটি ক্রিয়ার মধ্যে একটি অসমাপিকার একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। যেমন: খেয়ে ফেলল, বসে পড়ল, ঘুমিয়ে গেল, করতে পারবে। সে বইটি পড়তে থাকল।
৭. সমধাতুজ ক্রিয়া: বিশেষ্য যদি ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই ক্রিয়াকে সমধাতুজ ক্রিয়া বলে। যেমন: সে জব্বর ঘুম ঘুমিয়েছে।
৮. নামক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের পরে আ-প্রত্যয়যোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে নামক্রিয়া বলে। যেমন: বেতা (বেত+আ), বাঁকা, ছাপা, ফলা ইত্যাদি।
৯. প্রযোজক ক্রিয়া: কর্তার কাজ কর্মকে দিয়ে শেষ হলে সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখান। শিক্ষক ছাত্রকে পড়ান। দেখা— দেখান/দেখানো, পড়া—পড়ান/পড়ানো, জানা— জানান/জানানো, শেখা—শেখান /শেখানো।
১০. অনুক্তক্রিয়া বা সহযোগী ক্রিয়া বা সাহায্যকারী বা সংযোক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যে না থেকে বা উহ্য থেকে শব্দের সংযোগ স্থাপন করে তাকে সহযোগী বা সংযোক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে (হয়) ছাত্র। ফুলটি (হয়) সুন্দর।
১১. মিশ্রক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বনাত্মক শব্দের সঙ্গে কর, হ, দে, পা, যা, কাট, গা, ছাড়, ধর, মার ইত্যাদি ধাতুযোগে গঠিত ক্রিয়াপদকে মিশ্রক্রিয়া বলে। যেমন: শয়ন করা, গ্রহণ করা, প্রদান করা, গমন করা, শ্রবণ করা, দর্শন করা, জিজ্ঞাসা করা, নির্বাসিত করা, দূরীভূত কর, আগমন করা, আহার/ভক্ষণ করা, লাফ/লম্ফ দেয়া, নিদ্রা যাওয়া, ঝমঝম করা ইত্যাদি।
১২. অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্তা থাকে না বা কর্তা উহ্য থাকে তাকে অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: এখানে আসো। বইটি পড়। রোদে দৌড়াদৌড়ি করবে না। শিক্ষককে সম্মান করবে।
১৩. ভাববাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না বা উহ্য থাকে তাকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: রোম একদিনে তৈরি হয় নাই। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে। বাচ্যপ্রধান বাক্যের ক্রিয়াকে ভাববাচক ক্রিয়া বলে।
সমাপিকা ক্রিয়ার অসমাপিকা ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
১. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয়। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের গঠন ও অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
২. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যে বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে।
৩. সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে। আর অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সঙ্গে সংগতি থাকে না।
৪. সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে বিভক্তি বসে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে এ/ও/তে/ল বিভক্তি বসে।
৫. সমাপিকা ক্রিয়ার কোন সহায়ক ক্রিয়া থাকে না। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার সহায়ক ক্রিয়া থাকে।
৬. সমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খায়। আর অসমাপিকা ক্রিয়ার নমুনা: সে সকালে নাস্তা খেয়ে স্কুলে যায়।
ক্রিয়া বিশেষণ /Adverb
ক্রিয়ার দোষ, গুণ প্রকাশকারীই ক্রিয়া বিশেষণ। অথবা ক্রিয়ার বিশেষণকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা ক্রিয়াকে যে শব্দ বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা যে বিশেষণ ক্রিয়ার অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন: অবস্থা=ভাব—আস্তে আস্তে চল, কাল—আগে/পরে গেলে সুফল পাবে। ক্রিয়া বিশেষণ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
ক) পদবিন্যাসগত প্রকরণ
১. একক ক্রিয়া বিশেষণ: একটিমাত্র ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে, জোরে, ধীরে, তাড়াতাড়ি, শক্ত/ দৃঢ়ভাবে, শান্ত ভাবে ইত্যাদি।
২. দ্বিত্ব ক্রিয়া বিশেষণ: দুটি ক্রিয়া বিশেষণ দিয়ে ক্রিয়াকে বিশেষিত করা যায়। যেমন: আস্তে অস্তে, জোরে জোরে, ধীরে ধীরে, চুপি চুপি, চুপে চুপে, ভয়ে ভয়ে, বিন্দু বিন্দু, কেঁদে কেঁদে, বারবার, গুটিগুটি, চুপিচুপি।
৩. বিভক্তিযুক্ত বা বিভক্তিহীন: বিভক্তিযুক্ত: ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে ইত্যাদি। বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ ইত্যাদি।

খ) অর্থ ও অন্বয়গত প্রকরণ
১. ধরনজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: টিপটিপ, হনহন, শনশন, পনপন ইত্যাদি।
২. কালজ্ঞাপক ক্রিয়া বিশেষণ: এখনি, সপ্তাহ, আজকাল, পরশু, আগামিকাল, পরদিন, আগামিদিন, ততক্ষণে, ঠিকসময়ে, ভোর না হতেই, অনেকক্ষণ ইত্যাদি।
৩. স্থানজ্ঞাপন ক্রিয়া বিশেষণ: এখানে, সেখানে, ওখানে, সামনে, পেছনে, কোথায়, যেথায়, এধারে, ওধারে, ওপরে, নিচে।
ক্রিয়া বিশেষণের গঠন
ক্রিয়া বিশেষণ কয়েকভাবে গঠন করা যেতে পারে। যেমন :
১. বিভক্তিহীন : নিশ্চয়, অবশ্যই, ভাল, শীঘ্র, ঠিক, গপাগপ+ক্রিয়া।
২. বিভক্তিযুক্ত : ভাল করে, মন দিয়ে, হনহনিয়ে, চেঁচিয়ে +ক্রিয়া।
৩. দ্বৈতশব্দ : বিন্দু বিন্দু, বারবার, কেঁদে কেঁদে, গুটিগুটি, চুপিচুপি +ক্রিয়া
৪. তুলনামূলক শব্দ : শব্দ+মতো, মতন, মাত্র বসে ক্রিয়া বিশেষণ প্রকাশ করে। চাওয়ামাত্র, ঠিকমতো একই শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে যেমন: মন্দটি, মন্দ বাক্য ইত্যাদি।
অনুসর্গ /কর্মপ্রবচনীয় শব্দ /Preposition
যেসব শব্দ বাক্যে স্বাধীনরূপে বসে বাক্যের অর্থ প্রকাশ করে, শব্দ ও শব্দ বা বাক্য ও বাক্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বাক্যে বিভক্তির ন্যায় ব্যবহৃত হয় তাদের অনুসর্গ বলে। অনুসর্গগুলোর কাজ ইংরেজি ভাষার Preposition-এর মতো। তবে প্রিপজিশনগুলো শব্দের আগে বসে আর অনুসর্গগুলো শব্দের পরে বসে তাই এর নাম অনুসর্গ। কারক ছাড়াও অনুসর্গের প্রয়োগ আছে। বিভক্তি আর অনুসর্গের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিভক্তি হলো অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি আর অনুসর্গ হলো অর্থপূর্ণ শব্দ। অনুসর্গগুলোর যে চেহারা তা সাধারণত আর কোন পরিবর্তন লাভ করে না। এজন্য অনুসর্গগুলো যোজকের মধ্যে ফেলা হয়। বাংলায় প্রায় প্রতিটি কারকেরই বিভক্তিসিদ্ধ ও অনুসর্গসিদ্ধরূপ লক্ষ্য করা যায়। গঠন অনুসারে এবং উৎস অনুসারে অনুসর্গ কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
গঠন অনুসারে অনুসর্গ দুই প্রকার। যেমন :
১. বিভক্তিযুক্ত অনুসর্গ: সাধারণ নাম বা প্রাতিপদিক অনুসর্গ এ-বিভক্তিযুক্ত হয়। যেমন : আগে, পরে, ওপরে, কাছে, কারণে, জন্যে, মধ্যে, মাঝে, মাঝারে, সনে, সঙ্গে, তরে, নামে, পানে, পক্ষে, দিকে, পাশে, সামনে, সম্মুখে, করে, হতে, থেকে, চেয়ে, দিয়ে, লেগে, বদলে, বাদে।
২. বিভক্তিহীন অনুসর্গ: অধিক, অবধি, জন্য, পর, প্রতি, বই, বশত, বিনা, বিনে, বিনি, বিহনে, দ্বারা, কর্তৃক, ছাড়া, ব্যতীত, ভিন্ন, মতো, সহ, সহিত, হেতু, দারুণ, বনাম, বরাবর, বাবদ ইত্যাদি।
উৎস অনুসারে অনুসর্গ চার প্রকার। যেমন :
ব্যাকরণের শব্দশ্রেণি অনুযায়ী বাংলা ভাষায় অনুসর্গগুলো বিশেষ্যজাত ও ক্রিয়াজাত-দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথম শ্রেণির অনুসর্গগুলো বিশেষ্য, যোজক ইত্যাদি শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। যেমন: নিকট, সঙ্গে, আগে ইত্যাদি আর ক্রিয়াজাত অনুসর্গগুলো জন্মেছে ক্রিয়াপদ থেকে। যেমন: বলে, ধরে, চেয়ে। নাম অনুসর্গগুলো আবার উৎস অনুযায়ী সংস্কৃত, তদ্ভব ও দেশি, বিদেশি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
ক) সংস্কৃত অনুসর্গ
অপেক্ষা      : এ জীবন অপেক্ষা প্রিয় আর কিছু নাই।
অভিমুখে     : নদী চলিয়াছে সমুদ্র অভিমুখে।
উপরে : সবার উপরে মানুষ সত্য।
কর্তৃক : আজ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এই মঞ্চের, উদ্বোধন হবে।
কারণে      : পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলই দাও।
জন্য : হিমগিরি ফেলে নিচে নেমে এলে কিসের জন্য?
দিকে : নদী কি কখনো উৎসের দিকে যায়?
দ্বারা : পরিশ্রমের দ্বারা, সততার দ্বারা নিজেকে যথার্থ মানুষ হিসাবে গড়ে তোল।
নিকট : নগরের নিকটেই অরণ্য।
ন্যায় : লটারিতে পুরস্কার লাভের স্বপ্ন মরীচিকার ন্যায় মিলাইতে দেরি হইল না।
পশ্চাতে     : অন্ধের মতো সুখের পশ্চাতে ছুটিয়ো না।
প্রতি : অধমের প্রতি একটু কৃপা করবেন, এই প্রার্থনা।
মধ্যে : কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই।
মাঝে : ‘আমার কাজের মাঝে মাঝে, কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
সঙ্গে   : অকারণে মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করবে না।
সম্মুখে : বিপদের সম্মুখে নির্ভয় থেকো।
সহিত : রামের সহিত সীতাও বনে যাইতে চাহিলেন।
সাথে : করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পঞ্জা।
সামনে : গুরুজনের সামনে অসভ্যতা করতে নাই।
খ) দেশি (তদ্ভব) অনুসর্গ
আগে : মরিব তোমার আগে।
আশে : কে জানে কিসের আশে এসেছি হেথায়।
কাছে : বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও।
ছাড়া : এ ছাড়া আর উপায় কী বল।
তরে : কীসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশ্বাস।
পানে : মুখ পানে চেয়ে দেখি, ভয় হয় মনে।
পাশে : আয়, আমার পাশে এসে বোস।
বই   : আমার একটি বই দুটি মেয়ে নয়, একে আমি এমএ পর্যন্ত পড়াব।
বিনা : চাষির পরিশ্রম বিনা কোন ফসলই ফলে না।
ভিতর : কার মনের ভিতর কী আছে কে জানে?
গ) বিদেশি অনুসর্গ
দরুন : বন্যার দরুন এক বছর ফসল ভাল হয়নি।
বদলে : কিছু মানুষ আছে, যারা কাঞ্চনের বদলে কাচ পছন্দ করে।
বনাম : আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের খেলার আকর্ষণই আলাদা।
বাবদ : ঘড়ির দাম বাবদ কত দিতে হবে আপনাকে?
বরাবর      : এই পথ বরাবর মিছিল এগোবে।
ঘ) ক্রিয়াজাত অনুসর্গ
করে, করিয়া : যদি বাস না পাও, ট্যাকসি করে চলে এসো। আগে লোকে জাহাজে করিয়া বিলাত যাইত।
চেয়ে, চাইতে : আমি মৃত্যু চেয়ে বড়, এই কথা বলে, যাব আমি চলে।
থেকে       : ওর কথা থেকে কিছুই বোঝা গেল না।
দিয়ে, দিয়া   : পথ দিয়ে কে যায় গো চলে, ডাক দিয়ে সে যায়।
ধরে, ধরিয়া : টানা দুমাস ধরে গ্রীষ্মের বন্ধ মজা মন্দ নয়।
লাগিয়া, লাগি : প্রভু তোমা লাগি আঁখি জাগে। সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু।
হতে, হইতে   : আকাশ হতে খসল তারা। কলিকাতা হইতে দিল্লি কত দূর?

সকলপ্রকার অনুসর্গের প্রয়োগ
১. বিনা/বিনে : কর্তৃ কারকের সঙ্গে-তুমি বিনা/বিনে আমার কে আছে?
    বিনি   : করণ কারকের সঙ্গে-বিনি সুতায় গাঁথা মালা।
    বিহনে : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
২. সহ           : সহগামিতা অর্থে-তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
  সহিত    : সমসূত্রে অর্থে-শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
    সনে   : বিরুদ্ধগামিতা অর্থে-দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।
    সঙ্গে   : তুলনায়-মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না।
৩. অবধি    : পর্যন্ত অর্থে-সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪. পরে     : স্বল্প বিরতি অর্থে-এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না।
   পর     : দীর্ঘ বিরতি অর্থে-শরতের পর আসে বসন্ত।
৫. পানে     : প্রতি, দিকে অর্থে-ঐ তো তিনি ঘর পানে ছুটেছেন।
৬. মত     : ন্যায় অর্থে-বেকুবের মত কাজ করো না।
   তরে    : মত অর্থে-এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম।
৭. পক্ষে     : সক্ষমতা অর্থে-রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
            সহায় অর্থে-আসামির পক্ষে উকিল কে?
৮. মাঝে    : মধ্যে অর্থে-সীমার মাঝে অসীম তুমি।
            একদেশিক অর্থে-এ দেশের মাঝে এক দিন সব ছিল।
            ক্ষণকাল অর্থে-নিমেষ মাঝেই সব শেষ।
   মাঝারে   : ব্যাপ্তি অর্থে-আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
৯. কাছে    : নিকটে অর্থে-আমার কাছে আর কে আসবে?
            কর্ম কারকে ‘কে’ বোঝাতে-রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।
১০. প্রতি    : প্রত্যেক অর্থে-মণ প্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেবো।
            দিকে বা ওপর অর্থে-নিদারুণ তিনি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।
১১. হেতু    : নিমিত্ত অর্থে-কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া।
      জন্যে      : নিমিত্ত অর্থে-এ ধনসম্পদ তোমার জন্যে।
     সহকারে     : সঙ্গে অর্থে-আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
      বশত      : কারণে অর্থে-দুর্ভাগ্য বশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।
যোজক / Conjunction/Connective
যোজক দুই বা অধিক শব্দ অথবা বাক্যকে সংযোজক, বিয়োজক সংকোচন ঘটায়। যেমন: ও, এবং, আর, তাই, কিন্তু, অধিকন্তু, সুতরাং, কিংবা, অথবা নতুবা, নয়তো, অথচ, বরং, কারণ, কারণে, মাত্রই, শীঘ্রই, উভয়ই, ছাড়া, যদি, যদিও, যে যেন, যখন, যহেতু, যথেষ্ট, যাতে, যতক্ষণ, পূর্বে, জন্য, শর্তেও, পরিবর্তে, অন্যথায়, আলবত, নিশ্চয়ই, তে, তো, পাছে, দিয়ে, দ্বারা, কর্তৃক, হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও, মতো, মতন, ন্যায়, পারা, কি/কী, কেন/কোন, বুঝি, যত—তত, এতই—যে যেমন—তেমন, যখন—তখন, যথা—তথা, যেরূপ—সেরূপ, যেই—অমনি, না—আরও, যিনি—তিনি, যে—সে, যা—তা, যা—তাই ইত্যাদি। এসব যোজককে ‘সাধারণ যোজক, বৈকল্পিব যোজন, বিরোধমূলক যোজন, কারণবাচক যোজন, সাপেক্ষ যোজন’ ইত্যাদির মধ্যে ফেলে বাক্য তৈরি করা যায়। শব্দ বা বাক্যে যোজক ব্যবহৃত হলে এদের আগে বা পরে যতি ব্যবহৃত হয় না। যোজক কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন :
১. সাধারণ যোজক : সাধারণ যোজক দুটি শব্দ বা বাক্যকে সংযুক্ত করে। শব্দ ও শব্দকে যুক্ত করতে ‘ও’ ব্যবহার করা হয়। বাক্য ও বাক্যকে যুক্ত করতে ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়। শব্দ কিংবা বাক্য দুই ধরনেই ‘আর’ ব্যবহার করা যায়। যেমন:
শব্দ যোজক: রহিম ও করিম দুই ভাই। রহিম আর করিম পরস্পর পরস্পরের সাথী। একজীবনে সুখ ও দুখ দুই ঘুরে ঘুরে আসে। আমাদের কথা আর ওদের কথার সাথে মিল রয়েছে।
বাক্য যোজক: সাকিব স্কুলে যায় এবং মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। তুমি সেখানে যাবা এবং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবা। দুটি বর্ণের মিলনে সন্ধি হয় আর দুটি শব্দের মিলনে সমাস হয়।
২. বৈকল্পিক যোজক : বৈকল্পিক যোজক একাধিক শব্দ বাক্য বা বাক্যের মধ্যে বিকল্প নির্দেশ করে। যেমন: নীল বা কালো যেকোনো একটি হলেই লেখার কাজ চলবে। তোমাকে সারাদিন খুঁজলাম অথচ তোমাকে পেলাম না। হয় তুমি না হয় তোমার ভাই কাজটি করে দেবে।
৩. বিরোধ যোজক : বিরোধমূলক যোজক দুটি বাক্যের বক্তব্যের মধ্যে সংশোধন বা বিরোধভাব প্রকাশ করে। যেমন: তোমাকে ডাকলাম কিন্তু সারা পেলাম না। এত পানি ঢাললাম তবু গায়ের গরম গেলো না।
৪. কারণ যোজক : কারণ যোজক দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোক ঘটায় যার একটি অন্যটির কারণ প্রকাশ করে। যেমন: গতকাল সামিহা স্কুলে যেতে পারে নাই কারণ সে অসুস্থ ছিল। সামিহা অসুস্থ থাকার কারণে গতকাল স্কুলে যেতে পারেনি। যেহেতু সে অসুস্থ তাই সে স্কুলে যেতে পারে নাই। সময় নাই তাই সে সম্পূর্ণ উত্তর লিখতে পারে নাই। তুমি কথারাখো নাই অতএব তোমাকে নেয়া হবে না। তাড়াতাড়ি চলো নইলে গাড়ি ধরতে পারবা না। কর্মক্ষেত্র ডিজিটাল করো নতুবা দেশ ডিজিটাল হবে না।
৫. সাপেক্ষ যোজক/শর্ত যোজক : যেসব যোজক একে অন্যের পরিপূরক তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। সাধারণত এরা দ্বিত্বযোজক হয়। যেমন: ‘যতি-তবে, যত-তত, যথা-তথা, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যেরূপ-সেরূপ’ দুটি বাক্যকে সংযুক্ত করে। যেমন: যদি তুমি আসো তবে আমি কাজটি করব। যত গর্জে তত বর্ষে না।
৬. সম্বোধন যোজক : যেসব যোজক বাক্যে প্রথমে বসে কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে তাদের সম্বোধনসূচক যোজক বলে। যেমন: হে, ওগো, ওরে, রে, গো, লো, ওই, ও ইত্যাদি।
৭. সাদৃশ্য যোজক : যেসব যোজক বাক্যে বসে বস্তুতে বস্তুতে বা প্রাণীতে প্রাণীতে তুলনা করে তাদের সাদৃশ্যসূচক যোজক বলে। অন্যভাবে বলা যায় তুলনামূলক যোজককে সাদৃশ্য যোজক বলে। যেমন: মতো, মতন, ন্যায়, পারা ইত্যাদি।
৮. প্রশ্নর সংশয় যোজক : যেসব যোজক প্রশ্ন বা সংশয় প্রকাশ করে তাদের প্রশ্ন ও সংশয় যোজক বলে। যেমন: কি/কী, কেন /কেনো, নাকি, নাকো, বুঝি ইত্যাদি।
৯. সম্মতি ও অসম্মতি যোজক : যেসব যোজক সম্মতির অসম্মতি প্রকাশ করে তাদের সম্মতি ও অসম্মতিসূচক যোজক বলে। যেমন: হ্যাঁ, আচ্ছা, হু, বটে, আজ্ঞা। না, নয়, নাই, নহে, উঁহু, মোটেও না ইত্যাদি এগুলো অসম্মতিসূচক অব্যয়।
১০. অনুকার যোজক :যেসব যোজক বাক্যে বসে ধ্বনি সৃষ্টি করে তাদের অনুকার যোজক বলে। যেমন:  কড়কড়, মরমর, ঝমঝম, শনশন, ঝুমঝুম, গুড়–গুড়, গরগর, কা কা, কুহুকুহু, কটকট, টুংটাং, ঝপাঝপ, টপাটপ, ঝাঁঝাঁ, খাঁখাঁ, কচকচ, কটকট, টলমল, ঝলমল, চকচক, ছমছম, টনটন, খটখট ইত্যাদি।
১১. দ্বিত্ব যোজক : যেসব যোজক দুটি বাক্যকে যুক্ত করতে বসে তাদের দ্বিত্ব যোজক বলে। যেমন: যত— তত, এতই—যে, যেমন— তেমন, যখন— তখন, যথা—তথা, যেরূপ— সেরূপ, যেই— অমনি, না—আরও, শুধু-আরও/ও ইত্যাদি।
আবেগশব্দ/ Interjection
যেসব শব্দ বাক্যে বসে বাক্যের ভাব বৃদ্ধি করে তাদের আবেগশব্দ বলে। যেমন: মরি মরি, উঃ /উহ্ /উঁহু, আঃ, ছি ছি, হ্যাঁ, না, কী বিপদ, হায়রে লজ্জা, আলবত, নিশ্চয়ই, বেশ তো, তো, পাছে, কী মজা, হায়, হু, বেশ, না, শাবাস, বাঃ, কী জ্বালা, আরে, অ্যাঁ, আহা, হে বন্ধু, ওরে, মাগো মা, যাক গে ইত্যাদি। এসব শব্দের পরে কমা বসে না।

Monday, 18 April 2016

পদ

পদ
বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে।
বাক্যে যখন শব্দ ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রতিটি শব্দের সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত শব্দাংশ যুক্ত হয়। এগুলোকে বলে বিভক্তি। যে সব শব্দে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় কোন বিভক্তি যুক্ত হয়নি, সে সব শব্দেও একটি বিভক্তি যুক্ত হয়। একে প্রথমা বিভক্তি বা শূণ্য বিভক্তি বলে। ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাতে বিভক্তি যুক্ত হতে হয়। আর তাই কোন শব্দ বাক্যে বিভক্তি না নিয়ে ব্যবহৃত হলেও তার সঙ্গে একটি বিভক্তি যুক্ত হয়েছে বলে ধরে নিয়ে তাকে শূণ্য বিভক্তি বলা হয়।
অর্থাৎ, বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে।
পদের প্রকারভেদ
পদ প্রধানত ২ প্রকার- সব্যয় পদ ও অব্যয় পদ।
সব্যয় পদ আবার ৪ প্রকার- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও ক্রিয়া।
অর্থাৎ, পদ মোট ৫ প্রকার
১. বিশেষ্য
২. বিশেষণ
৩. সর্বনাম
৪. ক্রিয়া
৫. অব্যয়
[শব্দের শ্রেণীবিভাগ হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি। অন্যদিকে পদের শ্রেণীবিভাগ হলো- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয়। দুইটিই ৫ প্রকার।]
যখন পর্যন্ত কোন শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হচ্ছে না, তখনো সেটি কোন পদ নয়। কোন শব্দ কোন পদ হবে তা নির্ভর করে বাক্যে কিভাবে ব্যবহৃত হলো তার উপর। তাই কোন শব্দকে আগেই বিশেষ্য বা বিশেষণ বলে দেয়া ঠিক নয়। যেমন-
তোমার হাতে কি?
ডাকাত আমার সব হাতিয়ে নিয়েছে।
জঙ্গীরা হাত বোমা মেরে পালিয়ে গেলো।
প্রথম বাক্যে হাত শব্দটি বিশেষ্য। আবার দ্বিতীয় বাক্যে এই হাত শব্দটিই একটু পরিবর্তিত হয়ে ক্রিয়া হয়ে গেছে। আবার তৃতীয় বাক্যেই আবার হাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষণ হিসেবে।
[তবে প্রশ্নে শুধু শব্দ দিয়ে সেটি কোন পদ জিজ্ঞেস করলে সাধারণত শব্দটি যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, প্রতিটি শব্দই সাধারণত একেক পদ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় একেক রূপ নেয়। যেমন, ‘হাত’ শব্দটি বিশেষণ হিসেবে কোন বিভক্তি নেয়নি, কিন্তু বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় বিভক্তি নিয়েছে। আবার ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সময় প্রত্যয় নিয়েছে। এভাবে প্রশ্নের শব্দটিকে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার করে কোন পদ নির্ণয় করা যেতে পারে।]

বিশেষ্য পদ
কোন কিছুর নামকেই বিশেষ্য বলে।
যে পদ কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত, প্রাণী, সমষ্টি, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম, গুণ ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
প্রকারভেদ
বিশেষ্য পদ ৬ প্রকার-
১. নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য
(ক) ব্যাক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল
(খ) ভৌগোলিক স্থানের নাম : ঢাকা, দিলিল, লন্ডন, মক্কা
(গ) ভৌগোলিক নাম (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদির নাম) : মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর
(ঘ) গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলি, অগ্নিবীণা, দেশেবিদেশে, বিশ্বনবী
২. জাতিবাচক বিশেষ্য :
(এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের নাম) মানুষ, গরু, গাছ, পাখি, পর্বত, নদী, ইংরেজ
৩. বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য :
বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবন, পানি
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি) :
সভা, জনতা, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল
৫. ভাববাচক বিশেষ্য (ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব বা কাজের নাম বোঝায়) :
গমন, শয়ন, দর্শন, ভোজন. দেখা, শোনা, যাওয়া, শোয়া
৬. গুণবাচক বিশেষ্য :
মধুরতা, তারল্য, তিক্ততা, তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ
 
 
 
বিশেষণ পদ
 যে পদ বাক্যের অন্য কোন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
অর্থাৎ, বিশেষণ পদ অন্য কোন পদ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা প্রকাশ করে, বা অন্য পদকে বিশেষায়িত করে।
কিছু বিশেষণ পদ : (‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা থেকে)
  • সফেদ দেয়াল
  • শান্ত ফটোগ্রাফ
  • জিজ্ঞাসু অতিথি
  • ছোট ছেলে
  • নিস্পৃহ কণ্ঠস্বর
  • তিনটি বছর (সংখ্যাবাচক বিশেষণ)
  • রুক্ষ চর
  • প্রশ্নাকুল চোখ
  • ক্ষীয়মাণ শোক
  • সহজে হয়ে গেল বলা (ক্রিয়া বিশেষণ)
প্রকারভেদ
বিশেষণ পদ ২ প্রকার- নাম বিশেষণ ও ভাব বিশেষণ।
১. নাম বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন-
  • বিশেষ্যের বিশেষণ : নীল আকাশ আর সবুজ মাঠের মাঝ দিয়ে একটি ছোট্ট পাখি উড়ে যাচ্ছে।
  • সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবানগুণবান
২. ভাব বিশেষণ :
যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ছাড়া অন্য কোন পদকে বিশেষায়িত করে, অর্থাৎ অন্য কোন পদ সম্পর্কে কিছু বলে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ ৪ প্রকার-
  • ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে বায়ু বয়। পরে এক বার এসো।
  • বিশেষণের বিশেষণ (কোন বিশেষণ যদি অন্য একটি বিশেষণকেও বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে) :
  • নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।
  • ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : রকেটি অতি দ্রুত চলে।
  • অব্যয়ের বিশেষণ (অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে) : ধিক তারে, শত ধিক নির্লজ্জ যে জন।
  • বাক্যের বিশেষণ (কোন পদকে বিশেষায়িত না করে সম্পূর্ণ বাক্যটিকেই বিশেষায়িত করে) : দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।
[না-বাচক ক্রিয়া বিশেষণ :
নি-
  • এখনো দেখ নি তুমি?
  • ফুল কি ফোটে নি শাখে?
  • পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন? রাখি নি সন্ধান
  • রহে নি, সে ভুলে নি তো
না-
  • বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?
  • রচিয়া লহ না আজও গীতি।
  • ভুলিতে পারি না কোন মতে।
নাই-
  • শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান
  • নাই হল, না হোক এবারে
  • করে নাই অর্ঘ্য বিরুন?]
নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয় তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন-
  • রাশি রাশি ভারা ভারা ধান (সোনার তরী)
  • লাল লাল কৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে।
  • নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে গেছে।
  • এত ছোট ছোট উত্তর লিখলে হবে না।

[বিশেষণবাচক ‘কী’
কী-শব্দটির একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে বিশেষণ হিসেবে এর ব্যবহার।
যেমন, ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতায় :
  • এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
  • নিজেই চমকে, কী নিস্পৃহ, কেমন শীতল।
  • কী সহজে হয়ে গেল বলা। (ক্রিয়াবিশেষণের বিশেষণ/ বিশেষণের বিশেষণ)]
[বিশেষণ সম্বন্ধ
  • পাথরের টুকরো
  • আমাদের গ্রামের পুকুর
  • গ্রীষ্মের পুকুর
  • শোকের নদী
  • আমার সন্তান]

বিশেষণের অতিশায়ন (degree)
বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের মধ্যে তুলনা বোঝায়, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের একরকম অতিশায়ন প্রচলিত আছে, আবার তৎসম শব্দে সংস্কৃত ভাষার অতিশায়নের নিয়মও প্রচলিত আছে।
ক) বাংলা শব্দের বা তদ্ভব শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে অতিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মাঝে চাইতে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়। যেমন-
  • গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি।
  • বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।
ব্যতিক্রম : কখনো কখনো প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন-
  • এ মাটি সোনা বাড়া। (সোনার চেয়েও বাড়া)
২. বহুর মধ্যে অতিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে, সর্বাপেক্ষা, সবথেকে, সবচেয়ে,সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
  • তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান।
  • পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান।
৩. দুয়ের মধ্যে অতিশায়নে জোর দিতে গেলে মূল বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম অধিকতর, ইত্যাদি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন-
  • পদ্মফুল গোলাপের চাইতে বেশি সুন্দর।
  • ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী।
  • কমলার চাইতে পাতিলেবু অল্প ছোট।
খ) তৎসম শব্দের অতিশায়ন
১. দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘তম’ যোগ হয়। যেমন-
  • গুরু- গুরুতর- গুরুতম
  • দীর্ঘ- দীর্ঘতর- দীর্ঘতম
[তবে কোনো বিশেষণের শেষে ‘তর’ যোগ করলে সেটা যদি আবার শ্রচতিকটু হয়ে যায়, শুনতে খারাপ লাগে, তখন বিশেষণটির শেষে ‘তর’ যোগ না করে বিশেষণের আগে ‘অধিকতর’ শব্দটি যোগ করা হয়। যেমন- ‘অধিকতর সুশ্রী’।]
২. আবার, দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ঈয়স’ প্রত্যয় যুক্ত হয়
বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে ‘ইষ্ঠ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন-
  • লঘু- লঘীয়ান- লঘিষ্ঠ
  • অল্প- কনীয়ান- কনিষ্ঠ
  • বৃদ্ধ- জ্যায়ান- জ্যেষ্ঠ
  • শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ
[দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না। অর্থাৎ, বাংলায় লঘীয়ান, কনীয়ান, জ্যায়ান, শ্রেয়ান, ইত্যাদি শব্দগুলোর প্রচলন নেই। তবে ‘ঈয়স’ প্রত্যয়যুক্ত কতোগুলো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।]



সর্বনাম পদ
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকেই সর্বনাম পদ বলে।
অনুচ্ছেদে বা প্যারাগ্রাফে একই বিশেষ্য পদ বারবার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একই পদ বারবার ব্যবহার করলে তা শুনতে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এই পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশেষ্য পদের পরিবর্তে অনুচ্ছেদে যে বিকল্প শব্দ ব্যবহার করে সেই বিশেষ্য পদকেই বোঝানো হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
[সর্বনাম পদগুলো সব বিশেষ্য বা নামের পরিবর্তে বসতে পারে বলে এদেরকে ‘সর্বনাম’ বলে।]
‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ। এই দেশটি যেমন সুন্দর, এই দেশের মানুষগুলোও তেমনি ভালো। তারা এতোটাই ভদ্র ও মার্জিত যে, তাদের কাছে ভিখারি ভিক্ষা চাইতে আসলে তারা তাদের বিতাড়িত করে না। বরং মার্জিতভাবে বলে, মাফ করেন।’
উপরের অনুচ্ছেদে মূলত ৩টি বিশেষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশের মানুষ’ ও ‘ভিখারি’। এবং প্রথমবার উল্লেখের পর দ্বিতীয়বার কোন বিশেষ্যই আর উল্লেখ করা হয়নি। পরের বার থেকে ‘বাংলাদেশ’-র বদলে ‘এই দেশ’; ‘বাংলাদেশের (এই দেশের) মানুষ’-র বদলে ‘তারা’ ও ‘তাদের’ এবং ‘ভিখারি’-র বদলে ‘তাদের’ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ্য পদের বদলে ব্যবহৃত এই শব্দগুলোই হলো সর্বনাম পদ।
প্রকারভেদ
সর্বনাম পদগুলোকে মূলত ১০ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক     : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা
২. আত্মবাচক             : স্বয়ং, নিজ, খোদ, আপনি
৩. সামীপ্যবাচক        : এ, এই, এরা, ইহারা, ইনি
৪. দূরত্ববাচক             : ঐ, ঐসব, সব
৫. সাকল্যবাচক         : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ
৬. প্রশ্নবাচক                 : কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কিসে
৭. অনির্দিষ্টতাজ্ঞাপক   : কোন, কেহ, কেউ, কিছু
৮. ব্যতিহারিক               : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর
৯. সংযোগজ্ঞাপক          : যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা
১০. অন্যাদিবাচক          : অন্য, অপর, পর

সাপেক্ষ সর্বনাম : কখনও কখনও পর্সপর সম্পর্কযুক্ত একাধিক সর্বনাম পদ একই সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে দুটি বাক্যের সংযোগ সাধন করে থাকে। এদেরকে বলা হয় সাপেক্ষ সর্বনাম। যেমন-
  • যত চাও তত লও (সোনার তরী)
  • যত চেষ্টা করবে ততই সাফল্যের সম্ভাবনা।
  • যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা।
  • যত গর্জে তত বর্ষে না।
  • যেই কথা সেই কাজ।
  • যেমন কর্ম তেমন ফল।
  • যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল।



ক্রিয়া পদ
যে পদ দিয়ে কোন কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
অর্থাৎ, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করা বা কোন কাজ সংঘটন হওয়াকে বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কাল অনুযায়ী ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন, ‘পড়্’ একটি ধাতু। এর সঙ্গে উত্তম পুরুষ ও সাধারণ বর্তমান কাল অনুযায়ী ‘ই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয় ‘পড়ি’ ক্রিয়াপদটি। আবার মধ্যম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ো’। নাম পুরুষের জন্য হবে ‘পড়ে’। আবার উত্তম পুরুষের জন্য ঘটমান বর্তমান কালের জন্য হবে ‘পড়ছি’। সাধারণ অতীত কালের জন্য হবে ‘পড়েছি’।
[ক্রিয়া পদ বাক্যের অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু ক্রিয়াপদ নিয়ে একটি বাক্য গঠিত হতে পারে। কিন্তু ক্রিয়া পদ ছাড়া কোন বাক্য গঠিত হতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে অনেক বাক্যের ক্রিয়াপদটি উহ্য থাকে। যেমন- ‘রমেশ আমার ভাই (হয়)।’ এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়াটি উহ্য থাকে, এটি না লিখলেও সবাই বুঝতে পারে। আর তাই এটি লেখাও হয় না। কিন্তু এটা আবার ইংরেজি করলে ‘হয়’-র ইংরেজি লেখা হয়- Ramesh is my brother.
সাধারণত, ‘হ্’ ও আছ্’ ধাতু বা ক্রিয়ামূল দ্বারা গঠিত ক্রিয়া পদগুলো উহ্য থাকে।]
ক্রিয়ার প্রকারভেদ
১. সমাপিকা-অসমাপিকা ক্রিয়া
বাক্যের ভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া, এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।
সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া পদ বাক্যকে সম্পূর্ণ করে, আর কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা বাকি থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
একটি বাক্যে একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতেই হয়। এবং একটি বাক্যে একটার বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে না। যেমন-
  • ছেলেরা খেলছে। ছেলেরা খেলা করছে
দ্বিতীয় বাক্যে ‘খেলা’ সমাপিকা ক্রিয়া নয়। এ জন্য ‘করছে’ সমাপিকা ক্রিয়া আনতে হয়েছে। নয়তো বাক্যটি সম্পূর্ণ হচ্ছে না।
অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া পদ দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্য সম্পূর্ণ হয় না, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহারের পরও বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। শুধু অসমাপিকা ক্রিয়া দিয়ে বাক্য গঠিত হয় না।
একটি বাক্যে যতোগুলো ইচ্ছা অসমাপিকা ক্রিয়া ব্যবহার করা যায়। কিন্তু একটি সমাপিকা ক্রিয়া আনতেই হয়। যেমন-
  • ছেলেরা খেলা
এখানে খেলা একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। ক্রিয়া পদ হলেও এটি দিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি, আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরেকটি সমাপিকা ক্রিয়া ‘করছে’ যোগ করলেই কেবল বাক্যটি সম্পূর্ণ হবে।
  • ছেলেরা খেলা করছে।
সাধারণত অসমাপিকা ক্রিয়ার শেষে ইয়া, ইলে, ইতে, এ, লে, তে বিভক্তিগুলো যুক্ত থাকে।

২. সকর্মক-অকর্মক-দ্বিকর্মক ক্রিয়া
বাক্যে ক্রিয়ার কর্মের উপর ভিত্তি করে ক্রিয়াপদকে অকর্মক, সকর্মক ও দ্বিকর্মক- এই ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
কর্ম পদ : যে পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়া পদ তার কাজ সম্পাদন বা সংঘটন করে, তাকে কর্ম পদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়া পদ কাজ করার জন্য যেই পদকে ব্যবহার করে, তাকে কর্ম পদ বলে।
ক্রিয়া পদকে ‘কী/ কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, সেটিই কর্মপদ। আর যদি উত্তর না পাওয়া যায়, তবে সেই ক্রিয়ার কোন কর্মপদ নেই। যেমন-
  • মেয়েটি কলম কিনেছে।
  • মেয়েটি হাসে।
এখানে প্রথম বাক্যে ক্রিয়াপদ ‘কিনেছে’কে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘কলম’। (কী কিনেছে?- কলম) অর্থাৎ, প্রথম বাক্যের ক্রিয়ার কর্মপদ কলম।
আবার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘হাসে’কে ‘কী/ কাকে’ কোনটা দিয়ে প্রশ্ন করলেই কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, এই বাক্যের ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই।
অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কোন কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।
সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের কর্ম পদ আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
দ্বিকর্মক ক্রিয়া : কখনো কখনো একটি বাক্যে একই ক্রিয়াপদের দুটি কর্ম পদ থাকে। তখন সেই ক্রিয়াপদকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। এক্ষেত্রে, বস্তুবাচক কর্মপদকে প্রধান বা মুখ্য কর্ম বলে এবং ব্যক্তিবাচক কর্মপদকে গৌণ কর্ম বলে। অর্থাৎ, বস্তুবাচক কর্মটিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন- ‘বাবা আমাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন।’
এখানে ‘কিনে দিয়েছেন’ ক্রিয়ার কর্মপদ দুটি, ‘আমাকে’ (কাকে কিনে দিয়েছেন?) ও ‘ল্যাপটপ’ (কী কিনে দিয়েছেন?)। এখানে বস্ত্তবাচক কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদ ‘আমাকে’। সুতরাং এখানে মুখ্য বা প্রধান কর্মপদ ‘ল্যাপটপ’ আর গৌণ বা অপ্রধান কর্ম ‘আমাকে’।
সমধাতুজ কর্ম : বাক্যের ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ যদি একই ধাতু বা ক্রিয়ামূল থেকে গঠিত হয়, তবে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই শব্দমূল থেকে গঠিত হলে তাকে সমধাতুজ কর্মপদ বলে। যেমন-
  • আজ এমন ঘুম ঘুমিয়েছি।
এখানে ক্রিয়াপদ ‘ঘুমিয়েছি’, আর কর্মপদ ‘ঘুম’ (কী ঘুমিয়েছি?)। আর এই ‘ঘুমিয়েছি’ আর ‘ঘুম’ দুটি শব্দেরই শব্দমূল ‘ঘুম্’। অর্থাৎ, শব্দ দুইটি একই ধাতু হতে গঠিত (ক্রিয়ার মূলকে ধাতু বলে)। সুতরাং, এই বাক্যে ‘ঘুম’ কর্মটি একটি সমধাতুজ কর্ম। এরকম-
  • আজ কী খেলা খেললাম। (খেল্)
  • আর মায়াকান্না কেঁদো না। (কাঁদ্)
  • এমন মরণ মরে কয়জনা? (মর্)

৩. প্রযোজক ক্রিয়া
যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনায় আরেকজন করে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।
প্রযোজক ক্রিয়ার দু’জন কর্তা থাকে। এরমধ্যে একজন কর্তা কাজটি আরেকজন কর্তাকে দিয়ে করান। অর্থাৎ, একজন যখন আরেকজনকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেয়, তখন সেই ক্রিয়াপদটিকে বলে প্রযোজক ক্রিয়া। [সংস্কৃত ব্যাকরণে এরই নাম ণিজন্ত ক্রিয়া।]
প্রযোজক ক্রিয়ার দুইজন কর্তার মধ্যে যিনি কাজটি করান, তাকে বলে প্রযোজক কর্তা। আর যিনি কাজটি করেন, তাকে বলে প্রযোজ্য কর্তা। তাকে দিয়ে কাজটি প্রযোজ্য করা হয় বলে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন-
  • মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
এখানে চাঁদ দেখার কাজটি করছে ‘শিশু’, কিন্তু চাঁদ দেখাচ্ছেন ‘মা’। অর্থাৎ, ‘মা’ কাজটি প্রযোজনা করছেন। তাই ‘মা’ এখানে প্রযোজক কর্তা। আর চাঁদ দেখার কাজটি আসলে ‘শিশু’ করছে, তাই ‘শিশু’ এখানে প্রযোজ্য কর্তা। এরকম-
  • সাপুড়ে সাপ খেলায়। (এখানে সাপুড়ে প্রযোজক কর্তা, আর সাপ প্রযোজ্য কর্তা)

৪. নামধাতুর ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে সব ধাতু গঠিত হয়, তাদেরকে নামধাতু বলে। নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যেসব ক্রিয়াপদ গঠন করে, তাদেরকেই নামধাতুর ক্রিয়া বলে।
যেমন-
  • বিশেষ্য = বেত+আ = বেতা, ক্রিয়াপদ = বেতানো, বেতাচ্ছেন, বেতিয়ে
  • বিশেষণ = বাঁকা+আ = বাঁকা, ক্রিয়াপদ = বাঁকানো, বাঁকাচ্ছেন, বাঁকিয়ে
  • ধ্বন্যাত্মক অব্যয় = কন কন+আ = কনকনা, ক্রিয়াপদ = কনকনাচ্ছে, কনকনিয়ে
বাক্যে প্রয়োগ- লোকটি ছেলেটিকে বেতাচ্ছে।
  • কঞ্চিটি বাঁকিয়ে ধর।
  • দাঁত ব্যথায় কনকনাচ্ছে। অজগরটি ফোঁসাচ্ছে।
ব্যতিক্রম : কয়েকটি নামধাতু ‘আ’ প্রত্যয় ছাড়াই ধাতু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
  • ফল = বাগানে এবার অনেক আম ফলেছে।
  • টক = তরকারি বাসি হলে টকে।
  • ছাপা = প্রকাশক তার বইটা এবার মেলায় ছেপেছে।

 ৫. যৌগিক ক্রিয়া
একটি সমাপিকা ক্রিয়া ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি বসে যদি কোন বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া মিলে যদি তাদের সাধারণ অর্থ প্রকাশ না করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন-
  • ঘটনাটা শুনে রাখ। (শোনার বদলে তাগিদ দেয়া অর্থ বুঝিয়েছে)
  • তিনি বলতে লাগলেন। (বলার অর্থ সম্প্রসারণ করে নিরন্তর বলা বুঝিয়েছে)
  • ছেলেমেয়েরা শুয়ে পড়ল। (শোওয়ার পাশাপাশি দিনের কার্যসমাপ্তিও বোঝাচ্ছে)
  • সাইরেন বেজে উঠল। (আকস্মিক সাইরেন বাজার কথা বলা হচ্ছে)
  • শিক্ষায় মন সংস্কারমুক্ত হয়ে থাকে। (অভ্যস্ততা অর্থে, ধীরে ধীরে সংস্কারমুক্ত হয় বোঝাচ্ছে)
  • এখন যেতে পার। (যাওয়ার বদলে অনুমোদন অর্থে)

৬. মিশ্র ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা, কাট্, গা, ছাড়্, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-
বিশেষ্যের পরে :
  • আমরা তাজমহল দর্শন করলাম।
  • গোল্লায় যাও।
বিশেষেণের পরে :
  • তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম।
ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে :
  • মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।
[খেয়াল রাখতে হবে, যৌগিক ক্রিয়া দুইটি ক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যার একটি সমাপিকা ক্রিয়া আরেকটি অসমাপিকা ক্রিয়া। অন্যদিকে, মিশ্র ক্রিয়া বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ক্রিয়াপদ বসে গঠিত হয়।]

পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপ
পুরুষ সাধারণ সম্ভ্রমাত্মক তুচ্ছার্থক/ ঘনিষ্ঠার্থক
উত্তম পুরুষ আমি যাই আমরা যাই ——— ——–
মধ্যম পুরুষ তুমি যাও তোমরা যাও আপনি যান আপনারা যান তুই যা তোরা যা
নাম পুরুষ সে যায় তারা যায় তিনি যান তাঁরা যান এটা যায় এগুলো যায়
[উত্তম পুরুষ : বাক্যের বক্তাই উত্তম পুরুষ। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি বাক্যটি বলেছে, সেই উত্তম পুরুষ। উত্তম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।
মধ্যম পুরুষ : বাক্যের উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। অর্থাৎ, উত্তম পুরুষ যাকে উদ্দেশ্য করে বাক্যটি বলে, এবং পাশাপাশি বাক্যেও উল্লেখ করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট শ্রোতাই মধ্যম পুরুষ। মধ্যম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোমাদিগকে, আপনি, আপনার, আপনাদের, ইত্যাদি।
নামপুরুষ : বাক্যে বক্তা অনুপস্থিত যেসব ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর উল্লেখ করেন, তাদের নামপুরুষ বলে। অর্থাৎ, বক্তার সামনে নেই এমন যা কিছুর কথা বক্তা বাক্যে বলেন, সবগুলোই নামপুরুষ। নাম পুরুষের সর্বনামের রূপ হলো- সে, তারা, তাহারা, তাদের, তাহাকে, তিনি, তাঁকে, তাঁরা, তাঁদের, ইত্যাদি।]




অব্যয় পদ
 অব্যয় শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘ন ব্যয়’, অর্থাৎ যার কোন ব্যয় নেই।
যে পদের কোন ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। অর্থাৎ, যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থাকে, যার সঙ্গে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না এবং পুরুষ বা বচন বা লিঙ্গ ভেদে যে পদের রূপের বা চেহারারও কোন পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে।
অব্যয় পদ বাক্যে কোন পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে কখনো বাক্যকে আরো শ্রচতিমধুর করে, কখনো একাধিক পদ বা বাক্যাংশ বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
বাংলা ভাষায় ৩ ধরনের অব্যয় শব্দ ব্যবহৃত হয়-
১. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হাঁ, না
২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত।
‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ এই দুটি অব্যয় শব্দও তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। তবে এ দুটি অব্যয় শব্দের অর্থ বাংলা ভাষায় এসে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংস্কৃতে ‘এবং = এমন’ আর ‘সুতরাং = অত্যন্ত, অবশ্য’
বাংলায় ‘এবং = ও’     আর ‘সুতরাং = অতএব’
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা

অব্যয়ের প্রকারভেদ
অব্যয় পদ মূলত ৪ প্রকার-
১. সমুচ্চয়ী অব্যয় :
যে অব্যয় পদ একাধিক পদের বা বাক্যাংশের বা বাক্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে। এই সম্পর্ক সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন যে কোনটিই হতে পারে। একে সম্বন্ধবাচক অব্যয়ও বলে।
সংযোজক অব্যয় : উচ্চপদ ও সামাজিক মর্যাদা সকলেই চায়। (উচ্চপদ, সামাজিক মর্যাদা- দুটোই চায়)
তিনি সৎ, তাই সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করে। (তাই অব্যয়টি ‘তিনি সৎ’ ও ‘সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে’ বাক্য দুটির মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে।
এরকম- ও, আর, তাই, অধিকন্তু, সুতরাং, ইত্যাদি।
ক) বিয়োজক অব্যয় :
আবুল কিংবা আব্দুল এই কাজ করেছে। (আবুল, আব্দুল- এদের একজন করেছে, আরেকজন করেনি। সম্পর্কটি বিয়োগাত্মক, একজন করলে অন্যজন করেনি।)
মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। (‘মন্ত্রের সাধন’ আর ‘শরীর পাতন’ বাক্যাংশ দুটির একটি সত্য হবে, অন্যটি মিথ্যা হবে।)
এরকম- কিংবা, বা, অথবা, নতুবা, না হয়, নয়তো, ইত্যাদি।
খ) সংকোচক অব্যয় :
তিনি শিক্ষিত, কিন্তু অসৎ। (এখানে ‘শিক্ষিত’ ও ‘অসৎ’ দুটোই সত্য, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটেনি। কারণ, বৈশিষ্ট্য দুটো একরকম নয়, বরং বিপরীতধর্মী। ফলে তিনি অসৎ বলে তিনি শিক্ষিত বাক্যাংশটির ভাবের সংকোচ ঘটেছে।)
এরকম- কিন্তু, বরং, তথাপি, যদ্যপি, ইত্যাদি।

২. অনন্বয়ী অব্যয় : যে সব অব্যয় পদ নানা ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। এগুলো বাক্যের অন্য কোন পদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
উচ্ছ্বাস প্রকাশে                : মরি মরি! কী সুন্দর সকাল!
স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি প্রকাশে  : হ্যা, আমি যাব। না, তুমি যাবে না।
সম্মতি প্রকাশে                : আমি আজ নিশ্চয়ই যাব।
অনুমোদন প্রকাশে            : এতো করে যখন বললে, বেশ তো আমি আসবো।
সমর্থন প্রকাশে                 : আপনি তো ঠিকই বলছেন।
যন্ত্রণা প্রকাশে                  : উঃ! বড্ড লেগেছে।
ঘৃণা বা বিরক্তি প্রকাশে      : ছি ছি, তুমি এতো খারাপ!
সম্বোধন প্রকাশে               : ওগো, তোরা আজ যাসনে ঘরের বাহিরে।
সম্ভাবনা প্রকাশে               : সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/ পাছে লোকে কিছু বলে।
বাক্যালংকার হিসেবে         : কত না হারানো স্মৃতি জাগে আজ মনে।
: হায়রে ভাগ্য, হায়রে লজ্জা, কোথায় সভা, কোথায় সজ্জা।

৩. অনুসর্গ অব্যয় :
যেসব অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বিভক্তির কাজ করে, এবং কারকবাচকতা প্রকাশ করে, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। অর্থাৎ, যেই অব্যয় অনুসর্গের মতো ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন-
ওকে দিয়ে এ কাজ হবে না। (এখানে ‘দিয়ে’ তৃতীয়া বিভক্তির মতো কাজ করেছে, এবং ‘ওকে’ যে কর্ম কারক, তা নির্দেশ করেছে। এই ‘দিয়ে’ হলো অনুসর্গ অব্যয়।)
[কারক ও বিভক্তি]    [অনুসর্গ]

৪. অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় :
বিভিন্ন শব্দ বা প্রাণীর ডাককে অনুকরণ করে যেসব অব্যয় পদ তৈরি করা হয়েছে, তাদেরকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বলে।
মানুষ আদিকাল থেকেই অনুকরণ প্রিয়। তারা বিভিন্ন ধরনের শব্দ, প্রাকৃতিক শব্দ, পশুপাখির ডাক, যেগুলো তারা উচ্চারণ করতে পারে না, সেগুলোও উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছে। এবং তা করতে গিয়ে সে সকল শব্দের কাছাকাছি কিছু শব্দ তৈরি করেছে। বাংলা ভাষার এ সকল শব্দকে বলা হয় অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়। যেমন-
  • বজ্রের ধ্বনি- কড় কড়
  • তুমুল বৃষ্টির শব্দ- ঝম ঝম
  • স্রোতের ধ্বনি- কল কল
  • বাতাসের শব্দ- শন শন
  • নূপুরের আওয়াজ- রুম ঝুম
  • সিংহের গর্জন- গর গর
  • ঘোড়ার ডাক- চিঁহি চিঁহি
  • কোকিলের ডাক- কুহু কুহু
  • চুড়ির শব্দ-টুং টাং
শুধু বিভিন্ন শব্দই না, মানুষ তাদের বিভিন্ন অনুভূতিকেও শব্দের আকারে ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি প্রকাশের জন্য তারা বিভিন্ন শব্দ তৈরি করেছে। এগুলোও অনুকার অব্যয়। যেমন-
  • ঝাঁ ঝাঁ (প্রখরতা)
  • খাঁ খাঁ (শূণ্যতা)
  • কচ কচ
  • কট কট
  • টল মল
  • ঝল মল
  • চক চক
  • ছম ছম
  • টন টন
  • খট খট

কিছু বিশেষ অব্যয়
১. অব্যয় বিশেষণ : কোন অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণের কাজ করলে, তাকে অব্যয় বিশেষণ বলে।
  • নাম বিশেষণ : অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
  • ক্রিয়া বিশেষণ : আবার যেতে হবে।
  • বিশেষণীয় বিশেষণ : রকেট অতি দ্রচত চলে।
২. নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ : কিছু কিছু যুগ্ম অব্যয় আছে, যারা বাক্যে একসাথে ব্যবহৃত হয়, এবং তাদের একটির অর্থ আরেকটির উপর নির্ভর করে। এদের নিত্য সম্বন্ধীয় বিশেষণ বলে। যেমন- যথা-তথা, যত-তত, যখন-তখন, যেমন-তেমন, যে রূপ-সে রূপ, ইত্যাদি। উদাহরণ-
  • যত গর্জে তত বর্ষে না।
  • যেমন কর্ম তেমন ফল।
৩. ত প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ : ত প্রত্যয়ান্ত কিছু তৎসম অব্যয় বাংলায় ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃততে প্রত্যয়টি ছিল ‘তস্’, বাংলায় তা হয়েছে ‘ত’। যেমন- ধর্মত, দুর্ভাগ্যবশত, অন্তত, জ্ঞানত, ইত্যাদি।