Showing posts with label ধ্বনি. Show all posts
Showing posts with label ধ্বনি. Show all posts

Wednesday, 18 May 2016

ধ্বনি, বর্ণ ও বর্ণমালা

মানুষ ‘কথা’ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। এই ‘কথা’ কিছু অর্থবোধক ধ্বনি দিয়ে তৈরি। ধ্বনি উচ্চারণের উপর নির্ভরশীল। ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান এবং ক্ষুদ্রতম একক। ভাষা উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম অংশই ধ্বনি। তাই বলা হয়, ধ্বনি দিয়েই ভাষা তৈরি হয়। ভাষার অন্যান্য মৌলিক উপাদানের মধ্যে আছে-বর্ণ, শব্দ, পদ, বাক্য, অর্থ। সাধারণ অর্থে ধ্বনি হলো যেকোনো ধরণের শব্দ বা আওয়াজ কিন্তু ব্যাকরণের ভাষায় ধ্বনি হলো অর্থবোধক মুখের আওয়াজ যা বাগযন্ত্রের সাহায্যে তৈরি করা হয়। বাগযন্ত্র হলো একপ্রকার মানবপ্রত্যঙ্গ ‘ঠোঁট/ওষ্ঠ্য, তালু—অগ্রতালু, পশ্চাৎতালু, নাসিকা/নাক, দন্ত্য/দাঁত—অগ্রদন্ত্য, পশ্চাৎদন্ত্য, জিভ—অগ্রতালু, পশ্চাৎতালু, আলজিভ, কণ্ঠ, ফুসফুস’ যাদের সাহায্যে ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
যেকোনো ভাষার ধ্বনিগুলো লেখার জন্য কিছু চিহ্ন বা রূপ ব্যবহার করা হয়। ধ্বনির লিখিতরূপ বা চিহ্নকে বর্ণ বলে। বাংলা ভাষায় মোট ধ্বনি বা বর্ণ ৫০টি। এর মধ্যে স্বরধ্বনি বা বর্ণ ১১টি আর ব্যঞ্জনধ্বনি বা বর্ণ ৩৯টি। লিখিত বর্ণগুলো নির্দিষ্টক্রমে সাজিয়ে একটি তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এই তালিকায় উল্লিখিত সব বর্ণকে একসঙ্গে বর্ণমালা বলে। বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ থাকে। যেমন:
স্বরবর্ণ : অ আ ই ঈ /উ ঊ ঋ /এ ঐ ও ঔ
ব্যঞ্জনবর্ণ     : ক খ গ ঘ ঙ /চ ছ জ ঝ ঞ /ট ঠ ড ঢ ণ /ত থ দ ধ ন /প ফ ব ভ ম /য র ল শ ষ /স হ ড় ঢ় য় /ৎ ংঃ ঁ
‘অ’ উচ্চারণ বিরতি দুটি বর্ণকে হসবর্ণ বলে। অ-কারের লোপ বোঝাতে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হসচিহ্ন বলে। এদের ‘হস/হল/হসন্ত’ নামেও ডাকা হয়। এরা স্বতন্ত্র বর্ণ নয়। এরা ত, ঙ-এর খণ্ডরূপ মাত্র। যেমন: ৎ ং।
ধ্বনি হলো উচ্চারণগত অবস্থা আর বর্ণ হলো ধ্বনির লিখিত অবস্থা তাই ধ্বনির বর্ণ একসঙ্গে প্রকাশ করা যায়। ধ্বনি বা বর্ণ দুই প্রকার। যেমন: স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনধ্বনি ও ব্যঞ্জনবর্ণ।
স্বরধ্বনির স্বরবর্ণের পরিচয়
স্বরধ্বনি
ফুসফুসগত বাতাস কোথাও বাঁধা না পেয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন: অ আ /ই ঈ/ উ ঊ/ ঋ /এ ঐ/ ও ঔ। স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে ফুসফুস থেকে আগত বাতাস কোথাও কোন রকম ব্যাঘাত ছাড়াই মুখগহ্বরের মধ্য দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং উচ্চারণকালে ধ্বনি দ্বারা কম্পিত হয়। তবে কিছু কিছু স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বাতাস একই সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে বের হয়। সাধারণত তিনটি মানদণ্ড দ্বারা স্বরধ্বনির উচ্চারণগত চরিত্র বিচার করা হয়। যেমন : জিভের উচ্চতা জিভের অগ্রপশ্চাৎ অবস্থান ও ঠোঁটের আকৃতি। এছাড়া আরও কিছু মানদণ্ড আছে। যেমন : বাংলা স্বরধ্বনি উচ্চারণের ক্ষেত্রে যেগুলোর গুরুত্ব যথেষ্ট। যেমন : আলজিভ ও কোমল তালুর অবস্থা। আলজিভের অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলো মৌখিকও আনুনাসিক স্বর হিসেবে নির্দেশ করা হয়।
স্বরধ্বনিমূল বা স্বরবর্ণমূল
বাংলা ভাষায় সাতটি স্বরধ্বনির স্বরবর্ণমূল রয়েছে। এদের মৌলিক স্বরধ্বনির মৌলিক স্বরবর্ণ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যেসব স্বরধ্বনি বিশ্লেষণ করলে অন্য কোন স্বরধ্বনি পাওয়া যায় না তাদের মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। অথবা একক স্বরধ্বনিকে স্বরধ্বনি বলে। আর যেসব স্বরবর্ণকে বিশ্লেষণ করলে অন্য কোন স্বরবর্ণ পাওয়া যায় না তাদের মৌলিক স্বরবর্ণ বলে। যেমন: অ আ অ্যা ই উ এ ও।
নাসিক্য/আনুনাসিক স্বরধ্বনির নাসিক্য আনুনাসিক স্বরবর্ণ
বাংলা ভাষায় যে সাতটি মৌলিক স্বরধ্বনি তারা বাংলাদেশে আনুনাসিক উচ্চারণ কম হলেও পশ্চিমবঙ্গে এদের নাসিক্য উচ্চারণ বেশি। যেসব স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণ উচ্চারণ নাসিক্যপ্রধান তাদের নাসিক্য আনুনাসিক স্বরধ্বনি বা নাসিক্য স্বরবর্ণ বলে। যেমন: অঁ আঁ অ্যাঁ ইঁ উঁ এঁ ওঁ।
মাত্রাগত স্বরধ্বনির বর্ণ
বর্ণকে সংখ্যা থেকে আলাদা করতে এবং বর্ণের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বর্ণের উপরে যে রেখা ব্যবহার করা হয় তাকে মাত্রা বলে। যেমন :
স্বরমাত্রা : স্বরবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ব্যঞ্জনমাত্রা : ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়।
পূর্ণমাত্রার স্বরবর্ণ : যে মাত্রা স্বরবর্ণের উপরে পূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করে। যেমন: অ আ/ই ঈ/উ ঊ।
অর্ধ মাত্রার স্বরবর্ণ : যে মাত্রা স্বরবর্ণের উপরে অর্ধ অবস্থায় অবস্থান করে। যেমন: ঋ।
মাত্রাহীন স্বরবর্ণ : স্বরবর্ণের উপরে মাত্রা অবস্থান করে না। যেমন: এ ঐ /ও ঔ।
স্বরচিহ্ন /স্বরকারগত স্বরধ্বনির বর্ণ
স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে স্বরচিহ্ন বা স্বরকার বলে। স্বরধ্বনির লিখিত চিহ্ন হলো স্বরচিহ্ন বা স্বরকার। যেমন: আ-া, ই-,ি ঈ- ী, উ- ু, ঊ- ূ, এ-,ে ঐ-,ৈ ও-াে, ঔ-ে ৗ। আরেকটা আছে যেটা অ্যা-কার ও য-ফলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন: ব্যাখ্যা, অ্যাসিড। ঋ-বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইতে ঋ-কার হিসেবে ধরা হয়নি। তাহলে এটি ঋ-কার (ৃ) না হয়ে ঋ-ফলা হবে।
অর্ধস্বরধ্বনি বা অর্ধস্বরবর্ণ
যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি আংশিকভাবে খোলা থাকে তাকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে। বাংলায় চারটি অর্ধস্বরধ্বনি ও বর্ণ পাওয়া যায় যাদের উচ্চারণ সরাসরি উচ্চ ও উচ্চমধ্য, সম্মুখর পশ্চাৎ ভাগে ভাগ করা যায়। এদের উচ্চারণ অর্ধ অর্থাৎ হ্রস্বপ্রধান। যেমন: সম্মুখ উচ্চ/সংবৃত: ই্। পশ্চাৎ উচ্চ/সংবৃত: উ্। সম্মুখ উচ্চমধ্য/অর্ধসংবৃত: এ্। পশ্চাৎ উচ্চমধ্য/ অর্ধসংবৃত: ও্।
দ্বিস্বর স্বরধ্বনির দ্বিস্বর স্বরবর্ণ/যৌগিক স্বরধ্বনি
/দ্বৈত স্বরধ্বনি/দ্বিত্ব স্বরধ্বনি/যুগ্ম /সন্ধিস্বর /সান্ধ্যক্ষর
যেসব স্বরধ্বনি বিশ্লেষণ করলে দুটি স্বরধ্বনি পাওয়া যায় তাদের দ্বিস্বর স্বরধ্বনি বলে। অথবা দুটি স্বরধ্বনি দিয়ে গঠিত ধ্বনিকে দ্বিস্বর স্বরধ্বনি বলে। অথবা দুটি স্বরধ্বনির মিলনে যে ধ্বনি তৈরি হয় তাদের যৌগিক বা দ্বৈত বা দ্বিত্ব স্বরধ্বনি বলে। আর যেসব স্বরবর্ণ বিশ্লেষণ করলে দুটি স্বরবর্ণ পাওয়া যায় তাদের দ্বিস্বর স্বরবর্ণ বলে। যেমন: ঐ/ও+ই, ঔ /ও+উ। এদের স্বরবর্ণ ও স্বরচিহ্ন আছে। এছাড়া অও/লয়, অয়/হয়, রয়/কয়, আই/ভাই, আউ/লাই, আএ/ খায়, আও/যাও, ইই/দিই, ইউ/শিউলি, ইএ/বিয়ে, ইও/নিও, উই/ভুঁই উআ/কুয়া, এআ/দেয়া, এই/সেই, এও/খেও, রও/ শোও দ্বিস্বর স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণ হিসেবে পরিচিত।
ব্যঞ্জনধ্বনির ব্যঞ্জনবর্ণের পরিচয়
ফুসফুসগত বাতাস কোথাও না কোথাও বাধা পেয়ে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। বর্ণমালায় এদের সঙ্গে ‘অ’ যোগে উচ্চারিত হয়। যেমন: ক খ গ ঘ ঙ/চ ছ জ ঝ ঞ /ট ঠ ড ঢ ণ /ত থ দ ধ ন /প ফ ব ভ ম /য র ল শ ষ /স হ/ড় ঢ় য় ৎ/ং ঃ ঁ।
‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইতে বলা হয়েছে, ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চাণের সময়ে ধ্বনি-উৎপাদক বাতাস মুখের বাইরে বের হওয়ার পূর্বে বাক্প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নরকম বাধা পায়। এই বাধাকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন : সম্পূর্ণ বাধা, আংশিক বাধা, ঘর্ষণজাত বাধা এবং গতিপথ পরিবর্তনজনিত বাধা।
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ
ফুসফুস-আগত বাতাস বাক্প্রত্যঙ্গের ঠিক যেখানে বাঁধা পাওয়ার ফলে কোন ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় সে স্থানটিই হলো সেই নির্দিষ্ট ব্যঞ্জনের উচ্চারণস্থান। ধ্বনি উচ্চারণের সময় যেসব প্রত্যঙ্গ সাক্ষাৎভাবে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ যে প্রত্যঙ্গগুলো উচ্চারণে প্রধান ভূমিকা নেয় সেগুলোর প্রত্যেকটিকে এক একটি উচ্চারক বলা হয়। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে সাধারণত দুটি উচ্চারক জড়িত থাকে-সক্রিয় উচ্চারক ও নিষ্ক্রিয় উচ্চারক। যেসব বাক্প্রত্যঙ্গ বেশি সচল সেগুলো সক্রিয় উচ্চারক। যেমন: জিভ, নিচের ঠোঁট, নিচের চোয়াল। অপেক্ষাকৃত অচল বা কম সচল বাক্প্রত্যঙ্গগুলো হলো নিষ্ক্রিয় উচ্চারক। যেমন : উপরের ঠোঁট, উপরের পাটির দাঁত, শক্ত তালু।
উচ্চারণস্থান অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো দন্ত, দন্ত-মূলীয়, মূর্ধন্য, তালব্য, কণ্ঠ্য, কণ্ঠনালীয় ধ্বনি হিসাবে ভাগ করা হয়।
ব্যঞ্জনধ্বনিমূল
বাংলায় কতগুলো ব্যঞ্জনধ্বনিমূল রয়েছে তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। তবে ‘বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম খণ্ড’ গ্রন্থে ৩৪টি ব্যঞ্জনধ্বনিমূলের বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ আছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে-
১. স্পৃষ্টব্যঞ্জন ১৬টি।    যেমন : প ব, ফ ভ, ত দ, থ ধ, ট ড, ঠ ঢ, ক গ, খ ঘ
২. ঘৃষ্টধ্বনি ৪টি।      যেমন : চ জ, ছ ঝ
৩. নাসিক্য ধ্বনি ৩টি। যেমন : ম ন ঙ
৪. কম্পনজাত ধ্বনি ১টি। যেমন : র
৫. তাড়নজাত ধ্বনি ২টি। যেমন : ড় ঢ়
৬. পার্শ্বিক ধ্বনি ১টি।   যেমন : ল
৭. উষ্মধ্বনি ৩টি।     যেমন : স শ হ
স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনির স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনবর্ণ বা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনির স্পর্শ ব্যঞ্জনবর্ণ
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে জিভ মুখের ভেতরে কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত্য ও দন্ত্যমূলের কোন না কোন স্থান স্পর্শ করে বলে তাদের স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি বা স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। এরা কণ্ঠ্যব্যঞ্জন, তালব্যব্যঞ্জন, মূর্ধন্যব্যঞ্জন, দন্ত্যব্যঞ্জন ও ওষ্ঠ্যব্যঞ্জন হয়। যেমন: প ব, ফ ভ, ত দ, থ ধ, ট ড, ঢ, ক গ, খ ঘ।
নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনির নাসিক্য ব্যঞ্জনবর্ণ
নাকি উচ্চারণজাতীয় ধ্বনিকে নাসিক্য ধ্বনি বলে। অথবা যেসব ধ্বনি উচ্চারণকালে মুখবিবরের বাতাস নাক দিয়ে বের হয় তাদের নাসিক্য বা আনুনাসিক ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। নাকিধ্বনির লিখিতরূপকে নাসিক্যবর্ণ বলে। যেমন: ঙ ন ম।

কম্পিত ব্যঞ্জনধ্বনি বা কম্পিত ব্যঞ্জনবর্ণ
র জিভের অগ্রভাগে আঘাত করে কম্পন সৃষ্টি করে বলে একে কম্পনজাত ব্যঞ্জনধ্বনি বা কম্পিত ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন : র।
তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি
যে দুটি ধ্বনি বা বর্ণ উচ্চারণকালে জিভ দন্ত্যমূল ও তালুতে আঘাত করে এবং কম্পন সৃষ্টি করে তাদের তাড়িত ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ড় ঢ়।
পার্শ্বিক ধ্বনি
যে ধ্বনি বা বর্ণ উচ্চারণকালে জিভের দুই পাশ দিয়ে বাতাস বের হয়ে যায় তাকে পার্শ্বিক ব্যঞ্জনধ্বনি বা পার্শ্বিক ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন: ল।
উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি/শিসধ্বনি বা বর্ণ
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে শিসধ্বনি সৃষ্টি হয় তাদের উষ্মধ্বনি বা শিসধ্বনি বলে। অথবা যেসব ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণে ধ্বনিগুলোর রেশ টেনে রাখা যায় তাদের উষ্মধ্বনি বা বর্ণ বলে। যেমন: শ স হ।
ঘোষ ধ্বনি ও ঘোষ বর্ণ
নিনাদজাতীয় ধ্বনিকে ঘোষধ্বনি বলে। অথবা নাদধ্বনিকে ঘোষধ্বনি বলে। প্রত্যেকটি বর্গের প্রথমটি বাদে অন্য চারটি ধ্বনি এবং হ উচ্চারণকালে আঘাতজনিত ঘোষ বা শব্দ সৃষ্টি হয় বলে এদের ঘোষ ধ্বনি বলে। এদের নাদধ্বনিও বলা হয়। যেমন : খ গ ঘ ঙ /ছ জ ঝ ঞ/ট ঠ ড ঢ ণ /থ দ ধ ন /ফ ব ভ ম /হ।
নিনাদজাতীয় ধ্বনির লিখিতরূপকে ঘোষবর্ণ বলে। যেমন: গ ঘ ঙ / জ ঝ /ড ঢ /দ ধ ন /ফ ব ভ ল /র ড় হ।
অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি ও অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ
যেসব ধ্বনি উচ্চারণকালে জোরে নিশ্বাসবায়ু ছাড়তে হয় না তাদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। অথবা প্রত্যেক বর্গের প্রথম তৃতীয় ও পঞ্চম ধ্বনির উচ্চারণকালে বাতাসে চাপের স্বল্পতা থাকে বলে এদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেসব ধ্বনির সঙ্গে শুধু ‘অ’ উচ্চারিত হয় তাদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। অল্পপ্রাণ ধ্বনির লিখিতরূপকে অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। অথবা যেসব বর্ণ উচ্চারণকালে জোরে নিশ্বাসবায়ু ছাড়তে হয় না তাদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন: ক গ /চ জ /ট ড /ত দ ন /প ব ম /র ল /শ স /ড়।
মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি ও মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ
যেসব ধ্বনি উচ্চারণকালে জোরে নিশ্বাসবায়ু ছাড়তে হয় তাদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। অথবা প্রত্যেক বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনির উচ্চারণকালে বাতাসে চাপের আধিক্য থাকে বলে এদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। অথবা যেসব বর্ণের সঙ্গে শুধু ‘অ+হ’ উচ্চারিত হয় তাদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। মহাপ্রাণ ধ্বনির লিখিতরূপকে মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেসব বর্ণ উচ্চারণকালে জোরে নিশ্বাসবায়ু ছাড়তে হয় তাদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন: খ ঘ /ছ ঝ /ঠ ঢ /থ ধ /ফ ভ /ঢ় হ।
ব্যঞ্জনচিহ্ন ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্তরূপ
ব্যঞ্জনবর্ণের লিখিত চিহ্ন হলো ব্যঞ্জনচিহ্ন। অথবা শব্দের উপরের নিচে ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্তরূপে বসে অর্থপূর্ণ শব্দ গঠন করলে ব্যঞ্জনচিহ্ন বা ফলা বলে। যেমন : র-ফলা, র-রেফ, য-ফলা। যেসব বর্ণ অন্য বর্ণের নিচে বা পরে বসে তাদের ফলা বলে। যুক্ত বর্ণের শেষে ব্যঞ্জন হিসেবে ব, ম, র, য থাকলে তাদের ফলা বলে। শুধু ‘র’ ও ‘য’-এর সংক্ষিপ্তরূপ বা চিহ্ন রয়েছে। যেমন: র-ফলা, য-ফলা। ন-ফলা, ব-ফলা, ম-ফলা, জ-ফলা, ল-ফলা, র-ফলা, য-ফলা। র-এর সংক্ষিপ্তরূপ বা চিহ্নকে র-ফলা বলে। য-এর সংক্ষিপ্তরূপ বা চিহ্নকে য-ফলা বলে। এটি বর্ণের পরে বসে। এটি কখনো এ্যা-কার আবার কখনো বর্ণ দ্বিত্ব উচ্চারিত হয়। যেসব বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের উপরে বসে তাদের রেফবর্ণ বলে। র বর্ণের সংক্ষিপ্ত চিহ্নকে রেফ বলে যা পরের বর্ণের মাথায় বা উপরে বসে।
যুক্তব্যঞ্জন
ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জনের যুক্ত অবস্থাকে যুক্তব্যঞ্জন বলে। উচ্চারণের অবস্থা অনুসারে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: যুগ্মব্যঞ্জন ও যুক্তব্যঞ্জন।
যুগ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি ও যুগ্ম ব্যঞ্জনবর্ণ
একই ধ্বনি বা বর্ণের দুবার যুক্ত অবস্থাকে যুগ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি বা ব্যঞ্জনবর্ণ বলে। যেমন: ধাক্কা, ছোট্ট, পক্ব, সক্কাল, কিচ্ছু, এক্কেবারে ইত্যাদি। এরা সমব্যঞ্জন ‘ক্ক, গ্গ/গ্য, চ্চ, জ্জ, ট্ট, ড্ড, ত্ত, দ্দ, ন্ন, প্প, ব্ব, ম্ম, রর, ল্ল, শ্শ/শ্য/শ্ব/স্ম/ঃস/ষ্ম/ষ্য, হ্হ, ড়্ড়’ হতে পারে। আবার অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ‘ক্খ /খ্যা/ ক্ষ/ঃখ, গ্ঘ, চ্ছ, জ্ঝ, ট্ঠ, ড্ঢ, ত্থ, দ্ধ, প্ফ, বভ’ হতে পারে।
যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনি ও যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ
দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনবর্ণ একত্রে অর্থবোধক ধ্বনি সৃষ্টি করলে যুক্তব্যঞ্জনবর্ণ হয়। অথবা অ’র হসোচ্চারণ নিতেই ব্যঞ্জন ও ব্যঞ্জনের অর্থপূর্ণ যুক্ত অবস্থানকে যুক্তবর্ণ বা ফলাবর্ণ বলে। উচ্চারণ বিভ্রাট থেকে মুক্তি পেতে বর্ণকে যুক্ত করা হয়। যেমন : ‘শানত’ লেখলে উচ্চারণ করতে হতো ‘শানোতো’ কিন্তু ‘শান্ত’ লেখলে এমন ভুল হয় না বরং অ’র হসোচ্চারণ হয় অর্থাৎ মুক্ত উচ্চারণ থেকে মুক্তি হলো।
যুক্তবর্ণ দিয়ে প্রমিত বানান লিখতে হলে শব্দের উৎপত্তির গঠন খেয়াল রাখতে হয়। যদি শব্দটি বিদেশি হয় তাহলে তার বানান হবে ভিন্ন। যেমন: সব বিদেশি শব্দে ঈ-কার না হয়ে ই-কার হয়। ঊ-কার না হয়ে উ-কার হয়। ণ/ঞ/ঞ্জ/ ঞ্চ/ঙ্গ/ ণ্ড/ণ্ঠ/ণ্ট/ষ/ষ্ট/ষ্ঠ ইত্যাদি বর্ণ বা যুক্তবর্ণ দিয়ে বিদেশি শব্দের বানান লেখা হয়। যেমন: হর্ন/হর্ণ, সেঞ্চুরী/সেনচুরি, ইঞ্জিনিয়ার/ইনজিনিয়ার, লুঙ্গি/লুংগি, ডেঙ্গু/ডেংগু, ব্যাঙ্ক/ব্যাংক, ঝাণ্ডা/ঝান্ডা, লণ্ঠন/লন্ঠন, এণ্ড/এন্ড, ষ্টোর/স্টোর ইত্যাদি। যে ‘ব’ কোন বর্ণের নিচে বসে উচ্চারিত হয় সেটি ‘ব’ আর যেটি উচ্চরিত হয় না সেটি ‘ব-ফলা’ লিখতে হবে। যেমন: আব্বা/বাল্ব/লম্বা: ব+ব, পক্ব/বিশ্ব: ক্/শ্+ব-ফলা। হসোচ্চারণ করতেই হসচিহ্নের দরকার হয় তাই শেষ বর্ণের আগের (এক/দুই) বর্ণের নিচে হসচিহ্ন বসে। যেমন: ষ্+ট/ষ্ট। কিন্তু র-ফলা/ঋ-কার বা রেফ দিয়ে বর্ণযুক্ত হলে হসচিহ্ন বসে না। আবার হসচিহ্ন ছাড়া কমপিউটারে যুক্তবর্ণ লেখার পদ্ধতি নাই।
তিনটি উপায়ে যুক্তধ্বনি বা বর্ণ গঠিত হতে পারে। যেমন:
১. কার সহযোগে
স্বরচিহ্নের সাধারণ নামকে ‘কার’ বলে।
ক্রমিক
কার
শব্দ
অবস্থান
শব্দ

আ-া
মা (ম-এ আকার)
বর্ণের পরে বসে
মা, মামা

অ্যা
ম্যা (ম-অ্যা কার)
বর্ণের পরে বসে
ম্যাও, ম্যান

ই-ি
মি (ম-এ হ্রস্ব ই)
বর্ণের আগে বসে
মিনি, মিমি

ঈ-ী
মী (ম-এ দীর্ঘ ই)
বর্ণের পরে বসে
মীনা

উ-ু
মু (ম-এ ্হ্রস্ব উ)
বর্ণের নিচে বসে
মুন

ঊ-ূ
মূ (ম-এ দীর্ঘ উ)
বর্ণের নিচে বসে
মূর্খ

এ-ে
মে (ম-এ)
বর্ণের আগে বসে
মেমো

ঐ-ৈ
মৈ (ম-এ ওই)
বর্ণের আগে বসে
মৈ

ও-াে
মো (ম-এ ও)
বর্ণের দুইপাশে বসে
মো
১০
ঔ-ে ৗ
মৌ (ম-এ ওউ)
বর্ণের দুইপাশে বসে
মৌমাছি
১১
ঋ-কার
মৃ (ম ঋ-কার)
বর্ণের নিচে বসে
মৃৎ, মৃত্যু
২. ফলা সহযোগে
শব্দের উপরে ও নিচে ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্তরূপে বসে অর্থপূর্ণ শব্দ গঠন করলে তাকে ব্যঞ্জনচিহ্ন বলে। র, য-এর সংক্ষিপ্তরূপকে ফলা বলে আবার র-এর সংক্ষিপ্তরূপকে রেফ বলে। ১, ২, ৩-তিনটির চিহ্ন আছে। অন্যগুলো দ্বিত্ব ব্যঞ্জনবর্ণ।
ক্রমিক
ফলা
অবস্থান
শব্দ

ন/ণ-ফলা
বর্ণের নিচে বসে
চিহ্ন, রত্ন, কৃষ্ণ

ব-ফলা
বর্ণের নিচে বসে
বিশ্ব, বিশ্বাস, নিঃস্ব

ম-ফলা
বর্ণের নিচে বসে
পদ্ম, আত্মা, তন্ময়

য-ফলা
বর্ণের পরে বসে
পদ্য, গদ্য, ঐক্য, সহ্য

র-ফলা
র-রেফ
বর্ণের নিচে বসে
বর্ণের উপরে বসে
খ্রিস্টান, ক্রয়, ট্রয়
করম/কর্ম, ধরম/ধর্ম

ল-ফলা
বর্ণের নিচে বসে
উল্লাস, ক্লান্ত, ম্লান
৩. দ্বিত্বব্যঞ্জন সহযোগে
দ্বিত্বব্যঞ্জন ধ্বনি দুরকম হতে পারে। যেমন:
অস্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা বর্ণ
যেসব যুক্তধ্বনি বা বর্ণের মধ্যকার প্রতিটি বর্ণের রূপ অস্পষ্ট তাদের অস্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা যুক্তবর্ণ বলে। অথবা যেসব যুক্তধ্বনি বা যুক্তবর্ণ বিশ্লেষণ না করলে বুঝা যায় না যে তারা কোন বর্ণ তারাই অস্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা বর্ণ। যেমন:
দ্বিব্যঞ্জন : ক্ষ: ক্+ষ, হ্ম: হ্+ম, ত্ত: ত্+ত, ত্থ: ত্+থ।
ত্রিব্যঞ্জন : ঙ্ক্ষ: ঙ্+ক্+ষ, ক্ষ্ণ: ক্+ষ্+ণ, ক্ষ্ম: ক্+ষ্+ম, ত্ত্ব: ত্+ত্+ব-ফলা।
স্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা বর্ণ
যেসব যুক্তধ্বনি বা বর্ণের মধ্যকার প্রতিটি বর্ণের রূপ স্পষ্ট তাদের স্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা যুক্তবর্ণ বলে। অথবা যেসব যুক্তধ্বনি বা বর্ণ বিশ্লেষণ না করলে বুঝা যায় যে তারা কোন বর্ণ তারাই স্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা বর্ণ: যেমন:
দ্বিব্যঞ্জন : ক্ক: ক্+ক, ক্ত: ক্+ত, ক্র: ক+র-ফলা, কৃ: ক+ঋ-কার।
ত্রিব্যঞ্জন : ত্র্য: ত্+র-ফলা+য-ফলা, চ্ছ্ব: চ্+ছ্+ব-ফলা, ন্দ্ব: ন্+দ+ব-ফলা, ম্প্র: ম্+প+র-ফলা।
চৌব্যঞ্জন: ন্ত্র্য: ন্+ত+র-ফলা +য-ফলা।

অস্বচ্ছ যুক্তবর্ণের বিশ্লেষণ  
ক্রমিক      যুক্তধ্বনি বা বর্ণ    যে যে ধ্বনি বা বর্ণ দিয়ে তৈরি    শব্দ
১.        ক্ষ             ক্+ষ                     অক্ষর
২.        ঙ্ক্ষ             ঙ্+ক্+ষ                   আকাঙ্ক্ষা
৩.        ক্ষ্ণ             ক্+ষ্+ণ                   সূক্ষ্ণ
৪.        ক্ষ্ম             ক্+ষ্+ম                   লক্ষ্মী
৫.        হ্ম             হ্+ম                     ব্রাহ্মণ
৬.        ত্ত              ত্+ত                     উত্তর
৭.        ত্ত্ব              ত্+ত্+ব-ফলা                    তত্ত্ব
৮.        ত্থ             ত্+থ                     উত্থান
৯.        হ্ন             হ্+ন                     চিহ্ন
১০.       হ্ণ              হ্+ণ                     অপরাহ্ণ
১১.       ট্ট              ট্+ট                     ভুট্টা
১২.        জ্ঞ             জ্+ঞ                     জ্ঞান
১৩.       ঞ্জ             ঞ্+জ                     অঞ্জন
১৪.        ঞ্চ             ঞ্+চ                     সঞ্চয়
১৫.      ষ্ণ             ষ্+ণ                     কৃষ্ণ
১৬.       ত্র              ত+র-ফলা                  ত্রাণ
১৭.        ভ্র              ভ+র-ফলা                  ভ্রমণ

অস্বচ্ছ যুক্তধ্বনি বা বর্ণ বা ফলাবর্ণের বিশ্লেষণ

ক্রমিক      যুক্তধ্বনি বা বর্ণ    যে যে স্বর বা বর্ণ দিয়ে তৈরি          শব্দ 
১.        ক্ক             ক্+ক                         ধাক্কা
২.        ক্ত             ক্+ত                     শক্ত
৩         ক্ট             ক্+ট                     অক্টোবর
৪.        ক্ব             ক্+ব-ফলা                  পক্ব
৫.        ক্স             ক্+স                     অক্সিজেন
৬.        ক্ল             ক্+ল                     ক্লান্ত
৭.        ক্র             ক+র-ফলা                  ক্রয়
৮.        কৃ             ক+ঋ-কার                  কৃষক
৯.        গ্ন              গ্+ন                     ভগ্ন
১০.      গ্ণ             গ্+ণ                     রুগ্ণ
১১.      গ্ধ             গ্+ধ                     মুগ্ধ
১২.        গ্ল              গ্+ল                     গ্লানি
১৩.       ঘ্ন              ঘ্+ন                     বিঘ্ন
১৪.       ঙ্ক             ঙ্+ক                      অঙ্ক
১৫.       ঙ্খ             ঙ্+খ                      শঙ্খ
১৬.       ঙ্গ             ঙ্+গ                      অঙ্গ
১৭.       ঙ্ঘ             ঙ্+ঘ                      লঙ্ঘ
১৮.       চ্চ             চ্+ছ                      চচ্চড়ি
১৯.       র্চ              র/রেফ+চ                   চর্চা
২০.       চ্ছ             চ্+ছ                      উচ্ছল
২১.       চ্ছ্ব             চ্+ছ্+ব                    উচ্ছ্বাস
২২.       জ্জ             জ্+জ                     লজ্জা
২৩.       জ্ব             জ্+ব-ফলা                  জ্বালা
২৪.       জ্ঝ             জ্+ঝ                     কুজ্ঝুটিকা  
২৫.       ঞ্ছ              ঞ্+ছ                      বাঞ্ছনা
২৬.       ঞ্ঝ             ঞ্+ঝ                     ঝঞ্ঝা
২৭.       ড্ড             ড্+ড                     আড্ডা
২৮.       ণ্ট             ণ্+ট                      কণ্ঠ
২৯.       ণ্ন              ণ্+ন                      ক্ষুণ্ন
৩০.       ণ্ঠ             ণ্+ঠ                      কণ্ঠ
৩১.       ণ্ড             ণ্+ড                      আণ্ডা
৩২.       ত্ন              ত্+ন                      যত্ন
৩৩.       ত্ব              ত্+ব                      ত্বরা
৩৪.       ত্ম             ত্+ম                      আত্মা
৩৫.       থ্ব              থ্+ব                      পৃথ্বী
৩৬.       দ্দ             দ্+দ                      উদ্দেশ্য
৩৭.       দ্ধ             দ্+ধ                      শুদ্ধ
৩৮.       দ্ব              দ্+ব                      দ্বিতীয়
৩৯.       দ্ভ             দ্+ভ                      উদ্ভিদ
৪০.       দ্ম             দ্+ম                      পদ্ম
৪১.       র্দ              র্+দ+র-রেফ                 ফর্দ
৪২.       ন্ন              ন্+ন                      ঘেন্না
৪৩.       ন্ত              ন্+ত                      শান্ত
৪৪.       ন্ত্র্য             ন্+ত+র-ফলা+য-ফলা           সতন্ত্র্য
৪৫.       ন্থ             ন্+থ                      গ্রন্থ
৪৬.       ন্দ             ন্+দ                      ছন্দ
৪৭.       ন্দ্ব             ন্+দ্+ব-ফলা                 দ্বন্দ্ব
৪৮.       ন্ড             ন্+ড                      এন্ড
৪৯.       ন্ঠ             ন্+ঠ                      কণ্ঠ
৫০.       ন্ধ             ন্+ধ                      বন্ধন
৫১.       ন্ব              ন্+ব-ফলা                  তন্বী
৫২.       ন্ম             ন্+ম                      জন্ম
৫৩.       ন্স             ন্+স                      চান্স
৫৪.       প্প              প্+প                      পাপ্পু
৫৫.       প্ট             প্+ট                      চেপ্টা
৫৬.       প্ন              প্+ন                      স্বপ্ন
৫৭.       প্ল              প্+ল                      প্লাস
৫৮.       প্স             প্+স                      অপ্সরী
৫৯.       ফ্ল             ফ্+ল                      ফ্লাওয়ার
৬০.       ব্জ             ব্+জ                      জব্দ
৬১.       ব্দ             ব্+দ                      শব্দ
৬২.       ব্ব             ব্+ব    &nbsp

Monday, 18 April 2016

ধ্বনি

ধ্বনি 
কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশেলষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি।
প্রকারভেদ
ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
 ১. স্বরধ্বনি
ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ইত্যাদি। এগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না।
 ২. ব্যঞ্জনধ্বনি
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন- ক্, খ্, গ্, ঘ্, ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা কণ্ঠ্যে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি।

ধ্বনি পরিবর্তন
ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। কোন ভাষার পরিবর্তন নিয়ম বা ব্যাকরণ দিয়ে বন্ধ করে দিলে সে ভাষা আস্তে আস্তে মরে যায়। যেমন মরে গেছে সংস্কৃত ভাষা। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারণের সুবিধার্থে ভাষার শব্দ, মূলত শব্দের অন্তর্গত ধ্বনি নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিবর্তনও কিছু নিয়ম মেনে হয়ে থাকে। ধ্বনির এই পরিবর্তনই মূলত ভাষার পরিবর্তন ঘটায়। ধ্বনির পরিবর্তনের নিয়ম বা প্রক্রিয়াগুলো নিচে দেয়া হলো-
[শব্দ ভাঙার কৌশল : ধ্বনি পরিবর্তন পড়ার আগে একটি কৌশল শিখে নেয়া জরুরি। শব্দের অন্তর্গত ধ্বনিগুলো আলাদা করার বা ভাঙার কৌশল। শব্দ ভাঙার সময় যেই ধ্বনি আগে উচ্চারিত হয়েছে, সেটিকে আগে লিখতে হবে। শব্দে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি পূর্ণাঙ্গ রূপে থাকার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত রূপে কার ও ফলা আকারেও থাকে। শব্দ ভাঙার সময় এগুলোকেও বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া একটি স্বরধ্বনির কোন সংক্ষিপ্ত রূপ বা ‘কার’ নেই- ‘অ’-এর। এটি বিভিন্ন ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে মিলিত রূপে উচ্চারিত হয়, কিন্তু তার কোন প্রতীক বা ‘কার’ আমরা লেখি না। শব্দ ভাঙার সময় এই উহ্য ‘অ’-কেও লিখতে হবে। যেমন- ‘এখানে বসতি গাড়ে এক দঙ্গল পশু’ বাক্যটির সবগুলো শব্দ ভাঙলে হবে-
এখানে = এ+খ+আ+ন+এ
বসতি = ব+অ+স+অ+ত+ই
গাড়ে = গ+আ+ড়+এ
এক = এ+ক
দঙ্গল = দ+ঙ+গ+অ+ল
পশু = প+শ+উ
উল্লেখ্য, যুক্তব্যঞ্জনের ভেতরে কোন উহ্য ‘অ’ থাকে না।]
১. আদি স্বরাগম 
শব্দের আদিতে বা শুরচতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলা হয় আদি স্বরাগম। যেমন, ‘স্কুল’ শব্দটি উচ্চারণের সুবিধার জন্য শুরচতে ‘ই’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে ‘ইস্কুল’ হয়ে গেছে। এটি আদি স্বরাগম। এরকম- স্টেশন˃ ইস্টিশন, স্ট্যাবল˃ আস্তাবল, স্পর্ধা˃ আস্পর্ধা
২. মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি 
শব্দের মাঝখানে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে মধ্য স্বরাগম। যেমন, ‘রত্ন’ (র+অ+ত+ন+অ) শব্দের ‘ত’ ও ‘ন’-র মাঝখানে একটি অ যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘রতন’। এটি মধ্য স্বরাগম। এরকম- ধর্ম˃ ধরম, স্বপ্ন˃ স্বপন, হর্ষ˃ হরষ, প্রীতি˃ পিরীতি, ক্লিপ˃ কিলিপ, ফিল্ম˃ ফিলিম, মুক্তা˃ মুকুতা, তুর্ক˃ তুরুক, ভ্রু˃ ভুরু, গ্রাম˃ গেরাম, প্রেক˃ পেরেক, স্রেফ˃ সেরেফ, শ্লোক˃ শোলোক, মুরগ˃ মুরোগ˃ মোরোগ,
৩. অন্ত্যস্বরাগম 
শব্দের শেষে একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে অন্ত্যস্বরাগম। যেমন, ‘দিশ্’-র সঙ্গে অতিরিক্ত ‘আ’ স্বরধ্বনি যুক্ত হয়ে হয়েছে ‘দিশা’। এরকম- পোক্ত্˃ পোক্ত, বেঞ্চ˃ বেঞ্চি, সত্য˃ সত্যি
৪. অপিনিহিতি 
পরের ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির আগে ‘ই’ বা ‘উ’ স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন, ‘আজি (আ+জ+ই) শব্দের ‘ই’ আগে উচ্চারিত হয়ে হয়েছে ‘আইজ’ (আ+ই+জ)। এরকম- সাধু˃ সাউধ, রাখিয়া˃ রাইখ্যা, বাক্য˃ বাইক্য, সত্য˃ সইত্য, চারি˃ চাইর, মারি˃ মাইর
৫. অসমীকরণ 
দুটো একই ধ্বনির পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে একটি অতিরিক্ত স্বরধ্বনি যুক্ত হলে তাকে বলে অসমীকরণ। যেমন, ধপ+ধপ˃ (মাঝখানে একটি অতিরিক্ত আ যোগ হয়ে) ধপাধপ। এরকম- টপ+টপ˃ টপাটপ
৬. স্বরসঙ্গতি 
দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে সঙ্গতি রক্ষার্থে একটির প্রভাবে আরেকটি পরিবর্তিত হলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, ‘দেশি’ (দ+এ+শ+ই)˃ (‘ই’-র প্রভাবে ‘এ’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ই’ হয়ে) ‘দিশি’। স্বরসঙ্গতি ৫ প্রকার-
ক. প্রগত :আগের স্বরধ্বনি অনুযায়ী পরের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মুলা˃ মুলো, শিকা˃ শিকে, তুলা˃ তুলো
খ.পরাগত : পরের স্বরধ্বনি অনুযায়ী আগের স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে পরাগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, আখো˃ আখুয়া˃ এখো, দেশি˃ দিশি
গ. মধ্যগত : অন্যান্য স্বরধ্বনির প্রভাবে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হলে, তাকে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, বিলাতি˃ বিলিতি
ঘ. অন্যোন্য : আগের ও পরের স্বরধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে যদি দুইটি-ই পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাকে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন, মোজা˃ মুজো
ঙ. চলিত বাংলায় স্বরসঙ্গতি : গিলা˃ গেলা, মিলামিশা˃ মেলামেশা। মিঠা˃ মিঠে, ইচ্ছা˃ ইচ্ছে। মুড়া˃ মুড়ো, চুলা˃ চুলো। উড়ুনি˃ উড়নি, এখুনি˃ এখনি।
৭. সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ 
শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ বলে। যেমন, ‘বসতি’ (ব+অ+স+অ+ত+ই)-র মাঝের ‘অ’ স্বরধ্বনি লোপ পেয়ে হয়েছে ‘বস্তি’ (ব+অ+স+ত+ই)। স্বরলোপ ৩ প্রকার-
ক. আদিস্বরলোপ : শব্দের শুরুর স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন, অলাবু˃ লাবু˃ লাউ, এড়ন্ড˃ (‘এ’ লোপ পেয়ে) রেড়ী, উদ্ধার˃ উধার˃ ধার।
খ. মধ্যস্বরলোপ : শব্দের মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্যস্বরাগম বলে। যেমন, অগুরু˃ অগ্রু, সুবর্ণ˃ স্বর্ণ
গ. অন্ত্যস্বরালোপ : শব্দের শেষের স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যস্বরাগম বলে। যেমন, আশা˃ আশ, আজি˃ আজ, চারি˃ চার, সন্ধ্যা˃ সঞ্ঝ্যা˃ সাঁঝ
(স্বরলোপ স্বরাগম-এর বিপরীত প্রক্রিয়া।)
৮. ধ্বনি বিপর্যয় 
শব্দের মধ্যবর্তী দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি অদলবদল হলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন, বাক্স˃ বাস্ক, রিক্সা˃ রিস্কা, পিশাচ˃ পিচাশ, লাফ˃ ফাল
৯. সমীভবন 
(স্বরসঙ্গতির মতো, কিন্তু ব্যঞ্জন ধ্বনির পরিবর্তন হয়) দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সমতা লাভ করলে তাকে সমীভবন বলে। যেমন, ‘জন্ম’ (জ+অ+ন+ম+অ)-এর ‘ন’, ‘ম’-র প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘জম্ম’।  সমীভবন মূলত ৩ প্রকার-
ক. প্রগত সমীভবন : আগের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, চক্র˃ চক্ক, পক্ব˃ পক্ক, পদ্ম˃ পদ্দ, লগ্ন˃ লগ্গ
খ. পরাগত সমীভবন : পরের ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে আগের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন। যেমন, তৎ+জন্য˃ তজ্জন্য, তৎ+হিত˃ তদ্ধিত, উৎ+মুখ˃ উন্মুখ
গ. অন্যোন্য সমীভবন : পাশাপাশি দুটো ব্যঞ্জনধ্বনি দুইয়ের প্রভাবে দু’টিই পরিবর্তিত হলে তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন, সত্য (সংস্কৃত)˃ সচ্চ (প্রাকৃত), বিদ্যা (সংস্কৃত)˃ বিজ্জা (প্রাকৃত)
১০. বিষমীভবন 
পাশাপাশি একই ব্যঞ্জনধ্বনি দু’বার থাকলে তাদের একটি পরিবর্তিত হলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমন, শরীর˃ শরীল, লাল˃ নাল
১১. দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা 
শব্দের কোন ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে, অর্থাৎ দুইবার উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা বলে। মূলত জোর দেয়ার জন্য দ্বিত্ব ব্যঞ্জন হয়। যেমন, পাকা˃ পাক্কা, সকাল˃ সক্কাল
১২. ব্যঞ্জন বিকৃতি 
কোন ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন ব্যঞ্জনধ্বনি হলে তাকে ব্যঞ্জন বিকৃতি বলে। যেমন, কবাট˃ কপাট, ধোবা˃ ধোপা, ধাইমা˃ দাইমা
১৩. ব্যঞ্জনচ্যুতি 
পাশাপাশি দুটি একই উচ্চারণের ব্যঞ্জন থাকলে তার একটি লোপ পেলে তাকে বলে ব্যঞ্জনচ্যুতি। যেমন, বউদিদি˃ বউদি, বড় দাদা˃ বড়দা,
১৪. অন্তর্হতি 
কোন ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে বলে অন্তর্হতি। যেমন, ফাল্গুন˃ ফাগুন (‘ল’ লোপ), ফলাহার˃ ফলার, আলাহিদা˃ আলাদা
১৫. অভিশ্রুতি 
যদি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন স্বরধ্বনি পরিবর্তিত হয়, এবং পরিবর্তিত স্বরধ্বনি তার আগের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলে যায়, এবং সেই মিলিত স্বরধ্বনির প্রভাবে তার পরের স্বরধ্বনিও পরিবর্তিত হয়, তবে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন, ‘করিয়া’ (ক+অ+র+ই+য়+আ) থেকে অপিনিহিতির মাধ্যমে (র+ই-এর আগে আরেকটা অতিরিক্ত ‘ই’ যোগ হয়ে) ‘কইরিয়া’ হলো। অর্থাৎ অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ‘ই’ স্বরধ্বনিটির পরিবর্তন হলো। আবার ‘কইরিয়া’-এর র+ই-এর ‘ই’ তার আগের ‘ই’-র সঙ্গে মিলে গেলে হলো ‘কইরয়া’ বা ‘কইরা’। এবার ‘কইরা’-র ‘ই’ ও ‘আ’ পরিবর্তিত হয়ে হলো ‘করে’। এটিই অভিশ্রুতি। এরকম, শুনিয়া˃ শুইনিয়া˃ শুইনা˃ শুনে, বলিয়া˃ বইলিয়া˃ বইলা˃ বলে, হাটুয়া˃ হাউটুয়া˃ হাউটা˃ হেটো, মাছুয়া˃ মাউছুয়া˃ মাউছা˃ মেছো
১৬. র-কার লোপ 
(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) শব্দের ‘র’ ধ্বনি বা ‘র-কার’ লোপ পেয়ে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হলে তাকে র-কার লোপ বলে। যেমন, তর্ক˃ তক্ক, করতে˃ কত্তে, মারল˃ মালল, করলাম˃ কল্লাম
১৭. হ-কার লোপ 
(আধুনিক চলিত বাংলায় প্রচলিত) অনেক সময় দুইটি স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী ‘হ’ ধ্বনি বা ‘হ-কার’ লোপ পায়। একে হ-কার লোপ বলে। যেমন, ‘গাহিল’ (গ+আ+হ+ই+ল+অ)-এর ‘আ’ ও ‘ই’ স্বরধ্বনি দুটির মধ্যবর্তী ‘হ’ লোপ পেয়ে হয়েছে ‘গাইল’। এরকম, পুরোহিত˃ পুরুত, চাহে˃ চায়, সাধু˃ সাহু˃ সাউ, আল্লাহ˃ আল্লা, শাহ˃ শা
১৮. অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি 
পাশাপাশি দুটো স্বরধ্বনি উচ্চারিত হলে, এবং সেই দুটি স্বরধ্বনি মিলে কোন যৌগিক স্বর তৈরি না করলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য মাঝে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ বা অন্তঃস্ত ‘ব’ উচ্চারিত হয়। একে অ-শ্রুতি ও ব-শ্রুতি বলে। যেমন, ‘যা+আ’, এখানে পরপর দুটি ‘আ’ স্বরধ্বনি আছে। দুটি যুক্ত হয়ে কোন যৌগিক স্বর তৈরি করছে না। তাই এখানে মাঝখানে একটি অন্তঃস্থ ‘য়’ উচ্চারিত হয়ে হবে ‘যাওয়া’। এরকম, নাওয়া, খাওয়া, দেওয়া,